December 15, 2025, 2:10 am


মো. জামাল হোসেন

Published:
2025-12-14 18:26:20 BdST

বেনাপোল রেলপথে পণ্য আমদানিতে ধস


বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্যের প্রধান প্রবেশদ্বার বেনাপোল রেলপথে আমদানিতে নেমেছে নজিরবিহীন ধস। বেনাপোল-পেট্রাপোল রেল স্টেশন দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি। গত ছয় মাস ধরে আসেনি কোনো খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী। ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা ও উৎকণ্ঠা। বাড়ছে অনিশ্চয়তা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে এই রেলরুটে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ২৯ হাজার মেট্রিক টন, যা গত দশ বছরে সর্বোচ্চ পতন। এতে কমছে সরকারের রাজস্ব আয়। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও রেলপথে আমদানি বাড়বে এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভারতীয় রেলওয়ের রেক সরবরাহ সংকট, বেনাপোল স্টেশনের দুর্বল অবকাঠামো, আধুনিক যন্ত্রাংশের অভাব, শ্রমিক সংকট এবং কাস্টমস, রেল ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতাকে এই ধসের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলপথে আমদানির পরিমাণ ছিল এক লাখ সাত হাজার ২০০ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে ৭৮ হাজার ২০০ মেট্রিক টনে। এ পতনকে চরম উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বর্তমানে ক্লিংকার, স্টোনচিপ, কয়লা, খাদ্যশস্য, সিমেন্টের কাঁচামাল, তুলা, ট্রাক্টর এবং গার্মেন্ট উপকরণ রেলরুটে আসা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। গত অর্থ বছরের তুলনায় এই বছর প্রায় ২৯ হাজার মেট্রিকটন পণ্য আমদানি কম হয়েছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, ‘আগে প্রতি সপ্তাহে চার থেকে ছয়টি রেক পাওয়া যেত। এখন কোনো কোনো সপ্তাহে একটি রেকও আসে না। এমন অনিশ্চয়তার ওপর ব্যবসা চলে না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে সড়কপথে ঝুঁকছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় রেলের রেক সময়মতো না আসা আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ। দিন ধরে পণ্য আটকে থাকে, লোকসান গুণতে হয়।’

একই অভিযোগ আমদানিকারক মো. সাইফুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘গত ১২ বছর ধরে রেলরুটে পণ্য আনছি। রেলরুটে যে সুবিধা আছে বাল্ক কার্গো সস্তায় আনা যায় সেটা আমরা পাই না। বেনাপোল রেলস্টেশনের অবকাঠামো পুরনো, ফর্কলিফট কম, শ্রমিক সংকট সবসময়ই থাকে। ফলে, একটি রেক খালাস করতেই দিন শেষ হয়ে যায়। ভারতের পেট্রাপোলে যে রেক দুই ঘণ্টায় খালাস হয়, তা বেনাপোলে লাগে আট থেকে দশ ঘণ্টা। এতে ব্যবসার হিসাব মেলে না।’

বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেলে পণ্য আমদানিতে স্বল্প সময়ে কম খরচে তারা লাভবান হতো। সরকারও রাজস্ব পেতো অনেক। এই বন্দর দুটি দিয়ে রেলে আমদানি হতো খাদ্যপণ্য, কাঁচামাল, কটনসহ বিভিন্ন পণ্য ও ট্রাক্টর।

তারা আরও বলেন, ভিসা জটিলতাসহ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে গত ছয় মাস ধরে বেনাপোল-পেট্রাপোল রেল স্টেশন দিয়ে আসেনি কোনো খাদ্যপণ্য বা কাঁচামাল। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সরকার, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, ‘রেলপথই হচ্ছে দেশের সবচেয়ে সস্তা পরিবহন ব্যবস্থা। এই রুটে আমদানি কমে গেলে পরিবহন খরচ বাড়বে, আর তা সরাসরি বাজারে পণ্যের দামের ওপর প্রভাব ফেলবে।’

এই অবস্থায় ভারতীয় রেলের সঙ্গে স্থায়ী রেক সরবরাহ চুক্তি, আধুনিক রেলটার্মিনাল নির্মাণ, দ্রুত খালাস ব্যবস্থা এবং কাস্টমস, রেল ও বন্দর তিনপক্ষের সমন্বয় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

বেনাপোল রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, ‘গত ছয় মাসে ট্রেনে চাল, গম, ভুট্রা, মরিচ, পেঁয়াজ, আলুসহ কোনো খাদ্যপণ্য আসেনি। রেক সংকট আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয়। ভারতীয় রেলওয়ে নিয়মিত রেক সরবরাহ না করায় আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। তবে আগামীতে সমস্যা কাটলে রেলে পণ্য আমদানি বাড়ার আশা করছে রেল কর্তৃপক্ষ।’

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামিম হোসেন বলেন, ‘রেলপথে আমদানি কমে যাওয়া আমাদের জন্যও উদ্বেগজনক। রেলপথ দ্রুত নিরাপদ এবং বাল্ক পরিবহনে লাভজনক হওয়ার কথা। কিন্তু রেলের সমস্যা, ইয়ার্ড সংকট ও ভারতীয় রেলওয়ের অনিয়মিত রেক সরবরাহের কারণে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। আমরা রেলবিভাগ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছি যাতে খালাসের সময় কমে, কাগজপত্রের জটিলতা দূর হয়।’

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.