19073

05/18/2025

দুর্দশা কাটাতে পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2022-08-23 23:27:57

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে মূলধন জোগান, নাম পরিবর্তনসহ নানা উদ্যোগের পরও এখনো আর্থিক দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে পারেনি পদ্মা ব্যাংক। খেলাপি ঋণ আদায়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যও আসেনি। এখনো করপোরেট আমানত ফেরত দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি ব্যাংকটি। এ অবস্থায় ব্যাংকটির দুর্দশা কাটাতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক হয়েছে।

বৈঠকে আর্থিক সূচকগুলোর উন্নতির বিষয়ে ব্যাংকটির পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও পদ্মা ব্যাংকের দুর্দশা কাটাতে বেশকিছু শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে।

অনিয়ম-দুর্নীতি আর বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।

এই ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি উন্নতি করতে প্রতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত এমওইউর মতো এবার বেসরকারি ও বিদেশী খাতের দুর্বল ব্যাংকগুলোর সঙ্গেও চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রাথমিকভাবে ১০টি ব্যাংকের সঙ্গে এ চুক্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও বিদেশী খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল এ তালিকায় পদ্মা ব্যাংকের নামও যুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, খেলাপি ঋণের হার, মূলধন পর্যাপ্ততা, ঋণ-আমানত অনুপাত ও সঞ্চিতির ঘাটতি—এ চার সূচক বিবেচনায় নিয়ে দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রাথমিকভাবে ১০টি ব্যাংক চিহ্নিত করে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামীতে এ তালিকা আরো বড় হতে পারে। যেসব ব্যাংকের সঙ্গে এরই মধ্যে বৈঠক হয়েছে, সেগুলোকে সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালকরা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজে হস্তক্ষেপ করলে সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংকের পরিস্থিতি উন্নতি না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর শাস্তির মুখে পড়ার বিষয়টিও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ফারমার্স ব্যাংক থেকে নাম পরিবর্তন করে পদ্মা হওয়া ব্যাংকটির যাত্রা ২০১২ সালে। ধারাবাহিকভাবে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালে ফারমার্স ব্যাংকে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুনর্গঠন করা হয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ, অপসারণ করা হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। এরপর ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক রাখা হয়। তবে বড় পরিবর্তনের প্রায় পাঁচ বছরেও ব্যাংকটির উন্নতি দৃশ্যমান হয়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে পদ্মা ব্যাংকের ৬৮ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে জোগান দিতে হয়েছে ৭১৫ কোটি টাকার পুঁজি। ২০১৮ সালে দেয়া এসব পুঁজির বিপরীতে এখনো কোনো মুনাফা পায়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, পদ্মা ব্যাংকের ৫ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি ছিল ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মোট ঋণের ৬৭ শতাংশই খেলাপি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ ছাড়ের কারণে আপাতত প্রভিশন ঘাটতি দেখাতে হচ্ছে না ব্যাংকটিকে। আর গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ছিল ১০৫ কোটি টাকা।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81