March 28, 2024, 9:18 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2021-10-25 02:01:43 BdST

কোটি টাকা ঘুষ নিলেন আইডিআরএ’র ড. মোশাররফ


আরও একটি বীমা কোম্পানি থেকে কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)র চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেন (এফসিএ)র বিরুদ্ধে। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি: এর হিসাব বিভাগের এক নথিতে এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘আইওইউ’ ফিলিপের মাধ্যমে ঘুষের এই অর্থ তাকে পরিশোধ করা হয় মর্মে নথিতে (নং-এফআইএলআইসি/প্রকা/অহি/৬৯/২০২১/তারিখ-২৮/০৯/২০২১) উল্লেখ রয়েছে।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড ভেঙ্গে দেয়ার পর অভ্যন্তরীণ তদন্ত এবং হিসাব-নিকাশে আইডিআরএ’র খাতে এই অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি ধরা পড়ে।

এর আগে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে ড.এম. মোশাররফের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে তিনি সহ সংস্থার ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধান চলাকালে ফের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠলো।

দ্বিতীয় অভিযোগ অনুসারে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান অধীনস্থ এই প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ নেন। ঘুষ গ্রহণের পর ফারইস্ট লাইফের বহু দুর্নীতি, অনিয়ম এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কর্তৃক শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা তিনি ধামাচাপা দেন। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলকৃত বিভিন্ন অভিযোগ থেকেও দায়মুক্তি দেন চেয়ারম্যান ড.এম. মোশাররফ হোসেন।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিলকৃত এক অভিযোগে তার ঘুষ গ্রহণের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। ঘুষ প্রদান এবং গ্রহণ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রমাণযুক্ত করে ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে ১ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন ড.এম. মোশাররফ হোসেন। ঘুষের এই টাকা তিনি ‘প্রাইম ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ থেকে গৃহিত ঋণ পরিশোধ এবং ‘ছাড়পত্র’ নেয়ার জন্য গ্রহণ করেন। আইডিআর’র চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ নেয়ার সময়ও তিনি ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তৎকালিন চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের কাছ থেকে ঘুষ নেন। এছাড়া ড. মোশাররফ হোসেন তার গুলশানের বাড়ির ৬ মাসের ভাড়ার টাকা ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের জন্য ২৫ লাখ টাকা ঘুষ নেন।

অভিযোগ মতে, চলতি বছরের ১৮ মার্চ ড. মোশাররফের ছেলের জন্ম নিবন্ধন সনদ তুলতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন। এর দু’মাস পর গত ৪ মে তিন দফায় ফারইস্ট থেকে ২ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। প্রথম দফায় নেন ১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় নেন ৫০ হাজার টাকা। তৃতীয় দফায় নেন ৫০ হাজার টাকা। চলতি বছর ১২ মে ঘুষ নেন ৫ লাখ টাকা। সর্বশেষ গত ২৪ জুন ড. মোশাররফ তার গুলশানের বাসা ডেকোরেশনের জন্য সাড়ে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নেন।

ঘুষের বিষয়ে জানতে ড. মোশাররফ হোসেনের অফিসিয়াল নম্বরে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেন নি।

আইডিআরএ সূত্র জানায়, ড. এম মোশাররফ হোসেন ২০১৮ সালের এপ্রিলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ২ বছর পর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। যদিও তার নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট চলমান।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চ ড. এম. মোশাররফ হোসেনের নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না-এই মর্মে রুল জারি করেন।

রিটে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১০ এর ৭(৩)(খ)ধারা অমান্য করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য ও চেয়ারম্যান হিসেবে এম মোশাররফ হোসেনের নিয়োগ এবং এ আইনের ১৪(১)(গ) ও ১৪(২) ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে অপসারণ না করার নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না-তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। রুলটি এখন চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

হাইকোর্ট সূত্র জানিয়েছে, চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে এম মোশাররফ হোসেন ২০১৭ সালের ৯ মে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে ‘লাভস অ্যান্ড লাইভ অর্গানিক লি.’ নামে একটি কোম্পানির নিবন্ধন নেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থানা পরিচালক তিনি নিজে। পরিচালক হচ্ছেন তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়া।

২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ‘গুলশান ভ্যালি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লি.’ নামে আরেকটি কোম্পানির নিবন্ধন নেন তিনি। সেটিতেও তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। স্ত্রী রয়েছেন পরিচালক হিসেবে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১০ এর ৭(৩)(খ) ধারায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষেও চেয়ারম্যান ও সদস্যের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার কথা বলা আছে। এম মোশাররফ হোসেন ২০১৮ সালে যখন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান তখন তিনি নিবন্ধিত দু’টি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যা আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী তিনি হতে পারেন না। সদস্য হওয়ার পর তিনি চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন। যে ব্যক্তির সদস্য পদই অবৈধ তিনি চেয়ারম্যান হতে পারেন না। এ প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারী আবু সালেহ মোহাম্মদ আমিন মেহেদী বাদী হয়ে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করেন।

এর আগে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে চলমান অনুসন্ধানে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানসহ ৪ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় চলতি বছর ২২-২৩ আগস্ট।

দুদক উপ-পরিচালক মো. নূরুল হুদা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি অন্য কর্মকর্তারা হলেন, আইডিআরএ’র পরিচালক মো. শাহ্ আলম, সদস্য মো. দলিল উদ্দিন এবং মইনুল ইসলাম। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে পরবর্তীতে অভিযোগটি প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু দুদক আইনে অভিযোগ প্রত্যাহারের সুযোগ না থাকায় এখনও অনুসন্ধান চলছে।

এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, দুদক আইনে অভিযোগ প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে বলে আমার জানা নেই।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা