May 2, 2024, 10:09 pm


সিদ্দিক বেলাল

Published:
2023-12-19 23:12:54 BdST

নতুন শিক্ষাক্রম— কী এবং কেন


নতুন শিক্ষাক্রম— দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্যারাডাইম শিফট। এই কারিকুলামকে দেশের প্রচলিত পদ্ধতির শিক্ষাধারার কোনো পরিমার্জন বা সংযোজন-সংশোধন বলা যাবে না, বৈপ্লবিক পরিবর্তন বা রূপান্তর বলা হলেও যেন পুরোটা বলা হলো না। কিন্তু এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন কেন?

স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশের শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন খুঁজতে গণশিক্ষার দিকে লক্ষ্য করুন। প্রয়োজনে ইউনিসেফ-ইউনেস্কোর মত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট, যেমন প্রাথমিক পর্যায় শেষ করা শিক্ষার্থীদের ভাষাগত ও গাণিতিক মান কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের গ্লোবাল রেটিং বৈশ্বিক নলেজ ইনডেক্সে-এর কথা মনে করা যেতে পারে। তবে আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার আলোকে সরাসরি যা দেখতে পাই—

ভাষার দক্ষতা

প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বারো বছরের পাঠ সফলভাবে সমাপ্ত করে বাংলা বা ইংরেজি ভাষার পারদর্শিতার মানের দিকে দৃকপাত করা হলে দেখা যাবে যে, বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী চিঠি, প্রতিবেদন, প্রকল্প-প্রস্তাব ইত্যাদি লিখতে পারে না, একটা লেখা বুঝতে (comprehend) পারে না। এমনকি ইংরেজি মাধ্যমের বিশেষ কয়েকটি স্কুল বাদ দিয়ে দেশি ও বিদেশি কারিকুলামে পড়ুয়া শিক্ষার্থীও কাজ চালানোর মতো ইংরেজি ভাষায় লিখতে পারে না। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মৌখিক যোগাযোগে ইংরেজির ব্যবহার দেখে আমরা অবশ্যই সন্তুষ্ট হবো না। চলমান শিক্ষাপদ্ধতির মধ্যে অল্প কয়েকজন যারা ভাষার সাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছে, তার কৃতিত্ব প্রায় সবটাই তাদের পরিবারের।

খ. গাণিতিক স্বাক্ষরতা

পুরো শিক্ষার্থীগোষ্ঠি গণিতভীতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় বা ঝড়ে পরে। একজন ব্যক্তির বিচারবুদ্ধি ও কাণ্ডজ্ঞানে গাণিতিক বোধের ভূমিকা সম্পর্কে আমরা অবগত নই। গণিত বইয়ের লেখকদের মধ্যেও অনেকে উপযুক্ত গণিতশিক্ষা থেকে মানুষ সাধারণ যেসব যোগ্যতা অর্জন করতে পারে সেইসব নিয়ে ভাবেন না।

উপপাদ্য না বুঝে মুখস্ত করে, বীজগণিতের সূত্রের যুক্তি না জেনে কেবল ব্যবহার জেনে এবং পরিসংখ্যান বা সম্ভাব্যতার প্রয়োগ না শিখে কেবল মধ্যক-প্রচুরকের মত কয়েকটি টার্মের ব্যবহার জেনে একজন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক ভালো গ্রেড নিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারে।

স্থানিক-বোধ যে গণিতের সমগ্রটা জুড়ে আছে তা আমাদের মত সাধারণ শিক্ষিতদের জানা নেই। অথচ গণিতের এইসব দিকের যথাযথ চর্চা থেকে মানুষ যুক্তির প্রতিপাদন (deductive reasoning) করতে পারত, প্রকৃতি-পরিবেশে ছড়িয়ে থাকা অজস্র প্যাটার্ন বুঝতে পারত, অনুমান (estimate) করতে অভ্যস্ত হতে পারত।

এই সবই সিদ্ধান্ত নেওয়াকে সহজ করে, বিচার বুদ্ধিতে পরিপক্কতা আনে। বিগত দুই দশকে গণিত অলিম্পিয়াডে স্বল্প সংখ্যক তরুণদের মধ্যে গণিতের ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক কাজ করলেও মূল ধারার শিক্ষা বা গণশিক্ষাকে প্রভাবিত করতে পেরেছে বলে বোধ হয় না।

মৌলিক গুণাবলী

মানুষের মৌলিক গুণাবলীর বড় দিক নান্দনিকতা বা রসবোধের দিকে নজর দিলে আরো ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠবে।

ইদানিং কালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি পেয়েছেন সেঁজুতি সাহা কিংবা তানভির ফেরদৌস সাঈদের মত আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী, কিন্তু এই সংখ্যা দেশের গণশিক্ষার মানের নির্দেশক হতে পারে না।

