10/05/2024
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2024-08-13 21:05:23
‘আমি পালিয়ে যখন তিন কিলোমিটার দূরের একটি বাজারে বসে ছিলাম, তখন দেখেছি অনেকেই মোটরসাইকেলে চালের বস্তা নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের হিসাবে ১৩ হাজার ৩০০টি চালের বস্তা ছিল।’
সরকার পতনের পর ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার চালকলে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বর্ণনায় এভাবেই বলছিলেন ব্যবস্থাপক গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিংহ।
৫ আগস্ট উপজেলার তাতকুড়া এলাকায় অবস্থিত আরএমজি অ্যাগ্রো ইন্টারন্যাশনাল নামের চালকলে এই ঘটনা ঘটে। কারখানার মালিক সোমনাথ সাহা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিংহের ভাষ্য, চালের বস্তাগুলোর মধ্যে ৮ হাজারের বেশি ছিল ৫০ কেজির। বাকিগুলো ছিল ২৫ কেজির। প্রতিটি ৮০ কেজির প্রায় ১৭ হাজার বস্তা ধান ছিল। এ ছাড়া ব্যাংক থেকে তুলে আনা ৫২ লাখ টাকা, ৩০টির বেশি মোটর, জেনারেটর ও বিদ্যুতের তার লুট করা হয়। সব মিলিয়ে অন্তত ৩৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে চালকলে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পোড়ার ক্ষতচিহ্ন। আশপাশ থেকে ভেসে আসছে পোড়া ধান ও চালের গন্ধ। প্রবেশপথে রাখা পাঁচটি বাস ও একটি ট্রাক পুড়ে গেছে। চালকলের সীমানার ভেতরে গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম ছিল; সেখান থেকেও লুটপাট হয়েছে মালামাল।
৫ আগস্ট সোমনাথ সাহার চালকলে লুটপাট শুরু হওয়ার পর ভয়ে পেছনের দেয়াল টপকে পালিয়ে যান গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিংহ।
তিনি জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরই আশঙ্কা করা হচ্ছিল চালকলে লুটপাট হতে পারে। তখন শতাধিক শ্রমিক ও কর্মচারী বাড়ি চলে যান। পরে ভেতর থেকে মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিকেল সাড়ে চারটার দিকে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় পর্যন্ত একটি জায়গায় লুকিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্বৃত্তরা মূল ফটক খুলে দিলে আরও অনেকেই ভেতরে ঢুকে পড়লে ভয়ে পেছনের দেয়াল টপকে পালিয়ে যান তিনি।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, চালকলের ভেতরে ঢুকেই পাঁচটি বাস ও একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর শুরু হয় ধান ও চালের বস্তা লুট। খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে পিকআপ ভ্যান, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে আসে অনেকেই। তারা যানবাহনে করে ধান ও চালের বস্তা নিয়ে যেতে থাকে। থানায় খবর পাঠিয়েও লাভ হয়নি। ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলেছে এই লুটপাট।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতা ও গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোমনাথ সাহা বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাকে এমন নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে। আমার ব্যবসার পেছনে মোটা অঙ্কের ব্যাংকঋণ আছে।’
এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পায়নি পুলিশ। গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান আল মামুন বলেন, ‘৫ আগস্ট পুলিশের কর্মবিরতির কারণে থানার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে এখন আমরা কাজে ফিরেছি। সোমনাথ সাহার পক্ষ থেকে এখনো অভিযোগ করার সুযোগ আছে। তবে তিনি কোনো অভিযোগ করেননি।’
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81