May 6, 2024, 11:47 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2023-12-11 22:14:45 BdST

হরতাল-অবরোধে পরিবহন খাতে ১৭ হাজার কোটির বেশি ক্ষতি


সরকারের পতনের একদফা দাবিতে অবরোধ-হরতাল দিয়ে চলেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং সমমনা দলগুলো। গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এই কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। অবরোধ-হরতালকে কেন্দ্র যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে পরিবহনখাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিকপক্ষের দাবি অনুযায়ী, এই ক্ষতির পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে, ক্ষতির সঙ্কা নিয়েও অবরোধ-হরতালের মধ্যেই গাড়ি চালানো ঘোষণা দেন তারা। 

পরিবহন মালিক-শ্রমিক পক্ষের বরাতে গণমাধ্যমসূত্র জানায়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে ৪৮৭টি বাস-ট্রাকে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এই সময়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় গণপরিবহন ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান কম চলায় পরিবহন খাতে ক্ষতি হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

আগামী মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) থেকে আবার টানা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে বিএনপি-জামায়াত। এ কর্মসূচি মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে। বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো এ কর্মসূচি পালন করবে। তবে এ কর্মসূচিতেও ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিকরা।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানায়, গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৪ দিন হরতাল ও ২০ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি-জামায়াত। এই কর্মসূচি চলাকালে ঢাকায় ১০৬টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২১ কোটি ২০ লাখ টাকা। একই সময়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ৫৩টি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এছাড়া ঢাকার বাইরে ৩৩টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সব মিলে ১৯২ বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪২ কোটি ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই সময় ঢাকাসহ সারাদেশে ২৯৫টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে, যার আর্থিকমূল্য পাঁচ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সব মিলে ৪৮৭টি বাসে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতি ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

ক্ষতির তথ্যের বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় আগুনে পুড়ে যাওয়া এবং ভাঙচুর করা যানবাহনের ক্ষতির পরিমাণ আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বাইরের বাসগুলো যেহেতু বড়, সেজন্য সেগুলো আগুনে পুড়লে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি ধরা হয়েছে। আর ঢাকা শহরে ছোট বাস চলাচল করায় এগুলো পুড়লে ২০ লাখ টাকা ক্ষতি ধরা হয়। এছাড়া ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান ভাঙচুর করলে ক্ষতি ধরা হয় পাঁচ লাখ টাকা। আর বাস ভাঙা হলে দুই লাখ টাকা ক্ষতি ধরে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। 

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ চলাকালে প্রতিদিনই আগুনে পুড়ে যাওয়া বাসের কাগজপত্র নিয়ে সমিতির কার্যালয়ে আসছেন মালিকরা। তখন তাদের কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। কোনো কাগজ কম থাকলে তাদের ক্ষতিপূরণের আবেদন গ্রহণ করা হয় না।’ 

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে নির্বাচনের সময়ও এভাবে গণহারে গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছিল। তখন নির্বাচনের পর ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। এবার নির্বাচনের পরেও এমন একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চাওয়া হবে আর্থিক সহযোগিতা।

গত ২৮ অক্টোবর থেকে গত ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের একদিনের সমাবেশ, চারদিনের হরতাল ও ২০ দিনের অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে যান চলাচল কিছুটা কম ছিল।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির হিসাবে এই সময়ে ঢাকায় ২০ শতাংশ গণপরিবহন বন্ধ ছিল। এতে ৪২২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর একই সময়ে ঢাকার বাইরে ৬০ শতাংশ বাসে যাত্রী পরিবহন বন্ধ ছিল। এতে ক্ষতি হয় ১০ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে গড়ে ৪০ শতাংশ ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় ৬ হাজার ২৫১ কোটি ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলে ঢাকাসহ সারাদেশে আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ১৭ হাজার ১১৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন হরতাল-অবরোধে যাত্রীরা ঘরে বসে থাকে না। জীবিকার তাগিদে অফিস-আদালত বা কর্মস্থলে যান। তাদের সেবা দিতেই ঢাকাসহ সারাদেশে সড়কে যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক রেখেছে মালিক সমিতি। কিন্তু এ সেবা দিতে গিয়ে গণপরিবহনকে টার্গেট করেছে বিএনপি-জামায়াত। তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিচ্ছে। তাদের দেওয়া আগুন থেকে যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক কেউ রেহাই পাচ্ছে না।’

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা