7017

05/12/2025

ব্যাংকিং চ্যানেলে দুর্নীতি: রাঘব বোয়ালদের ধরার এখনই সময়

সামি | Published: 2019-10-30 23:34:53

এফটি বাংলা

চলমান শুদ্ধি অভিযানে বিভিন্ন ক্লাব, অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনাকারী কয়েকজন দুর্নীতিবাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে সন্দেহভাজনদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মনে আশা জেগেছে, রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে সরকার। সেক্ষেত্রে প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে, দেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে যে খাতটির বিরুদ্ধে সেই ব্যাংকিং খাতের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে?

এ খাতের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালরা এখনও অধরাই থেকে গেছেন। অথচ গত ৮-১০ বছরে ঋণ জালিয়াতি, বিপুল অঙ্কের ঋণখেলাপি হওয়া, অর্থ আত্মসাৎ, ভুয়া এলসির মাধ্যমে অর্থ পাচার ইত্যাদি কারণে শুধু ব্যাংকিং খাতের ভিতই দুর্বল হয়নি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের সার্বিক অর্থনীতি।

অবৈধ আর্থিক প্রবাহ বা মুদ্রা পাচার নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণকারী ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। অঙ্কটি আমাদের মোট জাতীয় বাজেটের চেয়েও বড়।

আরও উদ্বেগজনক, প্রতি বছর অর্থ পাচারের হার কেবলই বাড়ছে। বিদেশে অর্থ পাচার একটি গুরুতর অপরাধ। এজন্য শাস্তির বিধান রেখে আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। তারপরও টাকা পাচার বন্ধ হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ অর্থ পাচারের মূল হোতাদের বিচার না হওয়া। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। এ অবস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান কতটা ফলপ্রসূ হবে সে প্রশ্ন রয়েই গেছে।

দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে নানা পন্থায়, নানা কৌশলে। তবে এর বড় অংশই পাচার হচ্ছে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে ভুয়া এলসি খুলে। এর নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে ব্যাংকের প্রভাবশালী কয়েকজন পরিচালক। জানা গেছে, তাদের মধ্যে একজনই নিয়ে গেছেন প্রায় এক লাখ কোটি টাকা।

বস্তুত প্রভাবশালী বাংক মালিক ছাড়া ভুয়া এলসি খুলে অর্থ পাচার করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং শুদ্ধি অভিযানকে ফলপ্রসূ করতে হলে ব্যাংকিং খাতে জরুরি ভিত্তিতে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য।

তিনি বলেছেন, ‘সরকার ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে; কিন্তু ব্যাংকসহ পুরো আর্থিক খাত বড় ক্যাসিনো হয়ে গেছে। এখানে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও জালিয়াতি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতা ও ঋণখেলাপিরা ব্যাংক চালাচ্ছে। এই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে না পারলে ব্যাংকিং খাত উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।’

আমরা মনে করি, দেশের আর্থিক খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে এবং এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে অবিলম্বে ব্যাংকিং খাতে নজর দেয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে গত ১০ বছরে ব্যাংকের বড় অঙ্কের এলসি এবং খেলাপি হয়ে তামাদি হয়ে যাওয়া ঋণগুলো সুনির্দিষ্ট ফর্মুলার ভিত্তিতে তদন্ত করলে এ খাতের রাঘববোয়ালদের মুখোশ খুলে যাবে বলে অনেকে মনে করেন।

বস্তুত দেশে অর্থ পাচারের দায়ে কারও বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণ নেই। এখন সময় এসেছে আর্থিক খাতের রাঘববোয়ালদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81