11/13/2025
শাহীন আবদুল বারী | Published: 2025-11-13 01:23:11
ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে বিএনপির সাথে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবি সংগঠন ও রাজপথের সঙ্গীদের ‘অযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে না করার’ আহ্বান জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপি জুলাই সনদের অঙ্গীকার রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল ভেবে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায় বা বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপকৌশল অবলম্বন করে, তা শেষ পর্যন্ত তাদের নিজেদের জন্যই রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।’
আজ বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সঙ্গীদের আহবান জানিয়ে বলেন, অযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সার্বিক তত্বাবধানে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন বক্তব্য দেন।
এছাড়াও, এই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ সহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
সভায় ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। পরে একটি সংগীত পরিবেশন করা হয়।
তারেক রহমান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সাথে অংশ নেয়া সকল সহযোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বর্তমান দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুমকি ধামকি না দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে জনগণের মুখোমুখি হোন। আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মনে রাখা দরকার নিজ নিজ দলীয় সমর্থক নেতাকর্মীদের বাইরেও কিন্তু অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় এক বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী রয়েছেন। এই লাখো কোটি অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা বাস্তবায়নের দিকে নজর দেয়া রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের সবার নৈতিক ও গুরুত্ত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, প্রচলিত রাজনীতির গুণগত সংস্কার চাইলে পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে জননিরাপত্তার বিষয়গুলো, জনগণের জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো রাজনীতিবিদদের কর্ম পরিকল্পনায় আরো গুরুত্ব পাওয়া দরকার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় আরও অধিক মনোযোগী হওয়া দরকার
তিনি আরও বলেন, মাসের পর মাস ধরে দেশের জনগণ দেখে আসছিলো অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় পার করে দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিকভাবে হওয়া এসব আলোচনা-সংলাপের প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, এসব আলোচনায় অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় সেই বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীর নিত্যদিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কি আলোচিত হয়েছিল? আমন্ত্রিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা করেছিলেন? কর্মসংস্থান, নারীর নিরাপত্তা এবং তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছিলো? দেশের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর স্বল্প আয়ের মানুষ কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের জীবন যুদ্ধের কথা কি রাজনীতিবিদদের আলোচনার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছিলো?
দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, গণভোটের আড়ালে পতিত, পরাজিত ও পলাতক অপশক্তিকে রাষ্ট্র রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিচ্ছে কিনা আমি এই ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহবান জানাই।
তিনি আরও বলেন, স্বল্প মেয়াদের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণ সকল ক্ষেত্রে সার্বিক সফলতা আশা করে না। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্বও নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করেছে। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি একটি রাজনৈতিক দলের আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করবে নাকি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারীর জাতীয় নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেবে।
রাজপথের আন্দোলনে বিএনপির পাশে থাকা সকল সঙ্গীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই কথাটি আমি এর আগেও একাধিকবার বলেছিলাম যে, উত্তর কোরিয়ার সংবিধানে লেখা রয়েছে ‘ডেমোক্রেটিক পিপল’স রিপাবলিক অফ কোরিয়া’। সংবিধানে লেখা থাকলেই সব কিছু নিশ্চিত হয়ে যায় না। আসলে সবার আগে প্রয়োজন রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে মোনাফেকী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতার। প্রয়োজন গণতান্ত্রিক মানসিকতা। সর্বোপরি প্রয়োজন দেশপ্রেম এবং জাতীয় ঐক্য।
