09/20/2025
নেহাল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক | Published: 2025-09-20 17:50:47
বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্য লগ্ন শুভ মহালয়া রাত পেরুলেই। এই দিনটি বাঙালির কাছে শুধু ধর্মীয় নয়, বরং সাংস্কৃতিক আবেগেরও একটি অনন্য উপলক্ষ।
মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুরাণে আছে- দুর্গোৎসবের তিনটি পর্ব- মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস।
মহালয়া তিথি পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ। অমবস্যার পরবর্তী তিথি প্রতিপদ থেকে শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। শাস্ত্রমতে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর নিধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এই মহালয়া তিথিতে।
পুরাণ মতে, শিবের বর অনুযায়ী কোনো মানুষ বা দেবতা কখনো মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলে অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হতে চায়। তাই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী সম্মিলিতভাবে ‘মহামায়া’র রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে সিংহবাহিনী নিয়ে দেবী দুর্গা ৯ দিনব্যাপী যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করে।
মহালয়ার তিথিতেই দেবী সংসার নিয়ে মর্তে আসেন, ভোরে উঠে ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ শুনতে বসার দিন।
মহালয়া মূলত দুইটি দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। প্রথমত, এটি পিতৃপক্ষের সমাপ্তি। হিন্দু সমাজে বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে পূর্বপুরুষদের আত্মা পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ ও তর্পণ করলে তাঁরা আশীর্বাদ প্রদান করেন। তাই মহালয়া দিনে সন্তানরা পূর্বপুরুষের স্মরণে পূণ্যকর্ম সম্পাদন করে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে।
দ্বিতীয়ত, মহালয়া হলো দেবীপক্ষের সূচনা। এই দিন থেকেই দুর্গাপূজার আগমনী বার্তা শুরু হয়। বলা হয়ে থাকে, মহালয়ার দিন ভোরে দেবী দুর্গা তাঁর সন্তানের সঙ্গে কৈলাস থেকে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। ফলে সারা বাংলায় শুরু হয় শারদোৎসবের আনন্দের প্রস্তুতি।
মহালয়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অনন্য সাংস্কৃতিক পরম্পরা। ভোরবেলা রেডিওতে "মহিষাসুরমর্দিনী" অনুষ্ঠান শোনা এক প্রাচীন অভ্যাস। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ, সংগীত ও কাব্যপাঠ যেন বাংলার প্রতিটি ঘরে শিহরণ তোলে। চণ্ডীর স্তোত্রধ্বনি ও সংগীত মিলে যে আবহ সৃষ্টি করে, তা বাঙালির হৃদয়ে দুর্গাপূজার উৎসবের প্রথম সূর্যোদয়ের মতোই আনন্দ আনে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হলেও মূলত আগামীকাল থেকেই দুর্গাপূজার আগমনধ্বনি শোনা যাবে। দুর্গাপূজার এই সূচনার দিনটি সারা দেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হবে। মহালয়া উপলক্ষে বিভিন্ন মন্দির ও পূজা কমিটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপে, ঢাকাস্থ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, স্বামীবাগে লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির, রামসীতা মন্দির, জয়কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভোর থেকেই চন্ডীপাঠ, চন্ডীপূজা ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে মহালয়ার ঘট স্থাপন করা হবে।
মহালয়া কেবল একটি ধর্মীয় দিন নয়, এটি আমাদের আবেগ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। পূর্বপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা, দেবীর আগমনী বার্তা এবং শিল্প-সাহিত্যের অনন্য পরিবেশনা—সব মিলিয়ে মহালয়া হয়ে উঠেছে বাঙালির হৃদয়ের চিরন্তন উৎসব-দূত।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81