শিক্ষার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নৈতিকতার চর্চায় উদার ও মুক্তচিন্তার মানুষ হয়ে উঠবে, তার ব্যাক্তিগত ও সামাজিক জীবনে থাকবে গণতান্ত্রিকতার চর্চা, জীবনযাপনের নানা পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে হবে বিশ্লেষণাত্মক ও যুক্তিবাদী। এর প্রভাবে সামাজিক সংহতি উন্নত হবে, অন্যায়-দুর্নীতি হৃাস পাবে।

শিক্ষার আলোচনা-সমালোচনায় এইসব দিকের গুরুত্ব চোখে পড়ে না। ঊনবিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে বৃটিশ শাসকমহল গুরুগৃহ বা টোল পদ্ধতির শিক্ষা তুলে দিয়ে বর্তমান পদ্ধতির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চালু করেছিলেন।

ঔপনিবেশিক শাসকদের কেরানী প্রয়োজন ছিলো। এরপর প্রায় দু’শ বছরে পরিবর্তন হয়েছে কেবল প্রাতিষ্ঠানিক স্তরবিন্যাসে তথা শিক্ষা প্রশাসনে; পাঠ্যবইয়ের কাঠামো ও প্রকাশভঙ্গি ঠিক রেখে কেবল বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হয়েছে— শিক্ষাবিজ্ঞানের আলোকে এই ধারার পাঠ্যবইয়ের স্থান হতে পারে কেবল জাদুঘরের আর্কাইভে।

পরীক্ষাপদ্ধতি ও শিক্ষাব্যবস্থার কোথাও মৌলিক পরিবর্তন হয়নি, শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন এতটুকুই যে; ধুতি পরা কেরাণি এখন স্যুট-টাই পরে।    

শিক্ষাক্রমের মৌলিক কিছু দিক

এই শিক্ষাক্রমের শিরোনাম যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থীর উচ্চ মাধ্যমিকের শেষে কী কী যোগ্যতা অর্জন করা প্রয়োজন ও সম্ভব, তা নির্ধারন করে শিক্ষণ-শিখন কৌশল (teaching learning approach) ঠিক করা হয়। শিক্ষাবিজ্ঞান (Padagogy)-এর এই তত্ত্ব অভিনব কিছু নয়।

বিজ্ঞান-গণিতের সূত্রের মতই এর কোনো আঞ্চলিক স্বত্বা নেই। এই কারিকুলাম কোন দেশের অনুকরণে করা হলো, সে প্রশ্ন অবান্তর। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই কারিকুলামের অভিনবত্ব হলো অর্জণযোগ্য যোগ্যতাগুলো কী এবং সেইসব অর্জনে শিক্ষণ-শিখন কৌশল কেমন হবে।

নতুন কারিকুলাম অনুসারে শিক্ষার্থীদের অর্জনযোগ্য যোগ্যতার বিবেচনায় স্থান-কাল নিরপেক্ষ বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়াবলী আনা হয়েছে।

যেমন গণতান্ত্রিক চর্চা— অন্যের মতামত ও অবস্থানকে সম্মান ও অনুধাবন করা; যুক্তির প্রয়োগে প্রেক্ষাপট-নির্ভরতা;  নিজের ভাব ও ভাবনা প্রকাশে যথাযথ মাধ্যমের ব্যবহারে সৃজনশীলতা; সিদ্ধান্ত গ্রহণে সূক্ষ্মচিন্তন ও সংশ্লেষন-বিশ্লেষণের অভ্যাস; দৃষ্টিভঙ্গিতে সামগ্রিক বিবেচনা ও কল্যাণভাবনা; বৈচিত্র্যকে সম্মান; নিজ সংস্কৃতির চর্চা এবং ঐতিহ্য-আধুনিকতার সমন্বয় করে দেশপ্রেমী ও বিশ্ব নাগরিক হয়ে ওঠা।

এসবের সঙ্গে আরো থাকছে নিজের মন ও শরীরকে জেনে নিয়ে নিজেকে ভালো রাখতে জানা; জীবনের সর্বক্ষেত্রে নান্দনিকতার চর্চা; আত্মপরিচয়ের সংকট থেকে উত্তরণের উপায় জানা; দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারা ইত্যাদি। ব্যক্তিগত সামর্থ্যের এইসব মৌলিক দিক এই শিক্ষাক্রমের যোগ্যতার উপাদান হিসেবে অপরিবর্তনীয় করা হয়েছে।

বাংলাদেশের পেক্ষাপটে শিক্ষণ-শিখন কৌশলে কিছু অভিনবত্ব রাখা হয়েছে, যার নাম হলো অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন।