তিনি বলেন, দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জনসমর্থিত দল হওয়া সত্ত্বেও ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার ব্যাপারে বিএনপি সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। এটি কথার কথা নয়, এটি প্রমাণিত সত্য। রাজনৈতিক ঐক্যমত কমিশনের প্রতিটি দফা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিএনপি অধিকাংশ পয়েন্টেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নানা শর্ত দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ একদিকে নির্বাচন না করেই রাষ্ট্রযন্ত্রে খবরদারির সুযোগ গ্রহণ করা অপরদিকে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগীরা গত কয়েকদিন খোদ রাজধানীতে যেভাবে আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে তাতে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির করণীয় সম্পর্কে এটি একটি সতর্কবার্তা। এটি এখন সবার কাছেই স্পষ্ট যে, ফাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অংশ নেয়া একটি দল ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুরতা থেকে নিজেদের বাঁচাতে ফ্যাসিবাদীদের ছাতার নীচে আশ্রয় নেয়ার কৌশল অবলম্বন করেছিল। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পরাজিত ও পলাতক স্বৈরাচার একইভাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে থাকা দলটির ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে কিনা এই ব্যাপারে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, যতটুকু জেনেছি, দেশে এবার ১ কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। আলু উৎপাদন করে কৃষকরা মনে হয় বিপাকে পড়েছেন। কারণ আলুর উৎপাদন খরচ এবং উৎপাদিত আলু হিমঘরে রাখতে প্রতি কেজি আলুর পেছনে খরচ হচ্ছে প্রায় ২৫ থেকে ২৭ টাকা। অথচ আলু চাষীরা এখন অর্ধেক দামেও উৎপাদিত আলু বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না। আলু চাষ করে এবার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছেন আলুচাষিরা।
অপরদিকে আমরা যদি দেখি দুয়েকটি রাজনৈতিক দলের আবদার মেটাতে অকারণে কথিত গণভোট করতে হলেও রাষ্ট্রকে প্রায় সমপরিমান টাকা গচ্চা দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানের মুখোমুখি এইসব আলু চাষিদের কাছে এই সময়ে ‘গণভোটে’র চেয়ে আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া বেশি গুরুত্ত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। দেশবাসীর ভাবনার জন্য প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলাম।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি দেখছি দেশে চাহিদার চেয়েও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনের সক্ষমতা কৃষকদের রয়েছে। তারা যথেষ্ট পরিমান পেঁয়াজ উৎপাদনও করছেন। তবে দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় একদিকে যেমন অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে তেমনি চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর পেঁয়াজ আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়।
তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়, জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কথিত ‘গণভোট উৎপাদনের’ চেয়ে সেই টাকায় পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপন কৃষকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ভুক্তভোগী কৃষকদের বিষয়ে কথা বলার জায়গা কোথায়?
‘কর্মহীন মানুষের কাছে হাজার কোটি টাকার গণভোটের চেয়ে চাকরি বেশি জরুরি
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, ‘নারীর কর্মঘন্টা ৫ ঘন্টা করবেন অথচ ৮ ঘন্টার টাকাই দিবেন। তাহলে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার এই বাড়তি টাকা কে দেবে?
তিনি বলেন, একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল কথায় কথায় নারী জনগোষ্ঠীকে ধর্মীয় নানা অনুশাসনের বয়ান দিলেও ক্ষমতায় যেতে সেই নারীদের ভোট টানতে মালিকপক্ষের উপর অযাচিত বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নতুন করে আরেকটি বিপর্যয় নেমে আসবে। এটি জনগণের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না।
তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে দেশে গার্মেন্টস শিল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। এতসংখ্যক নারী যদি আট ঘন্টার পরিবর্তে ৫ ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য হয় তাহলে তাদের বাকি কর্মঘন্টার টাকা কে দেবে?
তিনি বলেন, নারীর কর্মঘন্টা কমানোর কথা বলে চাকুরীদাতাদেরকে কৌশলে নারীদের চাকুরী না দেয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে কি? জামাত নেতার এই অপরিপক্ক ও অযাচিত বক্তব্য দেশের নারী সমাজের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এমনিতেই নানা কারণে মানুষ এখন কর্মহীন হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মজীবী নারীদের মনে ছড়িয়ে পড়া চাকুরী সংকোচনের আতঙ্ক কাটানো এই মুহূর্তে কথিত ‘গণ ভোটে’র চেয়ে বেশি দরকার বলে আমি মনে করি।
তারেক রহমান বলেন, দেশে বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে বলা হয়েছে দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৮ শতাংশ। আরো ১৮ শতাংশ মানুষ যেকোনো সময় গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। দেশে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছে। দেশে উচ্চমাধ্যমিক এবং গ্রাজুয়েট ডিগ্রিধারী প্রতি ৫ জনের ১ জন বেকার। সম্প্রতি বিজিএমই জানিয়েছে, গত ১৪ মাসে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে কমপক্ষে ৩৫৩টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এক লাখ ২০ হাজার মতো শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কর্মহীন এইসব মানুষগুলোর কাছে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কথিত ‘গণভোটে’র চাইতে একটি চাকুরী কি বেশি জরুরি নয়? আপনারা কি বলেন? দুর্ভাগ্যবশত, আমরা মাসের পর মাস রাষ্ট্র মেরামতের নানা উপাদান নিয়ে আলোচনা করলেও এই রাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ বেকারদের কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনার জন্য একটি দফাও উত্থাপন করিনি।
দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এত সংস্কার কমিটি হলো অথচ একটি শিক্ষা সংস্কার কমিটি করা হলো না। শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যয়ের একটি দিক সম্পর্কে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার ছিল সর্বনিম্ন। অপরদিকে পরীক্ষায় দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। দুঃশ্চিন্তার বিষয় হলো, সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজী বিষয়ে পাস করতে পারেনি। ইংরেজির পর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী তথ্য প্রযুক্তি অর্থাৎ আইসিটি-তে অকৃতকার্য হয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ইংরেজি এবং আইসিটি’র মতো এমন গুরুত্ত্বপূর্ণ দু’টি বিষয়ে এভাবে অকৃতকার্য হতে থাকলে বর্তমানে ‘এআই’ যুগের এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সম্মান এবং মর্যাদার সঙ্গে টিকে থাকা সম্ভব কিনা এই প্রশ্নটিও রাখলাম।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি বর্তমান গ্লোবাল ভিলেজে শিক্ষা দীক্ষায় টিকে থাকতে হলে আমাদেরকে ‘তথাকথিত গণভোট’ নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে শিক্ষা সংস্কার নিয়ে গবেষণা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে নাজুক হয়ে উঠছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিও আশানুরূপ নয়। এই মুহুর্তে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির প্রধান ভরসা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘গত কয়েক মাসে রপ্তানি খাতে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজ এবং বিদেশী উন্নয়ন সহযোগীরাও এখন বলছেন, নানা সংকটে ঝিমিয়ে পড়া দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে সচল করতে হলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিৎ যত দ্রুত সম্ভব জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি স্থিতিশীল সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। অন্যথায় আরও অনেক বিপর্যয় নেমে আসবে বাংলাদেশের উপর।
তিনি বলেন, পলাতক লুটেরা বাহিনীর বেপরোয়া লুটপাটের পর দেশের ব্যাংকিং সেক্টর এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দেশের কমপক্ষে ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে যা কোনভাবেই কাম্য নয়। জনগণকে ভয় দেখাতে চাই না তবে আমাদেরকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
নিরাপদ সড়ক এখনও অধরা
তারেক রহমান বলেন, দেশে কিন্তু শুধু কোটা সংস্কার নয় নিরাপদ সড়কের জন্যও তুমুল আন্দোলন হয়েছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গত এক বছরে দেশে সড়ক পথে কমপক্ষে সাত হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী, শিশু ও পথচারী। আহত হয়েছেন ১৩ হাজার মানুষ। বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হতাহতদের তালিকায় বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে শতশত দফা নিয়ে সংলাপ হলেও সড়কে নিরাপত্তার বিষয়টি কি আলোচনায় জায়গা করে নিতে পেরেছিলো?
পরিশেষে তিনি বলেন, এইসব প্রশ্নগুলো কাউকে দোষারোপ করার জন্য নয়। বরং একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি কিংবা আমার নিজের কাছেই আমার প্ৰশ্ন আমাদের রাজনীতি তাহলে কাদের জন্য? দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার কিছু প্রশ্ন, কিছু উপলব্ধির কথা আজ আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। এজন্য আজ আমি আপনাদের কাছ থেকে একটু অতিরিক্ত সময় চেয়ে নিলাম। আশা করি বিরক্ত হবেন না। সবশেষে আমার বলা এসব কথায় কোন ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81