30380

12/01/2025

বিলম্বিত অভিযোজন অর্থায়ন ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অস্তিত্বের হুমকি; নিজস্ব সম্পদ নির্ভর স্থানীয় অভিযোজন ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহবান

মোস্তফা কামাল আকন্দ | Published: 2025-12-01 17:30:57

জলবায়ু অর্থ প্রাপ্তির সুনির্দীষ্ট নিশ্চয়তা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার রোডম্যাপ ছাড়াই বেলেম চুক্তি (কপ-৩০) চুড়ান্তভাবে ব্যার্থ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস বাধ্যতামূলক না করে স্বেচ্ছায় করার আহ্বান মূলত বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের মূল কারণকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার বাস্তবসম্মত উপায়ের অভাবে বিশ্ব এখন ৩ ডিগ্রি উষ্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

তারা আরো বলেন, প্রস্তাবিত ট্রিপল অভিযোজন অর্থায়ন লক্ষ্য ২০৩০ থেকে ২০৩৫ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিলম্বিত অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা উন্নত বিশ্বের দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল। আসলে, তাদের লক্ষ্য সহযোগিতা নয় জলবায়ু অর্থায়নকে ঋণ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা।

ফলস্বরূপ, বাংলাদেশের মতো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর টিকে থাকার সংকট আরো ঘনীভুত হয়ে উঠেছে। সুতরাং বাংলাদেশের মতো উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর উচিত হবে নিজস্ব সম্পদের উপর নির্ভর করে শক্তিশালী স্থানীয় অভিযোজন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

আজ ১লা ডিসেম্বর ২০২৫ জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকায় অনুষ্ঠিত “কপ-৩০ এর ফলাফল এবং বাংলাদেশে করণীয়” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব দাবি তুলে ধরেন।

কোস্ট ফাউন্ডেশন, কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিপিডি), সেন্টার ফর পার্টিসেপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), ইক্যুইডিবিডি, সুন্দরনবন সুরক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম (বিসেজেএফ) এবং ওয়াটার্স কিপারর্স বাংলাদেশ যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ইক্যুইডিবিডি’র চিফ মডারেটর ও কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক এম রেজাউল করিম চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর এম. এ. হাসান।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত কপ ৩০-এ অংশগ্রহণকারী অনেকেই বক্তব্য রাখেন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম, সিপিআরডি’র প্রধান নির্বাহী সামসুদ্দোহা, ওয়াটার্স কিপারর্স বাংলাদেশ এর প্রধান নির্বাহী শরীফ জামিল, বিসেজেএফ এর সভাপতি কাউসার রহমান ও সম্পাদক মোতাহার হোসেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের নিখীল চন্দ্র ভদ্র, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, সাংবাদিক সালাহউদ্দিন বাবলু সহ অনেকেই।

মো: রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বরাবরের মতো এবারও এলডিসি ও এমভিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট আর্থিক প্রতিশ্রতি আসেনি, ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে এমন নয়, পেলে ও যৎসামান্য অনুদানভিত্তিক বাকি পুরোটাই ঋণ নির্ভর। ন্যায়ভিত্তিক জলবায়ু ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিং অ্যডভোকেসি ও আলাপ আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে, এবং দেশের বৃহৎ জলবায়ু ঝুকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় নিজস্ব সম্পদের উপর নির্ভর করে শক্তিশালী স্থানীয় অভিযোজন ব্যবস্থা গড়ে তোলতে হবে।

সামসুদ্দোহা বলেন, ৫৯টি অনুচ্ছেদের মুতিরাও চুক্তি বাস্তবায়নের কোন রাজনৈতিক অঙ্গীকার আমরা পাইনি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করার কোন সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি, শুধু আলোচনার কথা বলা হয়েছে। সবচেয়ে আশংকার বিষয় হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলনের মূল অলোচনার বাহিরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, ব্রাজিলের নেতৃত্বে এবারের নতুন তহবিল ট্রপিক্যাল ফরেস্ট ফরেভার ফ্যাসিলিটি তেমনই একটি, এটাও একধরনের ঋণ তৈরির হাতিয়ার। আমাদেরকে রাজনৈতিক প্রসেসের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন এই ধরনের সম্মেলনে আালোচনার মূল দায়িত্ব থাকে সরকারের প্রতিনিধিদের সুতরাং দক্ষ প্রতিনিধিত্বের উপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে।

শরীফ জামিল বলেন, যদি জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কীভাবে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেই এনডিসি-০৩ জমা দেয়নি, তারাই আবার এনডিসি পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছে, বিষয়গুলো হাস্যকর। এই সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো, বিশেষ করে অর্থায়নের ক্ষেত্রে, কোনও তাৎপর্যই বহন করে না কারণ এর কোনও নির্দিষ্ট ভিত্তিরেখা নেই।

জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির আলোচনা এবারে সম্মেলন থেকে রাজনৈতিকভাবেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, জ্বালানি লবিষ্টদের প্রভাবে জলবায়ু আলোচনা এখন অধিকার ভিত্তিক না হয়ে কর্পোরেট ভিত্তিক হয়ে উঠেছে। পুরো প্রক্রিয়াটি চলে আমলাতান্ত্রিক ভাবে।

কাউসার রহমান বলেন, সময় এসেছে জলবায়ু নায্যতার উপর ভিত্তি করে জলবায়ু সম্মেলন প্রক্রিয়া সংস্কার করার।

মোতাহার হোসেন বলেন, আমাদের অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের চাহিদার উপর ভিত্তি করে একটি কাঠামোর দাবি অব্যাহত রাখতে হবে।

নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, আমাদের আগে নিজেদের জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করতে হবে।

মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, কার্বন ট্রেডিং থেকে প্রত্যাশিত লাভ কখনই আসবে না; এটি একটি অত্যান্ত দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া।

এম.এ. হাসান বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের সিংহভাগই আসে ঋণ হিসেবে, বিভিন্ন গবেষনা অনুযায়ী, জলবায়ু অর্থায়নের জন্য দেয়া প্রতি ৫ ডলারের বিপরীতে পরিশোধ করতে হচ্ছে ৭ ডলার, বাংলাদেশর মাথাপিছু জলবায়ু ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ৮০ ডলার। সুতরাং ঋণ ভিত্তিক পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে, এবং নিজস্ব অর্থায়ন বাড়াতে ব্লু-ইকেনোমির উপর গুরুত্ব দিতে হবে।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81