10/13/2024
নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2024-08-06 14:37:20
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিজয় মিছিলে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা। কয়েকজন নিচতলায় পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে হোটেলটির কয়েকটি তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখান থেকে ২১ জনের দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর মধ্যে একজন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক রয়েছেন। হোটেলে তৃতীয় তলার মদের বার থেকে কয়েকজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লুটপাটের সময় সেখানে আটকা পড়ে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পাওয়ার পর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে যশোর শহরে মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। ওই মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধ লোকজন চিত্রা মোড়ে অবস্থিত হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর শুরু করে। দ্বিতীয় দফায় বিকেল চারটার দিকে লোকজন সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১ জনে দাঁড়িয়েছে। এঁদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার এক নাগরিকও আছেন।
মরদেহগুলো উদ্ধারের পর যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ আজ সকালে বলেন, ‘সোমবার রাত ১১টা পর্যন্ত ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত বিদেশি নাগরিকের বিষয়ে ইন্দোনেশিয়ার এম্বাসি থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।’
গতকাল রাতে হাসপাতালে মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সে করে এক এক করে পোড়া মরদেহ হাসপাতালের মর্গে আনা হচ্ছিল। শনাক্তের পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই কয়েকটি মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনেরা। এ সময় তাঁদের কান্না আর আহাজারিতে চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘আগুনে আমার ভাইয়ের ছেলে (১৭) মারা গেছে। আমার মেয়েও ওই হোটেলে উঠেছিল। নিচে পেট্রল ঢেলে আগুন দিতে দেখে আমি আমার মেয়েকে দ্রুত বের করে নিয়ে আসি। এর মধ্যে মিছিল থেকে অনেকে হোটেলের সিঁড়ি দিয়ে ওপরের দিকে চলে যান। পরে আটকা পড়ে আগুনে তাঁদের মৃত্যু হয়।’
যশোর সিটি কলেজ থেকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া মারুফ হোসেন নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে কিছু উগ্র ছেলে ছিল। বিজয় মিছিলে সাধারণ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাঁরাও জাবির হোটেলে ঢুকে পড়ে। আমরা মূলত হোটেলটি দেখতে সেখানে গিয়েছিলাম। তবে ওই ছেলেরা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বিভিন্ন তলায় চলে যায়। কেউ কেউ আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে আমার কয়েকজন বন্ধু আটকা পড়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছে।’
আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে হাসপাতাল চত্বরে ভিড় করেন আরও কয়েকজন স্বজন। গতকাল রাত ১০টার দিকে কেউ কেউ মর্গের সামনে বসে নিজ সন্তান বা স্বজনের খোঁজাখুঁজি করছিলেন। সুজলপুরে মহল্লার বাসিন্দা মফিজুর রহমান জানান, তাঁর কলেজপড়ুয়া ভাগনে আল আমিন গতকাল বিজয় মিছিলে গিয়েছিল। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মফিজুর আরও বলেন, ‘(গতকাল) বিকেল থেকেই তাকে (আল আমিন) ফোন দিচ্ছি, রিং যাচ্ছে; অথচ ফোন ধরছে না। তার বন্ধুরা বলছে, “আল আমিনও হোটেলে উঠেছিল।” সে এখন কোথায়? আল্লাহ, আলামিনকে বাঁচিয়ে দাও।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ছাড়া হোটেলটির মালিক শাহীন চাকলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81