26180

05/14/2025

টাকা ছাড়া রোগী ভর্তি মেলেনা মহাখালি ক্যান্সার হাসপাতালে

সুরাইয়া মাহমুদা মিষ্টি | Published: 2024-10-08 11:23:19

মো. উজ্জল মিয়া, বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানাধীন বেগনাবাদ ঝাউকান্দি গ্রাম। তিনি ফুসফুসে ক্যান্সার রোগি। তিন মাস ধরে ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ৩ মাস যাবৎ হাসপাতালের ফ্লোরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। যে কোন সময় তিনি মারা যেতে পারেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি না নেয়ায় ভেঙ্গে পড়েছেন।


উজ্জল জানান, টাকা থাকলে এতদিন সে ভর্তি হতে পারতেন। টাকা নেই বলে তাকে ভর্তি করা হচ্ছেনা। উজ্জলের হাত-পা ও শরীর ফুলে গেছে। মুখমন্ডলে পানি চলে আসছে। ফুসফুসে ক্যান্সার চিকিৎসা করানোর জন্য সে ৩ মাস ধরে হাসপাতালের বারান্দায় আনসার ও ওয়ার্ড মাস্টারকে টাকা দিয়ে ফ্লোরে পড়ে আছেন। এক আলাপ চারিতায় রোগীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, এখানে ভর্তি করা তো দুরের কথা হাসপাতালের বারান্দায় রাত্রি যাপন করতে হলে আনসারদেরকে টাকা দিতে হয়। নইলে লাঠিপেটা করে বের করে দেয়। আর টাকা দিলে রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। উজ্জলের মতো অনেক রোগী কান্নাকাটি করেও হাসপাতালের বারান্দায় একটু থাকার ঠাই পাচ্ছেনা। আনসার, ওর্য়াড মাস্টার ও ওর্য়াড বয়রা মিলে উজ্জল মিয়াকে বলে আপনি তিন হাজার টাকা দেন হাসপাতালে রাত্রী যাপন করতে পারবেন কিন্তু ভর্তি করা যাবেনা। টাকা দিলে আপনি এবং আপনার আত্মীয় স্বজন নিচ তলার এক কোনায় রাত্রী যাপন করতে পারবেন। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে হাসাপাতালের নিচ তলায় থাকার ঠাই মিলে তাদের। পরবর্তীতে ওর্য়াড মাস্টার তাকে বলেন, এখানে এখন পর্যাপ্ত রোগীর চাপ আছে। ভর্তি করার কোন সুযোগ নেই। তোমরা কেমোথেরাপী দিয়ে চলে যাও। রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, কেমোথোরাপী দেওয়ার পর হাতে-পায়ে পানি জমে ফুলে গেছে। ব্যাথায় বসতে পারিনা। এটা কেমন চিকিৎসা। চিকিৎসা নামের হয়রানী ও দালালী করে ক্যান্সার হাসপাতালের কর্মচারীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি না দেখার ভান করায় রোগিদের বেহাল দশা।


এদিকে রিয়াজ মাহমুদ নামে এক টিউমার ক্যান্সার রোগী কে হয়রানী করেছে চার আনছার সদস্য। তারা হলেন দুলাল, মাহবুব, রফিক ও আকরাম। রিয়াজ মাহমুদের বাড়ি বরগুনায়। রিয়াজ মাহমুদের টিউমার ক্যান্সার। যেকারণে তার এক পা কেটে ফেলা হয়েছে। কেমোথোরাপী দিতে প্রতি মাসে ২ বার গ্রাম থেকে ক্যন্সার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসতে হয়। যতবারই আসেন ততবারই আনসার ও ওর্য়াডবয় দের হয়রানীর স্বিকার হন। গত মাসে রিয়াজ থেরাপি দিতে আসলে ওয়ার্ড বয় মাসুদকে দুই হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হয়। রিয়াজ মাহমুদের সাথে আরেক রোগির নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ভর্তি করা হয়। দশ দিন আগে রিয়াজ মাহমুদ থেরাপি দিতে আসলে ৪ নাম্বার ওয়ার্ডে রেস্ট নিতে ছিল এ সময় ওই চার আনসার গিয়ে তাকে লাঠিপেঠা করে বের করে দেয়। আনসারের ধাক্কায় সে মাটিতে পড়ে ব্যাথা পায়। কিন্তু আনসারদের দয়া হয়না। পরবর্তীতে তার বিছানা পত্র নিয়ে হাসপাতালের ওভারব্রীজের যাত্রী ছাউনির নিচে রাত কাটান। রিয়াজ মাহমুদ নিজের জমি-জমা বিক্রি করে চিকিৎসা করতে আসছে। তাদের দু’বেলা খাওয়ার ব্যবস্থাও নেই। রিয়াজ এখন পর্যন্ত সে ভর্তি হতে পারেনি। তবে ওই ওয়ার্ড বয়কে আবার টাকা দিলে খুব সহজেই ভর্তি হতে পারবে। ক্যান্সার হাসপাতালে রোগিদের চরম ভোগান্তি। প্রতিজন রোগির সাথে প্রায় একই ভাবে দুর্বব্যবহার করা হচ্ছে। যা কারো নজরে আসছেনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব শুনতে রাজি নয়, দেখতেও চায়না। মনে হচ্ছে যেন মহাখালি ক্যান্সার হাসপাতাল কসাই খানা।


বিষয় গুলো জানতে হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. নিজামুল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে পারব না। আপনি সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবু নোমান মো. গোলাম রব্বানীর সাথে কথা বলেন। ডা. আবু নোমান মো. গোলাম রব্বানীর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন আপনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়ে অভিযোগ করেন। এখানে কোন অভিযোগের কোন জায়গা না। তিনি প্রতিবেদককে ভিজিটিং কার্ড দিতেও অনীহা দেখান।


প্রতিটি হাসপাতালের উধ্বর্তন ব্যাক্তিদের আচরণ নিয়ে সর্ব মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এজন্যই দেশীয় হাসপাতাল গুলোতে রোগিরা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতিটি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স সহ সংশ্লিষ্ঠরা সরকারি টাকা বেতন ভোগ করে অথচ রোগিদের সেবা দানে তাদের উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এটি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। যে কারণে রোগিরা জমি-জমা, গহণা বিক্রি করে বিদেশ চিকিৎসা করতে যান। আর যাদের টাকা নেই তারা চিকিৎসার অভাবে দুখে দুখে চিকিৎসা বিহীন মারা যান।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81