12/22/2025
S M Fatin Shadab | Published: 2025-12-22 12:59:20
সরকারি বা করপোরেট সহায়তা নয়, গণচাঁদা তুলেই নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংস্কার করার ঘোষণা দিয়েছে উদীচী। গতকাল রোববার বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উদীচী কখনও সরকারি অনুদাননির্ভর ছিল না। সংগঠনের প্রধান শক্তি সাধারণ মানুষ। তাদের কাছ থেকে গণচাঁদা সংগ্রহ করেই উদীচীর অধিকাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দেশে ও বিদেশে ছড়িয়ে থাকা হাজারো শিল্পী-কর্মী নিজেদের উপার্জনের অংশ দিয়ে সংগঠন চালিয়ে আসছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংস্কারেও তারাই মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন।
উদীচীর নাম ব্যবহার করে কেউ আর্থিক সহায়তা চাইলে তাতে প্রতারিত হওয়ার দায় সংগঠন নেবে না বলেও বিবৃতিতে সতর্ক করা হয়।
উদীচীর নেতারা জানান, ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানট ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর থেকেই উদীচীর ওপর সরাসরি হুমকি আসতে থাকে। সামাজিক মাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্ট ছড়ানো হয়।
তারা অভিযোগ করেন, সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার বা প্রশাসন কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলেই গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বিনা বাধায় উদীচী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে সংগঠনের ৫৭ বছরের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, বাদ্যযন্ত্র ও আসবাব ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে সংগঠনটি।
ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গতকাল বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনটি। এতে বলা হয়, ছায়ানট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয় এবং সব প্রতিকূলতার মধ্যেও সাংস্কৃতিক চর্চা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছে তারা।
গত ১৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে হামলা চালিয়ে ছয়তলা ভবনের প্রায় প্রতিটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়া হয়। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী একটি মহল এই হামলা চালিয়েছে।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বখ্যাত সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর প্রপৌত্র ও মাইহার ঘরানার শিল্পী সিরাজ আলী খান। গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, শিল্পী, সংগীত ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে আর ফিরব না।
ভারতে বসবাসরত এই সংগীতজ্ঞ বলেন, জীবনে প্রথমবার প্রাণনাশের ভয় পেয়েছি। একজন ভারতীয় শিল্পী হিসেবে নিজের পরিচয়ই আমাকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে– এটা কল্পনাও করিনি। তাঁর মতে, ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনা শুধু স্থাপনা ভাঙচুর নয়, বরং সংস্কৃতি ও যৌথ ঐতিহ্যের ওপর আঘাত।
গত শুক্রবার রাজধানীর ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা ছিল সিরাজ আলী খানের। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে এ প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। বিজয় দিবসের দিন তিনি ঢাকায় আসেন। এসব ঘটনার জেরে জরুরি ফ্লাইটে ভারতে ফিরে যান।
সিরাজ আলী খান স্পষ্ট করেন, এই বক্তব্য বাংলাদেশ বা এখানকার সংস্কৃতিমনস্ক মানুষের বিরুদ্ধে নয়, বরং সেই উন্মত্ত মানসিকতার বিরুদ্ধে, যারা সংস্কৃতি ও জ্ঞানের প্রতিষ্ঠান আক্রমণ করে। সংলাপ, প্রজ্ঞা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মানই শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81