29475

09/18/2025

ভারতে ‘মগজ-খেকো অ্যামিবা’র সংক্রমণ, মৃত্যু ১৯

বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2025-09-17 21:19:39

কেরালার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বর্তমানে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে, কারণ রাজ্যে প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোয়েনসেফালাইটিস (পিএএম) নামক মস্তিষ্কের সংক্রমণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি একটি বিরল ও মারাত্মক রোগ। যা নেগ্লেরিয়া ফাউলেরি নামেও পরিচিত। 'মস্তিষ্ক-খেকো অ্যামিবা'র কারণে এই রোগ হয়।

এই বছর কেরালায় ৬১টি সংক্রমণের ঘটনা নিশ্চিত হয়েছে, যার মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ এই পরিস্থিতিকে একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই সংক্রমণ, যা আগে কোঝিকোড় এবং মালাপ্পুরমের মতো কিছু নির্দিষ্ট জেলায় দেখা গিয়েছিল, এখন রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ছে।

আক্রান্তদের মধ্যে তিন মাস বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ৯১ বছর বয়সী বৃদ্ধও রয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছরের মতো এবার আমরা কোনো একটি নির্দিষ্ট জল উৎস থেকে সংক্রমণের ক্লাস্টার দেখছি না। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা আমাদের রোগতত্ত্ব সংক্রান্ত তদন্তকে জটিল করে তুলেছে।

পিএএম সংক্রমণ কীভাবে ছড়ায়?

কেরালা সরকারের একটি নথি অনুসারে, পিএএম সংক্রমণ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং এটি মস্তিষ্কের টিস্যু ধ্বংস করে।

এর ফলে মস্তিষ্কে গুরুতর ফোলা সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর মৃত্যু হয়। এই বিরল রোগটি সাধারণত সুস্থ শিশু, কিশোর এবং তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।

নথিতে বলা হয়েছে, উষ্ণ ও বদ্ধ মিঠা পানি যেমন পুকুর বা হ্রদ, এই মস্তিষ্ক-খেকো অ্যামিবার প্রধান বাহক। যখন কোনো ব্যক্তি সাঁতার কাটে বা ডুব দেয়, তখন এই অ্যামিবা নাকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে।

উল্লেখ্য, দূষিত পানি পান করলে এই রোগ হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

এই নথিটি আরও জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং গরমের কারণে মানুষ বিনোদনের জন্য বেশি করে জল ব্যবহার করায় এই রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। পিএএম একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায় না।

লক্ষণ এবং রোগ নির্ণয়

পিএএম-এর লক্ষণগুলো ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসের মতোই। মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব এবং বমি। যেহেতু রোগ নির্ণয় কঠিন, তাই এর মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি। প্রায়শই যখন রোগটি ধরা পড়ে, তখন রোগীর মস্তিষ্কে ফোলাভাব এতটাই বেড়ে যায় যে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

সাধারণত গরমের মাসগুলোতে এই রোগ বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে যারা উষ্ণ, বদ্ধ এবং মিঠা জলের উৎসগুলোতে সাঁতার, ডুব বা গোসল করেন, তাদের মধ্যে। লক্ষণগুলো এক থেকে নয় দিনের মধ্যে দেখা যেতে পারে এবং রোগের তীব্রতা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বা এক-দুই দিনের মধ্যেই দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব। কেরালা সরকার জনগণকে সতর্ক করে বলেছে, যদি কেউ বদ্ধ জলে যাওয়ার পর এই ধরনের কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে।

সংক্রমণ রোধে সতর্কতা

কেরালা সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগ সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে:

সাঁতার এড়িয়ে চলা

জনগণকে বদ্ধ ও অপরিশোধিত মিঠা জলের উৎস, যেমন পুকুর ও হ্রদে সাঁতার বা গোসল করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

সতর্কতা: সাঁতার কাটার সময় নাকে ক্লিপ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

কূপ এবং জলের ট্যাঙ্কগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার এবং ক্লোরিনযুক্ত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কেরালার স্বাস্থ্য বিভাগ ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের সাথে একসাথে দূষণের সম্ভাব্য উৎস শনাক্ত করতে পরিবেশগত নমুনা পরীক্ষা করছে।

২০০৬ সালে কেরালায় প্রথম পিএএম-এর ঘটনা ধরা পড়েছিল। গত বছর ৩৬টি কেস এবং ৯টি মৃত্যুর পর এই বছর সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের জন্য উদ্বেগের কারণ।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81