May 3, 2024, 9:44 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2023-12-19 22:20:08 BdST

সংসদের বিরোধী দল কে হবে: জাপা না স্বতন্ত্র?


জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিয়ে কারও কোনও সন্দেহই নেই। আওয়ামী লীগ যে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, এ নিয়ে কারও মধ্যে সংশয় নেই।

কোন রাজনৈতিক দলই এবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। বরং, নির্বাচনে বিরোধী দল এবার কে হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে নানা রকম আগ্রহ এবং কৌতূহল সৃষ্টি হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তাদের মধ্যে রয়েছে- জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম।

তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনএম শুরুর দিকে আলোচনায় থাকলেও নির্বাচনের মাঠে তাদেরকে এখন পর্যন্ত ম্রিয়মান দেখা যাচ্ছে। সারা দেশে যে নির্বাচনী হাল তাতে বিএনএম বা তৃণমূল খুব বেশি আসন পাবে; এমনটা কেউ মনে করছেন না। বরং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভোটের পর্যবেক্ষণ করে মনে করছেন যে, দুইটি দল মিলে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয়টি আসন পেতে পারে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬ টি আসনে আসন সমঝোতা করেছে। এই আসনগুলো থেকে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রার্থীদের সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু নৌকা প্রার্থীদের সরিয়ে নিলে কী হবে। এই আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জাতীয় পার্টির প্রার্থীদেরকে চোখ রাঙাচ্ছে।

জাতীয় পার্টি গত কিছুদিন ধরে একটি আঞ্চলিক দলে পরিণত হয়েছে। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল এবং সিলেট অঞ্চল ছাড়া জাতীয় পার্টির খুব একটা শক্ত অবস্থান সারা দেশের কোথাও নেই। আর এরকম অবস্থায় বিভিন্ন এলাকায় তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে যেতে পারেন, এমন কথাও অনেকে মনে করছেন। 

জাতীয় সংসদের নিয়ম অনুযায়ী একটি রাজনৈতিক দলকে ১০ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ অন্তত ৩০টি আসন পেলে বিরোধী দলের মর্যাদা দেওয়া হয়। যে কারণে গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। যদিও তারা মহাজোটের অংশ হিসেবে নির্বাচন করেছিল। কিন্তু এবার নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০টি আসন পাবে কি না তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে। এমনকি যে ২৬ টি আসন আওয়ামী লীগ তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে, সেই আসনগুলোর সবগুলোতে তারা জিতবে এমন গ্যারান্টি তাদের নেই। এ কারণে নির্বাচনের আগে তারা বারবার বলছিল যে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে সরিয়ে দিতে হবে। সেটি অবশ্য আওয়ামী লীগ করেনি। 

জাতীয় পার্টি যদি ৩০টি আসন না পায় তাহলে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল কে হবে?

এবার নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক হল স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সারা দেশে ২০০’র বেশি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জরিপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, ১০০ আসনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এর মধ্যে অন্তত ৬০টি আসনে তারা আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারে এমন আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে। 

জাতীয় সংসদে যদি ৩০টির বেশি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়, তাহলে কি তারা বিরোধী দল হতে পারবে? এই ব্যাপারে সংসদের কার্যকরী বিধিতে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই।

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কোন দলের নয়, কাজেই তারা দল হিসাবে স্বীকৃতি পাবে কিনা, এ নিয়ে আইনগত ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে৷ তবে যদি সব স্বতন্ত্র প্রার্থী একসাথে মিলিত হন এবং তাদের সংখ্যা যদি ৩০ জনের বেশি হয়, সেক্ষেত্রে তারা তাদের মতো করে একজনকে বিরোধী দলের নেতা এবং একজনকে উপনেতা গঠিত করতে পারবেন।

সংসদে ৩০ জন বা তার চেয়ে বেশি যেকোন সংসদ সদস্যরা একত্রিত হয়ে সংসদে আলাদাভাবে কৌশলগত মোর্চা গঠন করতে পারেন। পৃথিবীর অনেক সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে এই মোর্চা গঠনের দৃষ্টান্ত রয়েছে। কাজেই বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি স্বতন্ত্ররা ৩০টি বা তার বেশি আসনে বিজয়ী হন এবং তারা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে একটি অবস্থান গ্রহণ করেন তাহলে স্বতন্ত্ররাই হবে আগামী সংসদে বিরোধী দল।

সেক্ষেত্রে তারা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে বিরোধী দলের নেতা, উপনেতা এবং চিফ হুইপ নির্বাচন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় নেই বলে অনেকেই মনে করছেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা