May 3, 2024, 12:03 pm


বিশেষ প্রতিবেদক:

Published:
2024-04-06 14:05:27 BdST

বিআইডব্লিউটিসিএর ক্ষমতাধর পরিচালক আশিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু


একজন আশিকুজ্জামান। বিআইডব্লিউটিসি এর পরিচালক (বাণিজ্য) ।তার বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ। বিআইডব্লিউটিসি এর ক্ষমতাধর এ কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতি  নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান শুরু করেছে। অভিযোগের অন্ত নেই আশিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে।দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম কে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের অনুসন্ধান করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ,ও দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে আশিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে। বিআইডব্লিউটিসিএর জায়গা নিজের লোকের নামে দখলে রাখা। সংস্থার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি অন্যের দখলে রাখার সুযোগ করে দেওয়া, টেন্ডার না দিয়ে জাহাজ মেরামত, জাহাজ ক্রয় বিক্রয়, ওটি আর মালামাল বিক্রি, জাহাজ ভাড়া, সংস্কার, বিল্ডিং ভাড়া দেওয়া সহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ সমস্ত অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ২১ শে মার্চ বিআইডব্লিউটিসি এর চেয়ারম্যানের দপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুদক।এ অভিযোগ সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।

দুদকের চিঠিতে যে সমস্ত নথি চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে ২০১৮ সালের কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগের ছাড়পত্র, পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মকর্তাও কর্মচারীদের তালিকা, নিয়োগ প্রাপ্তদের (পদ পৃথকভাবে) জেলা ভিত্তিক তালিকা, নিয়োগ সংক্রান্ত সকল সভার কার্যবিবরনী ,নোট শিটের ফটোকপি, ২০১৮ সালের নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে কোন তদন্ত হয়ে থাকলে তদন্ত প্রতিবেদন ।

আশিকুজ্জামানের এজিএম থেকে জিএম পদে পদোন্নতি সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, সহ ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোঃ ইকবাল হোসেন, চালক সজিব হাওলাদার , মেকানিক খালেদ হোসেন কিরনের নথির সত্যায়িত ফটোকপি।

বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া (আরিচা) নৌরুটে ফেরিতে লুজ যাত্রী পারাপারের টিকেটিং এজেন্ট নিয়োগের বিধি/নীতিমালা, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ইজারা প্রদানসংক্রান্ত নথিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং এসটি জব্বার জাহাজ কী প্রক্রিয়ায় মেরামত করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত চাহিদাপত্র, প্রশাসনিক অনুমোদন, কমিটি যাচাই প্রতিবেদন, পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি, দাখিলকৃত দর, রেজল্যুশন, তুলনামূলক বিবরণী, কার্যাদেশ, চুক্তিপত্র, নোটশিটের ফটোকপি, বিল পরিশোধের ভাউচারসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রও চাওয়া হয়েছে।

দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, আশিকুজ্জামান এজিএম ফিডার পদে দুই বছর পূর্ণ না করেই ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল ডিজিএম (সাময়িক) পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। ‘সাময়িক পদোন্নতি’ বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রবিধানমালায় নেই। এরপর তিনি ডিজিএম পদে তিন বছর পূর্ণ না করেই অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপকের (বাণিজ্য, যাত্রী ও ফেরি) দায়িত্ব নেন। এ পদোন্নতিও দেশের প্রচলিত আইনে নেই।

অভিযোগে বলা হয়, আশিকুজ্জামান ২০১৮ সালের ৬ জুন পরিচালক (বাণিজ্য) হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপরই তিনি ও মহসিন ভূঁইয়া গং মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অস্থায়ী হিসেবে ৬০০ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিজনের কাছ থেকে ২-৩ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। এ ছাড়া সংস্থার বিধিবিধান অমান্য করে ৪২ বছরের ইকবাল হোসেনকে সহব্যবস্থাপক (বাণিজ্য), ৪০ বছরের সজিব হাওলাদারকে গাড়িচালক এবং ৪৫ বছরের খালিদ হোসেন কিরণকে অর্ধদক্ষ মেকানিক পদে নিয়োগ দেন তিনি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, লুজ যাত্রী পারাপারে আরিচা ফেরিঘাট টেন্ডারের মাধ্যমে এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। প্রতি বছর ফেরিঘাট টেন্ডারে ইজারা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে ফেরিঘাটের ডাক ২২ লাখ টাকায় উঠেছিল। কিন্তু তা বাতিল করে ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ৯৬ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। এতে সরকারের ২১ লাখ ৪ হাজার টাকা গচ্চা যায়। এ ছাড়া টেন্ডার ছাড়াই পদ্মা সেতুর পিলার মেরামতে ১০ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়।

অভিযোগে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের হাতিয়া থেকে ভাসানচর পারাপারের জন্য এসটি জব্বার জাহাজটি টেন্ডার ও ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়াই মেরামত করেন তিনি। ২০২১ সালের ১১ মার্চ ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৬৩ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয় করে পছন্দের ডকইয়ার্ডে এটি মেরামত করান। একইভাবে আইভি রহমান জাহাজটি একই ডকইয়ার্ডে মেরামত করান। এতে সরকারের বিপুল ক্ষতি হয়েছে।

অভিযোগ আছে, এমভি বঙ্গমাতা ও এমভি বঙ্গতরী নামে দুটি জাহাজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সংস্থার বাণিজ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এর মূল দায়িত্বে ছিলেন। টেন্ডারে একটি কোম্পানিকে জাহাজ তