08/08/2025
শাহীন আবদুল বারী | Published: 2025-08-07 13:58:20
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় সমাবেশে প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে খুবই কঠিন। নির্বাচনে আপাতদৃষ্টিতে বিএনপি ক্ষমতায় চলে এসেছে এমনটা ভাবলে দলের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। এ জন্য দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি এবং নানা রকম বিতর্কিত কর্মকান্ড থেকে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক
রহমান।
জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ইমেজ যাতে কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ না হয় সে জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন তারেক রহমান। কিন্তু তার নির্দেশনা
চাঁদাবাজি এবং নানা রকম বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আছেন বিএনপির অসংখ্য নেতা। তারা জুলাই বিপ্লবের পর বিভিন্ন দখল বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। কোনভাবেই তাদেরকে বারণ করা যাচ্ছেনা।
গোয়েন্দা সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খুঁজতে জরিপ হচ্ছে। থাকবে তরুণ নেতাদের প্রাধান্য, ক্ষমতায় গেলেও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপেক্ষা করে সারা বাংলাদেশে বিএনপির একটি অংশ বিতর্কিত কর্মকান্ডে নিজেদের জড়িয়েছেন। স্থানীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রভাবশালী এবং কিছু কেন্দ্রীয় নেতার শেল্টারে দখলদারিত্ব, কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় ইতোমধ্যে দলের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে। এ জন্য এসব নেতার তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপির একাধিক বিশেষ টিম।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোনোভাবেই বিতর্কিত কাউকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেছেন, যারা তারেক রহমানের নির্দেশনা অমান্য করে দলের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করছেন তাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। তারা এলাকায় কিংবা দলে যত বড় ক্ষমতাধর হোক তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবেনা।
পুলিশের সূত্রমতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের এক হাজার ৯৪১ জন সম্ভাব্য সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থীর নাম ও জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এমন প্রত্যেক প্রার্থীর ১১টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়াও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে প্রার্থীর আরো কয়েকটি বিষয় নথিতে সংযুক্ত করে নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৪ জুলাই থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। নির্বাচন করতে পারেন এমন প্রার্থীদের বাড়ি এবং ব্যবসায়িক কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশ এসব তথ্য সংগ্রহ করে। কিছু প্রার্থী পুলিশকে নিজ উদ্যোগে ব্যক্তিগত তথ্য দিয়েছেন এবং কেউ কেউ কিছু বিষয় গোপন করার চেষ্টা করেছেন। পুলিশ প্রথাগত সোর্স ও মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর কাছ থেকে বাকি তথ্যগুলো সংগ্রহ করে। শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগভিত্তিক প্রার্থীদের এ তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বেশি প্রার্থী হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগের ৭০ আসনে ৫৮০ ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। এছাড়া ভোট করতে ইচ্ছুক এমন এক হাজার ৯৪১ জনের মধ্যে ৭০ জন ঋণখেলাপি হওয়ার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের প্রতিবেদন যাতে কোনো ধরনের নেতিবাচক না হয়, সেক্ষেত্রে কিছু প্রার্থীর পুলিশের দারস্থ হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, মাঠপর্যায়ে যে তথ্য পাওয়া যাবে, ওই তথ্যগুলো এখানে লিপিবদ্ধ করা হবে।
এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানান, প্রার্থীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সারণি আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী বিভাগের এক পুলিশ সুপার (এসপি) বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা করে সেগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। টাঙ্গাইলের একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অনেক বিতর্কিত নেতা আছে, যারা মনোনয়ন নিতে মরিয়া। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের।
সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ বিভাগের ২৪ আসনে ১২০ জন প্রার্থী রয়েছেন। প্রতি আসনে গড়ে ছয়জন করে প্রার্থীর খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের প্রতিবেদনে ওই বিভাগের অধিকাংশ প্রার্থীই তরুণ বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে ১৯৮ প্রার্থীর খবর পেয়েছে পুলিশ। ওই বিভাগে বিএনপির প্রার্থী বেশি বলে জানা গেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৮ আসনে ৩৪৮ জন এবার ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেবেন বলে তালিকায় উঠে এসেছে। বরিশালে বিভাগের ২১ আসনে ১৪৭ জন ভোট করবেন বলে জানা গেছে।
খুলনা বিভাগের ৩৬ আসনে এবার ২১৬ জন ভোট করবেন। রাজশাহী বিভাগের ৩০ আসনে ১৮০ জনের ভোট করার কথা জানানো হয়েছে। ওই বিভাগে বিএনপির প্রার্থী বেশি বলে জানা গেছে। এছাড়া সিলেটের ১৯ আসনে ১৫২ জন সম্ভাব্য প্রার্থী এবার ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। পাশাপাশি বরিশাল বিভাগের ২১ আসনে ১৪৭ জন ভোট করবেন বলে পুলিশের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, মোট এক হাজার ৯৪১ জন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীর মধ্যে ৭০ জনের ঋণখেলাপির তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৫ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর ঋণখেলাপির খবর পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের বায়োডাটায় প্রার্থীর পেশাগত পরিচয়, রাজনৈতিক ইতিহাস ও ভূমিকা, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব, কোনো উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার রেকর্ড, বিচারাধীন মামলা বা আগের সাজা, মোবাইল নম্বর, ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন ও আর্থিক লেনদেন, বিদেশে যাতায়াত ও সম্পদের বিবরণ, অপরাধমূলক রেকর্ড, পুলিশের খাতায় থাকা তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সহিংসতায় জড়াতে পারেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়।
সূত্র জানায়, আসন্ন নির্বাচনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ঠেকাতে এ উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। কারণ, নির্বাচন বানচাল করতে ফ্যাসিবাদের একটি গোষ্ঠী মাঠে সক্রিয় হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ মাঠপর্যায়ে টহল বাড়ানোসহ অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করবে। পুলিশ বাহিনী মাঠে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
এদিকে গত ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষণা করেছেন। কিন্তু নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দেশীয় ও বিদেশীয় চক্র। কিছু ব্যাক্তি চাচ্ছে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দেয়া হোক। কিন্তু প্রধান নির্বাচন সাফ জানিয়েছেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরে চিন্তা করার কোন সুযোগ নেই।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81