April 18, 2024, 4:54 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2022-06-26 19:18:35 BdST

পদ্মা সেতু রাজনীতির সব হিসেব-নিকেশ পালটে দিল


অনেক রাজনৈতিক চাপ এবং অস্বস্তি একবারে উপড়ে দিলো পদ্মা সেতু। বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো। এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যে জনগণের আবেগ-উচ্ছ্বাস, তা এক লহমায় যেন সরকারের অনেকগুলো চাপকে সরিয়ে ফেললো।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে এক ধরনের অস্বস্তির মধ্যে ছিলো সরকার। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনগণের মধ্যে নানারকম অস্থিরতা, বাজার সামাল দেওয়ার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপ। বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যেন রীতিমত শাসন করতে চাচ্ছিলো। আবার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চলছিল নানা ষড়যন্ত্র। এর মধ্যেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হলো।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে বিরোধীদল বারবার বলছিলো যে, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগে সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের কথা বলছিলো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এ রকম পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে সরকার বড় ধরনের চাপে পড়তে পারে বলেও কোনো কোনো রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছিলো।

সুশীল সমাজ পশ্চিমাদের সাথে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নানারকম কথাবার্তা বলছিলো। সবকিছু মিলিয়ে ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমবারের মতো বড় ধরনের চাপ অনুভব করছিলো। এই সময়েই সরকার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময়টা যেন উৎসবমুখর না হয়, সেজন্য নানারকম ষড়যন্ত্র হয়েছিলো। অনেকেই মনে করেন যে, সীতাকুণ্ডের ঘটনা কিংবা পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে নাশকতার চেষ্টা এই উৎসবকে ম্লান করারই একটি ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট রুটের ট্রেনে আকস্মিক আগুনের ঘটনাটি কোনোভাবেই সাধারণ ঘটনায় বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

এর মধ্যেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আগে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা আরেকটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করায় সরকারকে। এই বন্যার মধ্যে উৎসব করা উচিত হবে কিনা, এ নিয়েও নানা মত প্রকাশ হতে শুরু করে। বিশেষ করে, কোনো কোনো মহল এটিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ম্লান করার একটা অজুহাত হিসেবে দাড় করায়।

কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উৎসবমুখর করার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং আজ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন সারাদেশের মানুষের মধ্যে যে আবেগ, অনুভূতি তৈরি করেছে সেটি রাজনীতির সব হিসেব নিকেশ পাল্টে দিয়েছে। এই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণের একটি বৃহৎ অংশ আওয়ামী লীগের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণই হলো সবচেয়ে বড় শক্তি। বিভিন্ন রকম অস্বস্তির মধ্যে থাকা এই সরকার এক পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর সমর্থন এবং সহমর্মিতা আদায় করে নিয়েছে।

পদ্মা সেতু কেবল একটি অবকাঠামো হিসেবে মানুষ দেখছে না, এটি দেখছে বাঙালির বিজয় হিসেবে, আমাদের একটি আত্মপরিচয় এবং আত্মমর্যাদার স্মারকচিহ্ন হিসেবে। সে কারণেই পদ্মা সেতু রাজনীতির মাঠেও সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। এই আবেগ, উচ্ছ্বাসের কারণে বিরোধী দলগুলো হঠাৎ করে এখন যেমন আন্দোলনের সুযোগ পাবে না, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিপুল জনসমর্থনে থাকা এটি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম চাপ প্রয়োগ করেও খুব একটা সফল হতে পারবে না।

জনগণের শক্তি যে বড় শক্তি, সেটি পদ্মা সেতু আবার প্রমাণ করেছে। এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারকে বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করেছেন, তিনি যা বলেন তা পালন করেন। ফলে আগামী দিনের রাজনীতিতে পদ্মা সেতু একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দাঁড়াবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা