11/02/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2025-11-01 20:30:23
২০২২ সালে প্রিমিয়ামের ৩১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদেনে আত্মসাতের এই চিত্র উঠে আসলে এর জন্য মাত্র ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
তবে আত্মসাতকৃত অর্থ কোম্পানির তহবিলে জমা করার কোনো নির্দেশ দেয়নি সংস্থাটি। শুধু তাই নয়, প্রিমিয়ামের সাথে আত্মসাতকৃত ভ্যাট-ট্যাক্সের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমার কোনো নির্দেশও দেয়নি আইডিআরএ।
এছাড়াও ৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য জরিমানা করা হয় ৫ লাখ টাকা। অথচ অতিরিক্ত ব্যয়ের নামে টাকা আত্মসাৎ হয়েছে কিনা সেই বিষয়ে অধিকতর তদন্তের নির্দেশনা না দিয়ে জরিমানা আরোপ করেই অবৈধ ব্যয়ের অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দেয়া হয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সকে।
গত ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে পাঠানো বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র এক চিঠি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড দেশের বীমা বাজারে ব্যবসা শুরু করে ১৯৯৬ সালে। পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৬ সালে। এই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছে দেশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মোস্তফা কামালের পরিবার। কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন তিনি।
এছাড়াও মোস্তফা কামালের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তার স্ত্রী বিউটি আকতার, তার ৩ মেয়ে তাহমিনা মোস্তফা, তানজিমা মোস্তফা ও তাসনিম মোস্তফা, ছেলে তানভির মোস্তফা এবং মেয়ের স্বামী তায়েফ বিন ইউসুফ কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন।
এই কোম্পানিটি মূলত মোস্তফা কামাল ও তার পরিবারের আধিপত্যে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই পরিবারের হাতে রয়েছে ১ কোটি ৬৭ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার, যা বীমা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩৭.৮০ শতাংশ।
যেভাবে আত্মসাৎ হয় প্রিমিয়ামের ৩১ কোটি টাকা
বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টে ২০২২ সালে মোট প্রিমিয়াম আয় দেখানো হয়েছে ৯০ কোটি ৫৪ লাখ ৩ হাজার ৩৮৮ টাকা। অথচ ব্যাংক স্টেটমেন্ট অনুসারে ২০২২ সালে কোম্পানিটির ৩টি ব্যাংক একাউন্টে মোট জমার পরিমাণ ১২১ কোটি ৭১ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৫ টাকা।
এই হিসাবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ৩১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৯৭ টাকার প্রিমিয়াম আয় ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টে প্রদর্শন না করে আত্মসাৎ করেছে। এই অপরাধের জন্য বীমা কোম্পানিটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে আইডিআরএ। এই জরিমানা আরোপ করা হয় বীমা আইন ২০১০ এর ১৩০ ধারায়।
তবে বীমা কোম্পানিটি বলছে, প্রিমিয়াম আয় প্রদর্শিত হয় নেট প্রিমিয়াম অনুযায়ী এবং পলিসির ভিত্তিতে। কিন্তু ব্যাংক হিসাবে জমা হয় গ্রস প্রিমিয়াম। এর মধ্যে ভ্যাট, স্ট্যাম্প, ডিপোজিট প্রিমিয়াম, রিফান্ড, চেক ডিজঅনার ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে বিধায় প্রিমিয়াম আয় এবং ব্যাংকে জমার মধ্যে পার্থক্য থাকে।
সেই সাথে কোম্পানিটির দাবি, প্রিমিয়াম সংগ্রহের ৩টি ব্যাংক একাউন্টে অ্যাডভান্স প্রিমিয়াম রিসিভড, লাস্ট ইয়ার কালেকশন ও চেক ডিজঅনারের টাকাও জমা করা হয়েছে। এই তিনটি খাতে কোম্পানিটির মোট ব্যাংক জমা দেখানো হয়েছে ২০ কোটি ৮২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬৩ টাকা।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের এ সংক্রান্ত রিভিউ আবেদন না-মঞ্জুর করে ৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করলেও কোম্পানিটির বিপুল অংকের অ্যাডভান্স প্রিমিয়াম রিসিভড, লাস্ট ইয়ার কলেকশন ও চেক ডিজঅনারের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত বা বিশেষ কোন পদক্ষেপ নেয়নি আইডিআরএ।
এছাড়াও আত্মসাতকৃত প্রিমিয়ামের ৩১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৯৭ টাকা কোম্পানির তহবিলে জমা করার কোনো নির্দেশ দেয়নি বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। শুধু তাই নয়, প্রিমিয়ামের সাথে আত্মসাতকৃত ভ্যাট-ট্যাক্সের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ারও কোনো নির্দেশনা দেয়নি আইডিআরএ।
আরো যেসব অনিয়ম
২০২২ সালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ৩০ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার ৮৩৮ টাকা। সেখানে কোম্পানিটি ব্যয় করেছে ৪০ কোটি ৪৪ লাখ ৭ হাজার ৪৭০ টাকা। এই হিসাবে কোম্পানিটি অনুমোদিত সীমার চেয়ে ৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে, যা অবৈধ।
বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে আসা এই অনিয়মের জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে আইডিআরএ। অর্থাৎ ৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা অবৈধ ব্যয়ের অপরাধ থেকে বীমা কোম্পানিটিকে ৫ লাখ টাকায় দায়মুক্তি দিয়েছে আইডিআরএ।
অথচ অতিরিক্ত ব্যয়ের নামে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে কিনা তার অধিকতর তদন্তের কোন নির্দেশনা দেয়নি বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
আবার ৪২টি পলিসি ইস্যুর ক্ষেত্রে ট্যারিফ রেট লঙ্ঘনের তথ্য উঠে এসেছে বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে। বীমা আইন ২০১০ এর ১৭ ধারার লঙ্ঘন করে এসব পলিসি ইস্যু করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স। এই অপরাধের জন্য কোম্পানিটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
অর্থাৎ এক লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করে বীমা কোম্পানিটির ট্যারিফ রেট লঙ্ঘনের অপরাধ থেকেও দায়মুক্তি দিয়েছে আইডিআরএ।
এছাড়াও বীমা আইন লঙ্ঘন করে বিলম্বে বীমা দাবি পরিশোধ করে গ্রাহক হয়রানির অপরাধে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সকে এক লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করে আইডিআরএ। তবে কোম্পানিটির রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে সেই জরিমানাও মওকুফ করে দিয়েছে আইডিআরএ।
এই বিষয়ে জানতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81