29384

09/07/2025

নুরাল পাগলার আস্তানায় হামলার ঘটনায় দুই দিনেও কোন গ্রেপ্তার নেই

নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী | Published: 2025-09-07 11:07:50

মৃত্যুর দুইদিন পেরিয়ে গেলেও রাসেলের পরিবার থেকে কোন মামলা হয়নি। সরকারী বাদী হয়ে ৩৫০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করলেও এই পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

নিহত রাসেল মোল্লা জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের জটু মিস্ত্রিপাড়ার আজাদ মোল্লার ছেলে। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। নিহত রাসেল মোল্লা মেটাল ইন্ডাস্ট্রির কাভার্ডভ্যান চালক ছিলেন।

শনিবার সন্ধ্যায় রাসেলের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, সবাই লাশ আসার অপেক্ষায় আছে। সমস্ত গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তার ছোট্ট কন্যা জানেই না তার বাবা মারা গেছে। বাবা নির্বাক হয়ে শুধু তাকিয় থাকে।

নিহতের বাবা ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আজাদ মোল্লা বলেন, ‘রাসেল ছোটবেলা থেকেই গোয়ালন্দ পাক দরবার শরীফে যাওয়া-আসা করত। দরবারকে সে ভালোবাসত। তার দাদাও ওই দরবারের ভক্ত ছিলেন। গতকাল রাসেল দরবারে গিয়ে সংঘর্ষে পড়েন। তাকে হাতুড়ি দিয়ে মুখে পেটানো হয়, পেছনে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। রক্তক্ষরণে আমার ছেলে মারা গেছে। আমার ছেলের কোনো দোষ ছিল না। আমি হত্যার বিচার চাই।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলার বিষয়ে এখনো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের লোকজন আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।'

উল্লেখ্য শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার আস্তানায় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভক্তদের সাথে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে দুই পক্ষের অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হয়। এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন রাসেল মোল্লা (২৮) নামের এক যুবক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একদল তৌহিদি জনতা আগে থেকে সংগঠিত হয়ে দরবার শরিফ ও তার বাড়িতে হামলা চালায়। শুরু হয় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। হামলায় অন্তত ৫০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে দরবারের ভক্তরা ছিলেন সংখ্যায় বেশি।

এসময় ইউএনওর গাড়ি এবং পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব মোতায়েনের পর।

ঘটনার সূত্রপাত নুরুল হকের কবর নিয়ে। সম্প্রতি ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যু হলে তাকে গোয়ালন্দ দরবার শরিফে মাটি থেকে উঁচু স্থানে কাবা শরিফের আদলে একটি কাঠামো বানিয়ে দাফন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরেই এলাকায় উত্তেজনা চলছিল।

স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে, একটি কমিটি গঠন করে এবং পরিবারকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়ও দেয়। কিন্তু শুক্রবারের জুমার পর তৌহিদি জনতা শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে এবং এরপর হামলায় অংশ নেয়।

প্রথম দফার হামলার পর দ্বিতীয় দফায় বাড়িতে গিয়ে কবর খুঁড়ে মরদেহ উত্তোলন করে তারা। পরে সেটি মহাসড়কের মোড়ে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে।

এসময় বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, নুরুল হক নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ ও ‘খোদা’ দাবি করতেন, যা তারা শরিয়তবিরোধী বলে মনে করেন। তাদের ভাষ্য, কবর পুড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তার ‘ভণ্ডামির অবসান’ হয়েছে।

নুরুল হকের ছেলে মেহেদী নূর জিলানী এর আগে গণমাধ্যমকে বলেন, 'বাবা শরিয়তের আলোকে ওছিয়ত অনুযায়ী দাফন করা হয়েছিল, ১২ ফুট নয়, ৩-৪ ফুট উঁচু হবে।' তিনি দাবি করেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম জানান, জুমার নামাজের পর তৌহিদি জনতার একটি অংশ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়, গাড়ি ভাঙচুর করে এবং পরবর্তীতে দরবার ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

প্রসঙ্গত, আশির দশকে নুরুল হক নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবি করে এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন। পরে চাপের মুখে এলাকা ছাড়লেও কিছু ভক্তসহ তিনি পুনরায় ফিরে এসে দরবার প্রতিষ্ঠা করেন।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81