April 18, 2024, 8:56 pm


অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

Published:
2022-09-07 01:41:08 BdST

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরে দূর্নীতির কালো থাবা পর্ব-২ সওজ এর সংরক্ষণ ও সংগ্রহ শাখায় ভুয়া টেন্ডারের অভিযোগ


অনুসন্ধানী প্রতিবেদনঃ  সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সংরক্ষণ ও সংগ্রহ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হকের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক দূর্নীতির অভিযোগ। ঢাকা অফিসে যোগদানের পর অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিভাগের সকল শাখা অফিসকে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই অভিযোগ করেন বিভাগীয় তদন্তের নামে চলছে প্রহসন।সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে কর্মজীবনের শুরু থেকে দূর্নীতির প্রশিক্ষক হয়ে উঠেন এক সময়ের শিক্ষকতা করা শামীমুল হক।

সড়ক ও জনপদের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ডিভিশনে (স্টোর ডিভিশনে) যোগদানের পর থেকেই দূর্নীতির মহা উৎসবে মেতে উঠেছে। তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজোস  ছাড়া একা শামীমুল হকের পক্ষে অনিয়ম ও দূর্নীতি করা কিছুতেই সম্ভব নয়। টেন্ডার করার মতো পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকা সত্ত্বেও একের পর এক ঘুপচি টেন্ডারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এর সাথে সংযুক্ত রয়েছে সড়ক ভবনের আশেপাশের প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। উক্ত সিন্ডিকেট নামে বেনামে বিভিন্ন ফার্মের মাধ্যমে টেন্ডারে অংশগ্রহন করে থাকে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, একই ব্যক্তির একাধিক ফার্ম রয়েছে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্নরূপে অবগত। সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নিম্নস্তরের কিছু কর্মচারী (কম্পিউটার অপারেটর, হেড-ক্লার্ক ও উপ সহকারীর প্রকৌশলীরা নামে বেনামে টেন্ডারে অংশগ্রহন করে থাকে)।

নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নড়েচড়ে বসেছে। হাতেগোনা কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সারাক্ষন অধিদপ্তরের রুমে আড্ডায় লিপ্ত থাকে। এ জাতীয় অসংখ্য তথ্য প্রমান ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে গনমাধ্যমের হাতে এসেছে।

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুস সবুর বিগত ৮-১২-২০২১ তারিখে স্মারক নং- ৩৫.০১.০০০০.১৫০.১২.০০৫.০৫ (২য় খন্ড)- ১১৫৩ নং পত্রে সচিব সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে বরাবর শূণ্য পদে ৩জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সওজ, মেকানিক্যাল সার্কেল রাজশাহী, সিলেট ও প্রধান প্রকৌশলী দপ্তর সংলগ্ন রিজার্ভ পদ ঢাকা চলতি দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে উক্ত শূণ্য পদ পূরনের জন্য প্রেরন করেন। যেখানে জোষ্ঠ্যতার ক্রমানুসারে-

(১) মোঃ মোমেনুল ইসলাম, পরিচিত নং- ৬০২২২১। (২)। মোঃ সারোয়ার জাহান, পরিচিত নং- ৬০২২২২। (৩) শামীমুল হক, পরিচিত নং- ৬০২২২৩। উক্ত নির্বাহী প্রকৌশলীদের নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারনে অদ্যবদি উক্ত চিঠির কোনো কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। অথচ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কর্মকর্তার অভাবে সওজ (যান্ত্রিক) কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন উপ-সচিব বলেন, দায়িত্ব পালনে যোগ্য ব্যক্তি না থাকার কারনে দায়িত্ব প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ জোষ্ঠ্যতার ক্রমানুসারে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী উপরোক্ত কর্মকর্তাদের নাম প্রস্তাব করেন।

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলোতে কর্মকর্তা না থাকার কারনে কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হওয়ার পর বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী এ.কে.এম মনির হোসেন পাঠান বিগত ১-০৯-২০২২ ইং তারিখে পুনরায় স্মারক নং-  ৩৫.০১.০০০০.১৫০.১২.০০৫.০৫ (২য় খন্ড)- ১০৭৬ নং পত্রে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) এর বর্ণিত রাজস্ব খাতভুক্ত তিন’টি শূন্য পদের মধ্যে দুই’টি শূন্য পদে চলতি দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে পুরণের নিমিত্তে জোষ্ঠ্যতার ক্রমানুযায়ী ৬জন কর্মকর্তার নাম ও পরিচিতি, পদবি নম্বর, বর্তমান কর্মস্থলের তালিকা, সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বরাবরে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রেরন করে। যার মধ্যে ৮-১২-২০২১ তারিখের নির্বাহী প্রকৌশলী ছাড়াও আর তিনজনের নাম সংযুক্ত করা হয়। তিনজন হলো-

(১) মোঃ ফিরোজ আক্তার, পরিচিত নং- ৬০১৯৩৯।(২) গুঞ্জন বড়ুয়া, পরিচিত নং- ৬০২২৬৩। (৩) মোঃ আলী আহমেদ খান, পরিচিত নং- ৬০২২৬৫।

এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী’ দ্য ফিন্যান্স টু’ডে কে বলেন, ‘’ইতোপুর্বে চিঠি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন’’।

উল্লেখ্য যে, সড়ক ও জনপদের যান্ত্রিক শাখার বিভিন্ন বিভাগে দীর্ঘদিন যাবত অনিয়ম ও দুর্নীতি ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। সরকারী বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও ঘুপচি ভুয়া টেন্ডার মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট ও ঠিকাদাররা মিলে কোটি কোটি টাকার আত্মসাৎ করছে। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সমস্ত টেন্ডারের মালামাল ও উক্ত মালামাল ব্যবহারের ক্ষেত্র তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেড়িয়ে আসবে। উক্ত অধিদপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর থেকে শুরু করে কর্মকর্তা পর্যন্ত প্রত্যকেই এ সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। নামে, বেনামে এদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ, আলিশান ফ্ল্যাট, প্লট, ব্যবসা বাণিজ্য, বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স রয়েছে।   কম্পিউটার অপারেটরের সন্তানেরাও বিদেশে পড়ালেখা করছে। এদের এ টাকার উৎস কোথায়?

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রায় অর্ধশত ঠিকাদার রয়েছে যারা অধিদপ্তরের কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। প্রত্যেকেই ভুয়া টেন্ডারে অংশগ্রহন করে বিল জমা দিয়েছে। কাগজে কলমে এরা টাকা পাওনা থাকলেও বাস্তবে এ মালামাল সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা অথবা কোথা থেকে সংগ্রহ করে মালামাল সরবরাহ করেছে তা কঠোরভাবে দূর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক যাচাই করলে আসল রহস্য বেড়িয়ে আসবে। মূলত ২০১২-১৩ অর্থ-বছর থেকেই দূর্নীতির মহা উৎসব চলে আসছে।

বর্তমানে মোঃ শামীমুল হক একটি বিরাট অংকের নতুন ও পুরানো বিল ছাড় করানোর তোড়জোড় করছে। নিয়মানুসারে ফান্ড বরাদ্দ পাওয়ার পর টেন্ডার আহ্বান করা বিধান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হচ্ছে তা ব্যতিক্রম। ফান্ড বরাদ্দ পাওয়ার সাথে সাথেই ২৪ ঘন্টার মধ্যেই চেক বিতরন করা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটু সজাগ হলেই বিপুল পরিমান অনিয়ম উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এ জাতীয় একটি বড় বরাদ্দ ভাগবাটোরা করার পায়তারা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। একই প্রক্কলনের (Estimate) ভিতর একই আইটেম বারবার পাশ করা হয়েছে তার তথ্য প্রমান দ্য ফিন্যান্স টু’ডের হাতে রয়েছে। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট (ঠিকাদার ও কর্মচারী-কর্মকর্তা) মিলে অনিয়মের বীজ বপন করেছে।  

উল্লেখ্য যে, যে পরিমান ফান্ড বরাদ্দ হয়েছে এবং সে পরিমান মালামাল সংরক্ষণ বিভাগে মজুদ রয়েছে কিনা তা যাচাই করলেই সমস্ত তথ্য ও অনিয়মের থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা