May 6, 2024, 7:42 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2023-12-11 22:53:11 BdST

বাংলাদেশের নির্বাচনভারতের পর্যবেক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে


বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারত পর্যবেক্ষণ করছে। এই নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে ভারত বিশ্লেষণ করছে এবং এ ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন প্রতিবেদন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেওয়া হবে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

ভারতও বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের সুস্পষ্ট কিছু অবস্থান গ্রহণ করেছে। যেমন, ভারত বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে যে, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। কোনও ব্যক্তিকে জেতানো বা হারানোর জন্য কোন পক্ষপাত করা যাবে না।

দ্বিতীয়ত নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন যেন দৃশ্যমানভাবে ক্ষমতাশালী হয়। যেকোনো কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যেন কারও দিকে তাকিয়ে থাকতে না হয়।

তৃতীয়ত নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবে তারা যেন সবাই সমান সুযোগ সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে তাদেরকে সমান সুযোগ দিতে হবে, সংসদে তাদের যাই আসন থাকুক না কেন। 

ভারত চাচ্ছে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, ১৪ দলের শরিকসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচনে অংশ অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তাদেরকে যেন নির্বাচনে মাঠে রাখা নিশ্চিত হয়। এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে যদি ছাড় দিয়েও নির্বাচনের মাঠে তাদের রাখতে হয়, সেটিও নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক বলেই মনে করছে ভারতের কূটনৈতিক মহল। তারা দেখছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কয়েকটি ইতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত নির্বাচন নিয়ে একটা উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কোন আসনে এখন পর্যন্ত বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়নি। বহুস্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে এবং গণমাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের আগ্রহ এবং উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বিরোধী তৎপরতাও চোখে পড়ছে না। মানুষ নির্বাচনের বিরোধী আন্দোলনে সায় দিচ্ছে না। এই সমস্ত বিষয়গুলোর ভিত্তিতে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন করবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

আগামী ১৭ ডিসেম্বর বোঝা যাবে যে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি কোনদিকে যাচ্ছে। ১৭ তারিখের পর যদি দেখা যায় যে রাজনৈতিক দলগুলো এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিল, তারা নির্বাচনের মাঠে আছে। তবে একটি ভালো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে একাধিক ভারতের কূটনৈতিক মহল মনে করেন। শুধু দায়িত্ব হল সরকারের কেউ যেন অযাচিতভাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা না করে। নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনার জন্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে না জড়ান। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যেন ব্যবহার না করে। এভাবে যদি একটি নির্বাচন হয় এবং সেই নির্বাচনে যদি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি থাকে সেক্ষেত্রে এই নির্বাচন নিয়ে গ্রহণযোগ্যতার কোন সঙ্কট তৈরি হবে না। 

বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে। এই সব বৈঠকের একটি বিষয়ে দুই দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তা হল বাংলাদেশের পুরো নির্বাচনের বিষয়গুলো ভারত তদারকি করবে, দেখবে এবং ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ নির্বাচনে যেভাবে ভারত মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছিল সেই মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল, ঠিক একই পদ্ধতিতে এবারও নির্বাচনের সার্বিক ঘটনাপ্রবাহের ওপর ভারত নজর রাখছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিটি পর্যায়ে অবহিত করার কৌশল গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একমত বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর সেক্ষেত্রে আগামী ১৭ ডিসেম্বরের পর ভারত হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রথম মূল্যায়ন এবং পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দেবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা