April 27, 2024, 10:44 pm


বিশেষ প্রতবিদেক

Published:
2022-08-22 05:04:59 BdST

‘’মানবাধিকার সংগঠনের আড়ালে বীমা ব্যবসা’’অনুদানের নামে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। পর্ব-১


বিশেষ প্রতিবেদকঃ বিশব্যাপী মানবাধিকার সংস্থা ও মানবিক বাজার নামে একটি সেবামূলক সংস্থা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহজ সরল মানুষের নিকট থেকে অনুদানের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশ ডোনার সোসাইটি এস্টাব্লিশমেন্ট প্লান (বিডিএসই) (বাংলাদেশ অনুদানকারী সমাজ প্রতিষ্ঠা পরিকল্পনা) নামে সহজ সরল মানুষের নিকট থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এদের মূল স্লোগান হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষনা বাস্তবায়ন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এদের প্রগতি স্মরনি মধ্য বাড্ডা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে এক শ্রেনির পোশাক পরিচ্ছদে দেখতে আলেম হলেও বাস্তবিক অর্থে এরা সমাজের সহজ সরল সাধারন মানুষকে অনুদানের প্রলুদ্ধ করে সংগঠনের সদস্য পদের নামে নূন্যতম ৫ হাজার থেকে শুরু করে সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সংখ্যক টাকা হাতিয়ে নেয়। এদের মূল স্লোগান হচ্ছে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে সমাজে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে সেই আদলে সমাজে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এদের সদস্য সংগ্রহের জন্য সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এদের এজেন্ট তাদের মাধ্যমে সহজ সরল মানুষদের অফিসে নিয়ে আসা। সদস্য সংগ্রহ থেকে অনুদানের নামে যে টাকা সংগ্রহ করে তার একটি অংশ এজেন্ট’কে কমিশন হিসেবে প্রদান করে থাকে।সাধারন মানুষদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে অনুদানকারী সমাজ প্রতিষ্ঠা নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। কাগজে কলমে সাধারন সদস্যদের কিছু প্রকল্প দেখানো হলেও বাস্তবে এর কোনো সত্যতা খুজে পাওয়া যায়নি। যেমন প্রকল্পগুলো হলোঃ

১/ সমাজের ধর্মীয়, শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গুলোকে নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা প্রদান।

২/ শিক্ষার হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে মানবিক বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র চালু করা।

৩/ গরিব অসহায় সদস্যদের লাশ দাফন।

৪/ ঋণগ্রস্ত থাকলে পর্যায়ক্রমে ঋন থেকে মুক্তির ব্যবস্থা।

৫/ মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনকে সহায়তা করা।

৬। নারী-শিশু নির্যাতনে মিথ্যা মামলায় অসহায় লোকদের আইনী সহযোগিতা।

৭/ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানবিক বাজার প্রতিষ্ঠা করা। যার মাধ্যমে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে নিত্য পন্য সরবরাহ করা।

৮/ বাল্য-বিবাহ প্রতিরোধে ও গরিব ছেলে মেয়েদের যৌতুকবিহীন বিবাহের ব্যবস্থা।

৯/ মানবিক স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প চালু করা।

১০/ সেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী চালু, রক্তদান ও ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা।

১১/ বিশ্ব্যব্যাপী ধর্মীয় রিসার্চ  সেন্টার চালু।

১২/ দেশব্যাপী মানবাধিকার কমিটি গঠন ও যাকাত কালেকশন ও বন্টন।

১৩/ বিশ্বনবী (সাঃ) হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা স্থাপন করা।

 এদের অফিসে দ্য ফিন্যান্স টু’ডের অনুসন্ধানী টিম গিয়ে এর কোন দৃশ্যমান প্রকল্পের অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া যায়নি। সারা অফিস জুড়ে রয়েছে এদের এজেন্ট। এজেন্টগন তাদের কাঙ্ক্ষিত সহজ সরল লোকদের এনে কোম্পানীর প্রেসিডেন্ট মির্জা আব্দুল কাদেরের রুমে নিয়ে গিয়ে মগজ ধোলাই করে। এরা প্রত্যেকেই কমিশন এজেন্ট। এক সময়ের জীবন বীমা খাতে কাজ করা মির্জা আব্দুল কাদের সবাইকে বীমা খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রলুদ্ধ করে। একটি বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানীর এজেন্ট এই কাদের। মূলত বীমা করানোর জন্যই কৌশল হিসেবে মানবাধিকার সংস্থার ব্যানারে সুচতুর সহজ সরল ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আস্থাশীল ব্যক্তিবর্গকে মানবাধিকারের নামে টার্গেট করে কাজ করে যাচ্ছে এই চক্রটি। এ চক্রের সদস্যদের সাথে সংযুক্ত রয়েছে ভুঁইফোড় কিছু নামধারী সাংবাদিক। প্রতারনা করাই এদের মূল পেশা। অনেক ভুক্তভোগী ইতোমধ্যে এদের ব্যাপারে অভিযোগ এনেছে।

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে যে সমস্ত প্রকল্প হাতে নিয়েছে তার কি কি বাস্তবিক দৃশ্যমান আছে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘’এগুলো আমাদের  পরিকল্পনায় রয়েছে। সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মির্জা আব্দুল কাদের ও সাধারন সম্পাদক মাহফুজুর রহমান নিকট প্রতিষ্ঠানের দৃশ্যমান প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। জাতীয় প্রেস ক্লাবে একজন দুঃস্থ সদস্যের মাঝে এক লাখ টাকা একটি চেক প্রদান অনুষ্ঠান ঘটা করে আয়োজন করে তাদের কার্যক্রমকে দৃশ্যমান হিসেবে প্রচার করে থাকে, এটা মূলত আইওয়াশ ‘’

উভয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘’প্রকল্প আমাদের পরিকল্পনাধীন।‘’ সাধারন প্রশ্ন জাগে যে অনুদান সাধারনরত ঐ সকল ব্যক্তিবর্গই দান করে থাকে যারা সমাজে বিত্তশালী ও দানশীল। অথচ এই সংগঠন তার সদস্যদের জীবনের আর্থিক ঝুঁকি মোকাবেলায় জীবন বীমা কোম্পানীর অধীনে কেন গ্রুপ বীমা করতে আসবে?

এছাড়া প্রসপেক্টাসে তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে বলা আছে যে তাদের দুঃস্থ, অসহায় সদস্যদের লাশদাফন ও ঋনগ্রস্থ থাকলে পর্যায়ক্রমে ঋণমুক্তির ব্যবস্থা।  বিষয়টি সাংঘর্ষিক। মূলত এদের মূল লক্ষ্য সমাজের সহজ সরল ও ধার্মিক লোকদের নিকট থেকে এজেন্টের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। দ্য ফিন্যান্স টু’ডে এই প্রতিবেদন তৈরির আরও অন্তত ৭-৮ মাস পূর্বে এই সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার সদস্যের তালিকা পেয়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা আরও কয়েক গুন। দুপুর বেলা সংগঠনের অফিসে সকল সদস্যদের ডাল, ভাত, সবজি দ্বারা মানবিক খাবারের ব্যবস্থা রেখেছে। অফিসে আগত সকল সদস্যদের দুপুরে মানবিক খাবার দ্বারা আপ্যায়িত করা হয়। মূলত এটাই এদের গ্রাহক ধরার কৌশল। এ সংগঠন সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন পরবর্তী পর্বে প্রকাশিত হবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from Crime & Corruption