05/04/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2023-08-23 15:19:58
রাজধানী ঢাকার প্রানকেন্দ্র হাইকোর্টের পাশে মোঘল আমল ও ঢাকার নবাবদের নৈসর্গিক পরিকল্পনার বাস্তব পটভূমি হচ্ছে রমনা পার্ক। ফরাসি ভাষার রমনা শব্দটির অর্থ 'সবুজ ঘাষে ঘেরা চত্বর'।
সবুজে ঘেরা গাছপালা ও দৃষ্টিনন্দন একটি লেকের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা রমনা পার্ক রাজধানী বাসীর 'ফুসফুস'।
হাওয়ার কাঁপনে লেকের স্বচ্ছ জলে টলমল ঢেউ। ইচ্ছে হলেই ব্রিজ পেরিয়ে যাওয়া যাবে এপার-ওপার। চারপাশে সবুজের হাতছানিতে কাঠের ডেকে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যাবে জলের শোভা। সঙ্গে রঙিন আলোর ঝলকানি। এভাবেই নতুনরূপে সেজেছে রাজধানীর রমনা পার্ক। ‘ঢাকার ফুসফুস’ খ্যাত সাত দশক বয়সী এ পার্কের লেক ঘিরে সৌন্দর্য বর্ধনের এই পরিকল্পনা বাস্তবে পরিনত হয়েছে।
রমনার কৃত্রিম লেকের নান্দনিকতার সঙ্গে মিল রেখে ১৫ ফুট প্রস্থ মাইক্রো পাইল আর সিসি ফেয়ার ফেস ফ্রেম, স্টিল জয়েন্ট দিয়ে এমএস পাইপের মাধ্যমে দুটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। লেকের মাঝামাঝিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টির লক্ষ্যে পানিতে ডুবন্ত একশ ফুট ডায়াগ্রামের ৮ ইঞ্চি পুরু রিটেইনিং ওয়ালের ভেতর মাটি ভরাট ও বনায়ন করা হয়েছে।
অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি নৈসর্গিক রমনা পার্কটি গনপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের সার্বিক তত্বাবধানে আধুনিকায়নের কাজ শেষ হওয়ার পর অপরূপ সাজে সেজেছে রমনা পার্ক। প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমনপিপাসু লোকের পদচারনায় সকালে প্রাতরাশ থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত জনসমাগম থাকে।
উক্ত পার্কটির অভ্যন্তরে ভ্রমন পিপাসুদের কথা চিন্তা করে একটি রেস্তোরাঁ চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মূলত একটি স্ন্যাকস বার চালু করার জন্য একটি দরপত্র আহবান করা হয়। উক্ত দরপত্রে অংশগ্রহণকারী চারটি প্রতিষ্ঠানকে 'রেসপনসিভ' হিসেবে বিবেচনা করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি।
প্রতিষ্ঠান চারটি হচ্ছে হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনাল ৪ কোটি ৭৬ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৮০ টাকা, ইউরো এশিয়ান ৩ কোটি ৩ লক্ষ টাকা, হোটেল সার্বিক ইন্টারন্যাশনাল ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৮ হাজার টাকা এবং কিভাসান নামক ১টি প্রতিষ্ঠান ৯৭ লক্ষ ১৫ হাজার ১৬০ টাকা দর প্রস্তাব করে।
নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতা হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনালকে বরাদ্দ প্রদান করার কথা। কিন্তু নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, দরপত্রে অংশগ্রহণকারী হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনাল দরপত্র পর্যালোচনা করে দেখেছে এত বেশী মূল্যে বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। তাই সর্বোচ্চ দরদাতার বরাদ্দ নিতে অনীহা প্রকাশ করে হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনাল।
নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতা যদি বরাদ্দ না নেয়, তাহলে ২য় দরদাতাকে বরাদ্দ দেয়ার বিধান রয়েছে। তাই সাত সদস্য বিশিষ্ট দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ২য় সর্বোচ্চ দরদাতা ইউরো এশিয়ানকে বরাদ্দ প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। রমনা পার্কের মধ্যে মানসম্মত একটি স্ন্যাকস বার এখন ভ্রমনপিপাসুদের চাহিদা।
অপেক্ষাকৃত কম দরদাতাদের কেউ কেউ এনিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টির পায়তারা করছে। বিশ্বস্ত সূত্র এও নিশ্চিত করেছে যে হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনাল দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির নিকট বরাদ্দ না নেওয়ার কথা উল্লেখ করে ১টি চিঠিও দিয়েছে।
রমনা পার্কটি রাজধানী ঢাকাবাসীর যেহেতু ফুসফুস অতএব উক্ত পার্কে মানসম্মত ১টি স্ন্যাকস বার গড়ে উঠলে ভ্রমন পিপাসুদের জন্য হালকা খাবার গ্রহন সহজ হতো।
১৯০৮ সালের দিকে রমনাসহ ঢাকা শহরে নিসর্গ পরিকল্পনার কাজ শুরু করেন লন্ডনের কিউ বোটানিক গার্ডেনের অন্যতম কর্মী রবার্ট লুইস প্রাউডলক। তার তত্ত্বাবধানেই গড়ে ওঠে রমনাকেন্দ্রিক নিসর্গশোভা। তিনি বিশ্বের অন্যান্য উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষগুলো ঢাকায় এনে রোপণের ব্যবস্থা করেন।
রমনা পার্ক অবশ্য অনেক পরে ১৯৫২ সালের দিকে হয়েছে। ৬৮ দশমিক ৫ একর জমি ও ৮ দশমিক ৭৬ একরের লেক নিয়ে পার্কটি গড়ে ওঠে। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসের অন্যতম নির্মাতা প্রয়াত ফজলুল করিমের হাতেই এর সূচনা।
নানা প্রজাতির বৃক্ষশোভা ছাড়াও পার্কের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে শিশুদের বিনোদন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সকাল-বিকেল এখানে হাঁটাহাঁটি করতে আসেন। পার্কের বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সুদীর্ঘ সময়ের ফসল। বৈচিত্র্য থাকায় সারা বছরই কিছু না কিছু ফুল থাকে। প্রায় পাঁচ হাজার গাছ আছে এই পার্কে।
গনপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারনেই আজ রমনা পার্কটি অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন ও নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিনত হচ্ছে। রাজধানীর সকল শ্রেণীর মানুষ ও শিশুদের ভ্রমন ও আনন্দ উপভোগের জন্য প্রস্তুত রমনা পার্ক।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81