April 19, 2024, 9:29 pm


সামিউর রহমান লিপু

Published:
2020-06-25 16:26:18 BdST

ভারত-চীন সমঝোতা এবং শেখ হাসিনার কূটনীতি


শেষ পর্যন্ত চীনের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতেই হলো ভারতকে। একে তো কোভিড-১৯ এ নাস্তানাবুদ, অন্যদিকে এই সময়ে বৃহৎ প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে নতুন করে যুদ্ধ করা বা উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার নীতি যে তাঁদের জন্য লাভজনক হবেনা এটা বুঝতে ভারত খুব বেশি সময় নেয়নি।

যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হম্বিতম্বি কম করেননি। চীনকে তিনি দেখে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু এগুলো যে সবই রাজনৈতিক বাগড়ম্বার ছাড়া আর কিছু না তা বুঝতে সময় লাগল না।

আজ দুই দেশ এক দীর্ঘ বৈঠকের পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সীমান্ত থেকে তাঁরা সৈন্য প্রত্যাহার করবে এবং উত্তেজনা প্রশমন করবে। দুই দেশের পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে যে, তাঁরা শান্তিপূর্ণ এবং আন্তরিক পরিবেশে বৈঠক করেছে এবং ভবিষ্যতে যেন এরকম উত্তেজনা না হয় সেজন্য তাঁরা দুই পক্ষই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবে।

চীনের সঙ্গে দ্রুত বিরোধ মিটিয়ে ফেলার মধ্য দিয়ে ভারত একটি বিষয় প্রমাণ করলো যে, চীন পাকিস্তান নয়, চীনের সঙ্গে চাইলেই যুদ্ধ করা যায়না। অথচ দীর্ঘদিন ধরেই এরকম একটি কূটনৈতিক ধারণা দেওয়া হচ্ছিল যে, চীন এবং ভারতের মধ্যে তীব্র বৈরিতা রয়েছে। চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে ভারত নাখোশ হবে।

বাংলাদেশেও অনেক কূটনৈতিক পণ্ডিত এরকম একটি ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আর তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন চীন এবং ভারত উভয় দেশের সাথেই সমানতালে সম্পর্ক উন্নয়নের কূটনীতি নিয়ে এগোচ্ছিলেন তখন অনেকে হায় হায় করে উঠেছিলেন, অনেকে বলেছিলেন এটা ভুল নীতি, এর জন্যে মাশুল দিতে হবে। বাংলাদেশে ছোটখাটো কিছু হলেই অনেক কূটনীতিককে বলতে শোনা যায় যে, চীনের সঙ্গে বেশি মাখামাখির কারণেই ভারত বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। ভারত মুখ ফিরিয়ে নিলে অনেক সমস্যাই হবে।

কিন্তু শেখ হাসিনার কূটনীতির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে দেশপ্রেম, দেশের ভালো, দেশের মঙ্গল। সত্যিকার অর্থেই তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে কূটনৈতিক নীতি, সেই নীতিকে ধারণ করেন, লালন করেন। সেই নীতির মূল কথা হলো সকলের সঙ্গে মিত্রতা, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। 

শেখ হাসিনা খুব ভালো করেই জানেন যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব লাগবে, সহযোগিতা লাগবে। এজন্য চীনের সঙ্গে দুরত্বের নীতি তিনি পরিত্যাগ করেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসেছিলেন, এখন বাংলাদেশে যে উন্নয়নগুলো হচ্ছে তাঁর সবগুলোতেই চীন কোন না কোন ভাবে যুক্ত। আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটাও জানেন যে, বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু হলো ভারত, বিশেষ করে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যে অবদান সেই অবদানকে আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা কখনো অস্বীকৃতি জানান না।

শেখ হাসিনা যতবারই ক্ষমতায় এসেছেন ততবারই ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান করার উদ্যোগ নিয়েছেন, সফলও হয়েছেন। 

প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে তিনি পার্বত্য শান্তিচুক্তি করেছিলেন, গঙ্গার পানি চুক্তি করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে টানা তিনবারের মতো ক্ষমতায় রয়েছেন এবং এই সময়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ছিটমহল সমস্যার সমাধান ছিল এক ঐতিহাসিক সাফল্য। একইসাথে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ট্রানজিট সুবিধা তৈরি করা, সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তিসহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান তিনি করেছিলেন।

শেখ হাসিনার যে অবদানের জন্য ভারত সবসময় শেখ হাসিনাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে তা হল জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের সাথে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি। বাংলাদেশের ভূমি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য ব্যবহার করা হতো, এটা নিয়ে কোন লুকোচুরি নেই। কিন্তু শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে এটা বন্ধ করেন। জঙ্গিবাদ আর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে কোন আপোস নয় নীতিতে অটল থাকেন। 

ভারত খুব ভালো করেই জানে যে, আজকে যদি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা না থাকেন, এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারও যদি থাকে, তাহলে এভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য বাংলাদেশের দরজা বন্ধ করে অন্য কেউ দিবে কিনা সে ব্যাপারে ভারতের মধ্যেও সংশয় রয়েছে। এই বিবেচনা থেকে শেখ হাসিনাকে সবসময় সম্মান এবং শ্রদ্ধা করে চলার নীতি গ্রহণ করেছে মোদি সরকার। 

কংগ্রেসের হাত থেকে মোদি সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর অনেকে মনে করেছিল যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কের টানাপোড়েন হবে। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে শেখ হাসিনার আদর্শিক অবস্থানই কট্টরপন্থি বিজেপি সরকারকেও শেখ হাসিনার প্রতি অনুরক্ত করেছে। 

আর এখন ভারত-চীনের এই সমাঝোতার মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দূরদৃষ্টিতার আরেকটি প্রমাণ হলো। বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে চীন যে একটি বড় ফ্যাক্টর এবং চীনকে উপেক্ষা করে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে অসম্ভব সেটা প্রমাণিত হলো ভারত-চীনের এই সমাঝোতার মধ্যে দিয়ে।

আর এর মধ্য দিয়ে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হলো যে, শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, তাঁর কূটনৈতিক সাফল্য এবং তাঁর প্রজ্ঞা। কারণ তিনিই প্রথমে বুঝেছিলেন যে উন্নয়নের জন্য চীন-ভারত দুই দেশকেই দরকার।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা