07/21/2025
শাহীন আবদুল বারী | Published: 2025-07-20 13:19:53
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট জটিল সংকটে এসে দাঁড়িয়েছে। নৈতিকতা, সহমর্মিতা এবং একে অপরের পরিপূরক না থাকায় রাজনীতির জায়গা ক্রমশ সংকীর্ণ হচ্ছে। খুনি, ধর্ষক, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ আর দুর্নীতিবাজরা শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়, দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও শিশু নির্যাতনও বেড়েছে। খুন, গুম, চাঁদাবাজি এবং নিরীহ মানুষের ওপর সন্ত্রাস-এসব শুধু বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, এগুলো সমাজ কাঠামোকে ভেঙে ভেতরটা চুরমার করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে দলীয় প্রধানদের কঠোর নির্দেশনাও কোনে কাজে আসছেনা।
এই বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মাঠের নেতাকর্মীরা। কিন্তু দলের হাইকমান্ডের কতিপয় অর্থলোভী ও স্বার্থন্বেষী দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে নীরবে নিজেদের আখের গোছাতে লিপ্ত রয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করায় এরা কেউ কারো কমান্ড মানতে নারাজ।
একটি সভ্য দেশ গঠনে রাজনৈতিক দল গুলো মানবিক ও নিরাপদ সমাজ নির্মাণে অপরাধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নইলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কোন সম্ভবনা নেই। নিজের ক্ষমতায়নের জন্য বা অবৈধ আয়ের উৎস'য় আইন হাতে তুলে নেয়া নয়, বরং আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং সামাজিক সচেতনতাই হতে পারে টেকসই সমাধান। বর্তমান সমাজে দুর্বলরা নিরাপদ নয়, তাই সমাজ টিকে থাকতে পারে না। প্রত্যেকের দায়িত্ব-খুনি, ধর্ষক, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের রুখে দাঁড়ানো। কোনো অবস্থাতেই গণপিটুনির মতো বর্বরতা না ঘটানো নিশ্চিত করা। অপরাধী যেই হোক, তার বিচার হোক প্রমাণের ভিত্তিতে, আদালতের কাঠগড়ায়।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর যারা যেখানেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের প্রতি সকল শ্রেণী পেশার মানুষ সর্বোপুরি এটাই আশা করেন। ক্ষমতার লোভে সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে নিজের কবর রচনা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই দেশের মানুষের মন খুবই নরম ও আবেগবান। একমাত্র আশ্রয়স্থল মহান আল্লাহর কাছে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কথা ও মন্তব্য থেকে এসব উপলব্ধি জানা গেছে।
সাধারণ মানুষের মতে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ভেতরে শুদ্ধি, জবাবদিহিতা ও নৈতিক নেতৃত্ব তৈরির প্রয়োজনীয়তা অবহেলা করলে এ দেশের রাজনীতি আরও নষ্ট হবে। মনে রাখতে হবে ধর্ষক বা সন্ত্রাসীর রাজনৈতিক কোন পরিচয় নেই। তারা যা করে তা নিজের ও পরিবারের জন্য। যারা অপরাধী, তাদের বিচার অবশ্যই আইনের আওতায় হতে হবে। অপরাধী যেন কোন দলে বা নেতার নিকট আশ্রয়-প্রশ্রয় না পায় সেটি অবশ্যই দলের মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে দলীয় প্রধান পর্যন্ত খবর রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাতে দলের ভাবমূর্তি ইতিবাচক হবে। সব গুলো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আচরণ বদলিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যেতে হবে। মানুষ যেন নেতার ভয়ভীতির কারণ না হয়। গত বছরের ৫ আস্টের পর দেশের মানুষের মধ্যে যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল তা ধরে রাখতে পারেনি কোন রাজনৈতিক দল।
রাজনৈতিক দল বা নেতাদের দিকে লক্ষ্য করলে, দেখা যাচ্ছে অপরাধীদের ‘আমাদের’ বা ‘আপনাদের’ বলে ভাগ করে নেওয়া হয়। এতে নিরীহ মানুষ বিচার থেকে বঞ্চিত হয়, অপরাধীরা পায় প্রশ্রয়। রাজনীতি কখনো পক্ষপাতের জায়গা হতে পারে না। আইন ও ন্যায়বিচার হওয়া উচিত অপরাধীর জন্য একমাত্র বিচারক। অপরাধীদের রাজনৈতিক রঙে রাঙিয়ে তাদের রক্ষা করা মানে সমাজকে বিভক্ত করা, মানুষের নিরাপত্তা ও মানবিক মর্যাদা নষ্ট করা। যতদিন পর্যন্ত এই নোংরা মনোভাব পোষণ করবে ততদিন রাজনীতির মাঠ অপরিচ্ছন্ন থাকবে বলে মনে করেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি অনুরোধ এবং পরামর্শ হচ্ছে অপরাধ ও অপরাধীকে দল-মতের ঊর্ধ্বে দাঁড়িয়ে বিচার করতে না পারলে, আমরা একটি বিভাজিত সমাজের দিকে ধেয়ে যাই, যেখানে ‘আমার খুনি’ আর ‘আপনার খুনি’ থাকে, কিন্তু ন্যায় থাকে না।
এই বিভাজনের ফলে দেশের রাজনীতি হয়ে ওঠে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সংঘর্ষময় মঞ্চ। এটি বন্ধ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কারণ দেশ পরিচালনা হয় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে। সরকার গঠন করে রাজনৈতিক দল। পতিত সরকার ১৫ টি বছর দেশ শাসন করার পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে উৎখাত হয়েছে। কাজেই খুনোখুনি আর ক্ষমতার রাজনীতি নয়, হোক সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের রাজনীতি। যা নাকি হাজার বছর সাক্ষী হয়ে থাকবে।
রাজনৈতিক দলগুলো যদি অপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের দল থেকে চিরতরে বহিষ্কারে ব্যর্থ হয়, তবে তারা জনগণের আস্থা হারাবে। দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, কালোবাজারি আর মুনাফালোভীদের সঙ্গে রেখে রাজনীতির দূষণ রোধ করা যাবে না। দলগুলো যদি নিজেদের ভেতর থেকে শুদ্ধ না হয়, তাহলে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে না-অর্থাৎ গণতন্ত্রের ভিত্তিই দুর্বল হবে। যারা মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা ও গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা রাজনীতির নামে শুধু ক্ষমতা ও সন্ত্রাসের ব্যবসা করে। রাজনীতি কোনো অপরাধীর আশ্রয়কেন্দ্র নয়; বরং তা হওয়া উচিত মানুষের অধিকার ও মর্যাদার লড়াইয়ের একটি মহান প্রতিষ্ঠান। এরা সমাজের শত্রু, আর তাদের রাজনীতিতে স্থান দেয়া মানে গণতন্ত্রের শত্রুতায় অবদান রাখা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো আচরণ করলে বিএনপিরও একই পরিণতি হবে।’ এটা কেবল বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়; এটি নিজের দলের প্রতি কঠোর আত্মসমালোচনা এবং নৈতিক শুদ্ধির আহ্বান। আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতার যে দমন-পীড়ন, দুর্নীতি, দলীয়করণ আর অরাজকতা তৈরির ইতিহাস বিএনপি দেখেছে, সেটির পুনরাবৃত্তি হলে ফলাফল হবে একই; জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন এবং রাজনৈতিক সংকট গভীরতর হওয়া। তারপরও কিছু বিপদগামী নিজের ও পরিবারের জন্য অবৈধ অর্থ উপার্জনে মরিয়া। দলের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে এই পর্যন্ত পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এই সতর্কতা অপরিহার্য, কারণ রাজনৈতিক শুদ্ধি ছাড়া একটি দল টিকে থাকতে পারে না। জনগণ আজ আর শুধু বক্তৃতা ও প্রতিশ্রুতিতে সন্তুষ্ট নয়; তারা চান সত্যিকার পরিবর্তন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা। যারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষায় দুর্নীতি, সন্ত্রাস বা মানবাধিকার লঙ্ঘনকে প্রশ্রয় দেয়, তারা শেষ পর্যন্ত জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই, বিএনপিকে নিজের ইতিহাস ও অর্জনের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করতে হবে।
রাজনীতিতে ভুল করেননি-এমন কোনো রাজনৈতিক নেতা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে, যার ভুলের পরিমাণ যত কম, তিনি তত বেশি সফল। তাকে জনগণ তত বেশি ভালোবেসে মনে রেখেছে। আবার যে নেতা যত বেশি ভুল করেছে, সে তত বেশি নিন্দিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি নিন্দিত ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত।
