May 3, 2024, 1:46 pm


অনলাইন ডেস্ক:

Published:
2023-09-11 18:55:35 BdST

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে ঘাটতি ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়াচ্ছে


ডেঙ্গুতে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ রোগীর শরীরে তরল ব্যবস্থাপনা (ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট) সঠিকভাবে করা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে অণুচক্রিকা ব্যবস্থাপনায়ও ছিল ঘাটতি। রোগীর শরীরে একাধিক বিপজ্জনক সংকেত দেখা দিলেও বুঝতে দেরি হওয়ায় হাসপাতালে গেছেন শেষ সময়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মৃত্যু পর্যালোচনা (ডেথ রিভিউ) কমিটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর শরীরের তরল ব্যবস্থাপনার গাইডলাইনে ওজন অনুসারে কী পরিমাণ স্যালাইন দিতে হবে, রোগীর অন্য কোনো রোগ থাকলে কীভাবে চিকিৎসা দিতে হবে– তার সবই দেওয়া আছে। তবে রোগীর চাপ বেশি থাকায় কিংবা দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে অনেক ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা যাচ্ছে না। এমনকি শকে চলে যাওয়া রোগীকে আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে রোগীর অবস্থা দ্রুত জটিল হয়ে পড়ছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। এমন জটিল পরিস্থিতি এড়াতে রোগীর অবস্থা বুঝে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, আমাদের কাছে যেসব রোগী আসে তাদের অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এখানে ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীর ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জটিলতা নির্ণয় করে আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। শুধু সঠিক পরিমাণ স্যালাইন দেওয়া সম্ভব হলে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট করা সম্ভব। শকে চলে যাওয়া রোগীকে রেফার না করে ওই হাসপাতালেই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর হলে আলাদা করে ডাব, পেঁপে পাতা, জুস, ড্রাগন ফল ও বেদানা খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ডেঙ্গু রোগীর ফ্লুইড ব্যবস্থাপনা জরুরি। এ ক্ষেত্রে হৃদরোগী, লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, কিডনি, ক্যান্সারের রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের স্যালাইন নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। এসব রোগী
হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিতে এলে পরবর্তী সময়ে তাদের ফুসফুস ও লিভারে পানি জমে যাচ্ছে। রোগীকে আর বাঁচানো যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগীর ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টের জন্য জেলা-উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ঢাকায় আনার প্রয়োজন নেই। অনলাইনের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর রোগী শ্রেণীকরণের জন্য আলাদা করে জোন নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেমন জটিল বা গুরুতর অসুস্থ রোগীর রেড জোনে রেখে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) রুবেদ আমিন বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ ন্যাশনাল গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। রোগ শনাক্তের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে ফ্লুইড দিতে হবে। কোনো ধরনের রোগীকে কম থেকে বেশি, আবার কোনো কোনো রোগীকে বেশি থেকে কম পরিমাণের ফ্লুইড দিতে হবে। কোন উপসর্গে কী ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা নিতে হবে, কোন উপসর্গকে অ্যালার্মিং ধরে চিকিৎসা দিতে হবে, তা গাইডলাইনে বলা আছে। এ ছাড়া ‘ডেঙ্গু ড্রপস’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অ্যাপের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীর ‘ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট’ করতে পারবেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। রোগীর কখন কী পরিমাণ ফ্লুইড প্রয়োজন, তা এই অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ১০০ মৃত ব্যক্তির তথ্যসংবলিত নথি অধিদপ্তরে এসেছে। কিছু কিছু নথিতে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। নথির তথ্য পর্যালোচনা করে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিএসএমএমইউতে আয়োজিত এক সেমিনারে চিকিৎসকরা বলেন, ডেঙ্গুর গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন রোগীর জ্বর ছেড়ে যায়। জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরবর্তী ৪৮-৭২ ঘণ্টা ডেঙ্গু রোগীর জটিল সময়। এ সময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের বিপজ্জনক উপসর্গ হলো অনবরত বমি, রক্তক্ষরণ, তীব্র দুর্বলতা, তীব্র পেটব্যথা, ফুসফুসে পানি জমা, তীব্র শ্বাসকষ্ট হওয়া। অন্তঃসত্ত্বা, ক্যান্সার রোগী, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করতে হবে। ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রক্ত পরিসঞ্চালনের কোনো প্রয়োজন নেই, সঞ্চালন করলে রক্ত (হোল ব্লাড) সঞ্চালন করাই শ্রেয়, প্লাটিলেট নয়। ডেঙ্গু রোগীর রক্তচাপ কমে গেলে, তা রেফার করা ঠিক নয়। ডেঙ্গু শক ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে ম্যানেজ করতে হয়। রক্তচাপ কমে যাওয়া রোগীকে রেফার করলে পথেই রোগীর অবস্থা খারাপ হতে পারে।
এদিকে গতকাল রোববার দুপুরে সাভারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, রোগী ব্যবস্থাপনা জন্য চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রোগী যাতে শয্যা, ওষুধ ও স্যালাইন পায়, সে কাজ সফলতার সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করে আসছে। বাইরে আমরা দেখলাম স্যালাইনের অভাব দেখা দিচ্ছে, কিন্তু আমাদের হাসপাতালে স্যালাইনের অভাব নেই। তবু আমরা সরকারিভাবে নির্দেশনা দিয়েছি, যেন ৭ লাখ স্যালাইন বাজারে আমদানি করে আনা হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেখবেন দেশে স্যালাইন চলে এসেছে। আর লোকাল স্যালাইন তো তৈরি হচ্ছেই।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা