30020

11/04/2025

পরিবর্তিত ভূরাজনীতিতে নতুন অক্ষ, ভেস্তে গেল ডিপ স্টেটের দক্ষিণ এশিয়া প্ল্যান

কূটনৈতিক প্রতিবেদক | Published: 2025-11-03 13:54:21

অনেক চড়াই-উৎড়াই, কূটনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন এবং রাজনৈতিক বোঝাপড়ার পর অবশেষে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র আগামী দশ বছরের জন্য নতুন সামরিক সহযোগিতা চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। দীর্ঘদিনের ঠান্ডা সম্পর্ক, পরস্পরের প্রতি সন্দেহ এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে এই চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক নতুন মোড়ের সূচনা করেছে।

কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক তিনটি শীর্ষ সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া সাক্ষাৎকারের পর থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহল অনুমান করছিল—অঞ্চলজুড়ে বড় কোনো পুনর্বিন্যাস আসন্ন। সেটিই এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থ ও ব্যর্থতা

যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরেই এই অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছে। প্রথমে তারা মিয়ানমারে অং সান সুচিকে ব্যবহার করে চীনের প্রভাব ঠেকাতে চেয়েছিল, কিন্তু সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয় ধাপে বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’ চালানো হয়—তাও ভেস্তে যায়।

ওয়াশিংটন ভালো করেই জানে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও তাদের কৌশলগত ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তাই নানা পরিকল্পনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। কিন্তু সেই পদক্ষেপই শেষ পর্যন্ত আমেরিকার কৌশলগত বিপর্যয় ডেকে আনে।

ভারত: মার্কিনীদের অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতা

দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ভারতের ওপর ভরসা করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর ভারতের ভূমিকা তাদের প্রত্যাশার বিপরীতে যায়। ভারত বুঝতে পারে—মার্কিন সেনা বা গোয়েন্দা উপস্থিতি এই অঞ্চলে স্থায়ী হলে তাদের জাতীয় অখণ্ডতা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। ফলে তারা মার্কিন প্রস্তাব থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।

এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর একের পর এক চাপ সৃষ্টি করতে থাকে—ট্যারিফ বাড়ানো, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, এমনকি সীমান্ত উত্তেজনা উসকে দেওয়ার মতো কৌশলও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তাতে ফল মেলেনি। ভারতের সব প্রধান রাজনৈতিক দল পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে সরকারের পাশে দাঁড়ায়। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল আরও ব্যর্থ হয়ে পড়ে।

ভূরাজনৈতিক পালাবদল: নতুন মিত্রতা, নতুন বার্তা

মার্কিন চাপে ভারত মাথা নোয়ায়নি। বরং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত জাতিসংঘ অধিবেশন বয়কট করে, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা বাড়িয়ে ওয়াশিংটনকে স্পষ্ট বার্তা দেয়—নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় তারা ‘তৃতীয় শক্তি’র ভূমিকা নিতে চায়।

এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে তাদের কৌশল বদলাতে বাধ্য হয়। ভারতের সঙ্গে দশ বছরের সামরিক সহযোগিতা চুক্তি এবং দেশটির ওপর আরোপিত ট্যারিফ ১৫-১৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।

এখন থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় ভারতই হবে মূল মধ্যস্থতাকারী—একই সঙ্গে রাশিয়ারও। অন্যদিকে চীনের সঙ্গে ভারতীয় বিরোধ থাকলেও, বাংলাদেশ ইস্যুতে বেইজিং ও নয়াদিল্লির অবস্থান এখন তুলনামূলকভাবে নরম ও সমন্বিত।

ডিপ স্টেটের পশ্চাদপসরণ ও ‘সেফ এক্সিট’ পরিকল্পনা

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ আপাতত এই অঞ্চলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থেকে সরে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় পুনর্বিন্যাস এখন বাস্তবতা। ফলে যারা অতীতে এই পরিকল্পনার দালাল বা সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে, তাদের অনেককেই “সেফ এক্সিট” দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হবে।

তবে যাদের ভূমিকা ছিল গৌণ, তাদের জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের সেই ভয়াবহ দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি।

উপসংহার

ভারত-আমেরিকা সামরিক চুক্তি শুধু দুই দেশের কূটনৈতিক সাফল্য নয়; এটি দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য পুনঃনির্ধারণের ঘোষণা। বাংলাদেশের জন্যও এটি নতুন বাস্তবতার সূচনা—যেখানে রাজনৈতিক অবস্থান, কূটনৈতিক ভারসাম্য ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার কৌশল এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81