তারেক রহমান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘এখন কিন্তু মানুষ অনেক সচেতন। মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে, আমাদের ওপরে অর্থাৎ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপরে। মানুষ অর্থাৎ, দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ, অর্থাৎ এদেশের ভোটার, তারা বিএনপির ওপরে আস্থা রাখতে চাইছে। এ আস্থা যদি নষ্ট করার জন্য কেউ কোনো কাজ করে, তাহলে তাকে তো আমার পক্ষে টানা সম্ভব না। তাকে আমি টানব না। তাকে আশ্রয় দেব না। এখানে দলকে ‘স্বার্থপর’ হতেই হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিরব না থেকে সরব হতে হবে।
কোনো ব্যক্তির কারণে, নেতার কারণে, কর্মীর কারণে যদি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়, তাকে আমরা ওউন করতে পারব না। কারণ আমরা বহু বহু অত্যাচার-নির্যাতন ও ঝড়-ঝঞ্ঝার ভেতর দিয়ে আজ এখানে এসেছি। কাজেই আমাদের পক্ষে আর সম্ভব না-যে কেউ নিজের বিষয়, নিজের স্বার্থ নিয়ে এমন কিছু করবে, যেটা দলের স্বার্থকে আঘাত করবে, ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তাকে আমাদের পক্ষে টানা সম্ভব না।’
বিএনপির অর্জন ও অবদান ধুলায় মেশানোর অধিকার কারও নেই-এ কথা স্পষ্ট। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়, অর্থনৈতিক সংস্কারে, নারীর ক্ষমতায়নে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায়, গ্রামীণ উন্নয়নে বিএনপির অবদান অনস্বীকার্য। এ ইতিহাসকে ভুলে গেলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির ভিত্তি দুর্বল হবে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বকে দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে শুদ্ধি ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ধর্ষক, খুনি, দুর্নীতিবাজ, মাদক কারবারি-এরা সমাজের বাইরের কেউ নয়। বৈষম্য, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বিচারহীনতা ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের ফাঁকেই এদের জন্ম হয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য মনুষ্যত্বকে গরিব করে তোলে। ক্ষুধার্ত মানুষ অস্ত্র ধরে, আদর্শ বেচে দেয়, আর অপরাধ তখন ব্যক্তিগত পাপ নয়, হয়ে ওঠে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা। রাজনীতি যখন দুর্নীতির কারখানা হয়, প্রশাসন যখন দলীয় লাঠিয়ালে পরিণত হয়, তখন অপরাধীরা বিচার নয়, পরিচয় দিয়ে বাঁচে। বিচারহীনতার কোলে জন্ম নেয় গণপিটুনি, যেখানে জনগণই আইন হাতে তোলে। তখন খুনি ও বিচারকের মাঝে আর কোনো পার্থক্য থাকে না।
শিক্ষাব্যবস্থা যখন হয় মূল্যবোধহীন, সংস্কৃতি যখন হয় ভোগবাদী আর সমাজ যখন হয় লোভের পূজারি, তখন অপরাধীরা শুধু অপরাধ করে না-নিয়ন্ত্রকও হয়ে ওঠে। তারা হয়ে ওঠে নেতা, ঠিকাদার, মালিক, আর সাধারণ গরিব মানুষ-নির্যাতিত ও বঞ্চিত। বর্তমানে বাংলাদেশে অপরাধ বেড়েই চলেছে: ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, সিন্ডিকেট, মাদক-সবই চলে রাষ্ট্রের ছায়ায়। সরকার নীরব, বিচার ঘুমন্ত, জনগণ আতঙ্কে। এসব সংকটের প্রতিকার শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সম্ভব নয়; প্রয়োজন ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোর গভীর সংস্কার।
সমাধান একটাই-অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। ধনী-গরিবের ব্যবধান কমানো, সবার জন্য শিক্ষা, কাজ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হলো মূল চাবিকাঠি। রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তি আনতে হবে, যাতে মানবিকতা, নারীর মর্যাদা ও যুবসমাজের নৈতিকতা গড়ে ওঠে। উন্নত রাষ্ট্রগুলো দেখিয়েছে-সুশাসন থাকলে অপরাধ থাকে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তা-ই প্রযোজ্য। তবে এর জন্য সবার আগে দরকার একটি নির্বাচিত সরকার।
বাংলাদেশে এক সুন্দর, ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি গড়ে তোলার দায়িত্ব সবার, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের। মানুষের একান্ত প্রত্যাশা হলো, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের ভেতর থেকে শুদ্ধ হবে, অপরাধীদের নির্মূল করবে এবং দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত নেতৃত্ব গড়ে তুলবে। অন্যথায়, ইতিহাস তাদের কঠোর বিচার করবে।
রাজনীতি মানুষের জন্য-মানবিকতা, ন্যায়বিচার, সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। তাই এখন সময় এসেছে স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার-রাজনীতিতে অমানুষের কোনো স্থান নেই। এই রাজনীতিকে প্রতিরোধ করেই ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট খুবই নাজুক। মানুষের মধ্যে সব সময় আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দিকেই তাকিয়ে আছে সব শ্রেণি পেশার মানুষ।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। টার্গেটে পরিণত হয়েছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জিয়া পরিবার আক্রান্ত হয়েছেন ওয়ান ইলেভেন থেকে ১৮ বছর ধরে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। শীর্ষ নেতাদের গ্রুপিংয়ে একদল কোনঠাসা। ১৫ বছর বিএনপি নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্মম নিপীড়ন সহ্য করেছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর চিত্রপট এমন বদলে গেলো? জেলা-থানা এমনকি ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ের তথাকথিত নেতারা যেন একেকজন নব্য গডফাদার। গত দশমাসে শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। অগণতান্ত্রিক পন্থায় দলের কমিটি গঠন আর পদবাণিজ্য বিএনপিকে ডোবাচ্ছ, নব্য গডফাদারের জন্ম দিচ্ছে।
বিএনপির ত্যাগি নেতা ইলিয়াস হোসেন, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম সহ শত শত নেতাকর্মীকে গুম করে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। তাদের পরিবার গুলো জানেনা তারা বেঁচে আছেন নাকি মেরে ফেলা হয়েছে। কেউ বাবা হারিয়েছেন, কেউ সন্তান হারিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন স্বামী। এসব অসহায় মানুষের কান্নার আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠলেও মন গলেনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি বরং বিভিন্ন সময়ে রহস্যময় কথা বলতেন। নিহতের পরিবারগুলো শেখ হাসিনার কাছে গিয়েও ফিরে আসতেন খালি হাতে। পতিত সরকারের কথিত আয়না ঘরে অসংখ্য নেতাকর্মী বছরের পর বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কোন মায়া-মমতার বালাই ছিলো না আওয়ামী প্রশাসনের কাছে।
বিএনপির হাইব্রিড বা নব্য গডফাদাররা এসব ভুলে দলের ক্ষতি সাধনে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। এরা অতীতেও দলের দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের সাথে ঠিকাদারি সহ বিভিন্ন সুযোগ নিয়েছে। আর ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলের জন্য জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। অনেকে পরিবারের মায়া ত্যাগ করে দলের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আর যারা দলের দুঃসময়ে মিটিং-মিছিলে যায়নি তারাই এখন দলের প্রথম সারির নেতা বুনে গেছেন। এদের কারণেই বিএনপির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট জটিল সংকটে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এদেরকে চিহ্নিত করে শক্ত হাতে দমন না করলে ভবিষ্যতে আরো বড়ো ধরনের খেসারত গুনতে হবে। এজন্য ত্যাগী নেতাকর্মীদের খুঁজে বের করে তাদেরকে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় দলীয় রাজনৈতিক পদে বসাতে হবে। এতে যেসব নেতারা পদ বিক্রির বাণিজ্য করেন তাদেরও আর বাণিজ্যের সুযোগ থাকবে না। বিএনপি একটি সুশৃংখল দলে পরিণত হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়ন হবে। জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দল বিএনপি রাজনীতিতে ইতিবাচক ও গঠনমূলক ধারায় আসলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না। আর দলটি অসৎ, সুবিধাবাদী ও সিজনাল রাজনীতিবিদদের কাছে হেরে গেলে বাংলাদেশের আশার জায়গাও অনেক কমে আসবে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81