এখানে শিক্ষাবিজ্ঞানের তত্ত্ব হলো মানুষ শেখে অভিজ্ঞতা থেকে, সুতরাং শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার মধ্যে ফেলতে হবে। জ্ঞানার্জনের এই তাত্ত্বিক ভিত্তি হলো একটি অভিজ্ঞতার পর শিক্ষার্থীকে সমধর্মী আরও এক বা একাধিক অভিজ্ঞতার মধ্যে নিয়ে গেলে (অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটলে) তার ভাবনার জগত সক্রিয় হবে এবং সে সিদ্ধান্তে উপনীত হবে।

তবে কাজ এখানেই শেষ নয়, তাকে তার সিদ্ধান্ত যাচাই করতে দিতে হবে এবং সে নিজেই তার সিদ্ধান্তের নির্ভুলতা নিশ্চিত করবে। এক কথায় এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হলো করা ও পড়ার (এই দুটো মিলিয়েই অভিজ্ঞতা) মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ।

পাঠের তালিকায় রাখা হয়েছে ভাষা, গণিত, বিজ্ঞানের মত আবশ্যকীয় বিষয়াবলি। করার তালিকায় আছে বয়সোপযোগী আনন্দ আয়োজনের মাধ্যমে একক ও দলীয় অনুসন্ধান, পরীক্ষণ, নানা প্রকারের লিখিত বা মৌখিক উপস্থাপনা যার উপাদান পাঠ, তথ্য-উপাত্ত, ভাবনাচিন্তা, হাতের কাজ, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি।

যোগ্যতার ক্ষেত্রগুলো অনঢ় হলেও অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে বিদ্যালয় বা শিক্ষকের সৃজনশীল হওয়ার (flexibility) জায়গা রাখা হয়েছে। যার কারণে পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকার একাধিক অপশন রাখা হয়েছে, যেন শিক্ষক সৃজনশীল না হলেও শিখন প্রক্রিয়ার এর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

শিক্ষাক্রমের অন্য মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে। একজন শিক্ষার্থীকে একটি বর্ষশেষে কাঙ্ক্ষিত কর্মক্ষমতার স্তর নির্ধারণে মূল্যায়ন করা হয়। এর জন্যে চর্চিত বা পঠিত বিষয় বা কন্টেন্টের প্রেক্ষাপটনির্ভর (context based) থিম সুনির্দিষ্ট করে মূল্যায়নের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করা হয়। একক মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে সেখানে রাখা হয় মূল্যায়ন ক্ষেত্রের ভিত্তিতে পারদর্শিতা পরিমাপের স্কেল বা সূচক (Performance Indicators)। এই স্কেলের তিনটি মাত্রা (গ্রেড নয়) থাকবে যা সুনির্দিষ্ট। ভাষার এই স্কেলকে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে গ্রাফিক্সে পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীকে বৎসরান্তের ‘পরীক্ষার ফল’ বা সনদ হিসেবে বিতরণ করা হবে।

প্রতিটি শিক্ষার্থীর অর্জিত মাত্রা শিক্ষক অ্যাপের মাধ্যমে টিক দিয়ে পূরণ করবেন। শিক্ষকের টিক দেওয়া থেকে আরম্ভ করে সনদ তৈরি পর্যন্ত বাকি কাজ করবে এই অ্যাপ। গ্রাফিক প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপিত শিক্ষাথীর অর্জিত যোগ্যতার মান প্রতি শিক্ষাবর্ষের শেষে সনদ হিসেবে দেওয়া হবে। গ্রাফিক প্রেজেন্টেশনে শিক্ষার্থীর অর্জনের সাতটি স্তর রাখা হয়েছে।

শেষ কথা

কানাডার ভ্যানকুভারের স্কুল পর্যায়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষে পুরো প্রদেশব্যাপী অভিভাবক, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কমিটির সদস্য নতুন প্রবর্তিত মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে আপত্তির ঝড় তুলেছেন।

ওখানে অষ্টম পর্যন্ত মূল্যায়ন করা হয় পারফরমেন্স স্কেলে (গ্রেড পদ্ধতি নয়)। প্রারম্ভিক, উন্নয়নশীল, উন্নত, উচ্চতম ইত্যাদি শব্দের প্রয়োগে মূল্যায়নপত্র তৈরি করা হয়। এতদিন নবম থেকে ছিল গ্রেডিং পদ্ধতি (A,B, C, D ও F)। নবম  শ্রেণিতেও এবার গ্রেডিং পদ্ধতি বাতিল করে অষ্টমের মত পারফরমেন্স বেইজড করা হয়েছে।

কথা হল আপত্তি যত জোড়ালোই হোক শিক্ষা বিভাগ অবস্থান পরিবর্তন না করে সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

কেলিফোর্নিয়া ও যুক্তরাজ্যে সমস্যা চলছে গণিতের কারিকুলাম নিয়ে। কেলিফোর্নিয়ায় বিশেষজ্ঞ পরামর্শে গণিতের পঠ‌ন-পাঠনে ‘যুগান্তকারী’ পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু দাবী উঠেছে শিক্ষকরা নতুন পদ্ধতির সঙ্গে যেতে পারছেন না, শিক্ষার্থীরাও বুঝতে পারছে না।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বৃটিশ জাতির গাণিতিক দক্ষতার মানোন্নয়নে এ লেভেল পর্যন্ত গণিত বিষয়কে বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছেন এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে শিক্ষা বিভাগ তা বাস্তবায়ন করছে। সেখানেও অভিজ্ঞ শিক্ষক সংকট চলছে এবং আপত্তি উঠেছে, তিন বছর হলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলছে।

নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশেও এমন ধারা কারিকুলামের পরিমার্জন বা মৌলিক পরিবর্তনের ঘটনা চলছে। যুগোপযোগী থাকতে যেকোনো দেশের গণশিক্ষার কারিকুলাম নিরন্তর পরিবর্তন চলতে থাকে যার বাস্তবায়নে কয়েক বছর সময় নিতে হয়। নতুন কিছুকে চালু করেই প্রশিক্ষণ ও বাস্তবায়ন চলতে থাকে।

আমাদের দেশের নতুন কিছু চালুর ক্ষেত্রে অন্য এক ধরনের সমস্যা আছে। এখানে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরিকল্পনা করা হয় কিন্তু বাস্তবায়নের দায়িত্ব মন্ত্রনালয়ের। সেখানে থাকে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রন। আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা বা অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন বা রক্ষা করা।

মৌলিক কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের ইতিবাচক দিক দৃশ্যমান হতে অনেক সময় লাগে। সেখানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আগ্রহ কম থাকে। এছাড়া সরকারী কর্মকর্তাদের মনস্তাত্ত্বিক সংকট ও আমলা-সংস্কৃতির কারণে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনেক সময়ই বাস্তবায়ন হয় না।

এই প্রথম বাংলাদেশের একজন শিক্ষামন্ত্রী কোনো কারিকুলামের প্রস্তাবনা প্রস্তুত ও বই লেখার কাজে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে দিনের পর দিন কাজ করেছেন, এমন কি বাস্তবায়নের খুঁটনাটি বিষয়ও সরাসরি তদারক করেন। শিক্ষামন্ত্রীর এমন আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

দেশের শিক্ষাপদ্ধতির এমন একটা মৌলিক পরিবর্তনে সারা দেশে আপত্তি-অসন্তোষ দেখা দেওয়াই স্বভাবিক। শিক্ষাবিদ সেখানে সমালোচনা করে ভুল শুধরে দেবেন, জনগণ সাবধান করে দেবে পরিবর্তন চাও ভালো কথা, আর ভুল কিন্তু করা যাবে না।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমেরিটাস মনজুর আহমেদের যুক্তিপূর্ণ সমালোচনা কিংবা কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগে গবেষণারত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুবাইয়া মোর্শেদ এবং আরো কিছু গঠনমূলক যুক্তপূর্ণ সমালোচনা পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে।

নানা প্রান্তের এমন আরো সমালোচনা এই শিক্ষাক্রমের প্রণেতারা খতিয়ে দেখবেন, বিবেচনায় এনে প্রয়োজনীয় সংশোধন পরিমার্জন করবেন, বাস্তবায়নের চ্যলেঞ্জ মোকাবেলায় আরও আন্তরিক হবেন বলেই আশা করা যায়।

সোশাল মিডিয়ার যুগে অর্থহীন, অশালীণ কথা আসা বিচিত্র নয়। সন্তানকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় জর্জরিত অভিভাবকদের আপত্তি জানাতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করাও স্বাভাবিক। কিন্তু স্বল্প কয়েকজন বিশেষজ্ঞের যুক্তিহীন, সূত্রহীন বিরুদ্ধ মন্তব্য একেবারেই অনভিপ্রেত।

আমরা আশা করতে পারি এমন শিক্ষাপদ্ধতি প্রয়োজনীয় সংশোধন-পরিমার্জনের মাধ্যমে গতিশীল থাকবে, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের পথকে সুনিশ্চিত করবে। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক গণশিক্ষার পরিবর্তনের সুফল দৃশ্যমান হতে এক প্রজন্ম না হোক অন্তত এক দশক সময় তো লাগবেই। 

বি.দ্র. লেখক জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের লেখক দলের সদস্য

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা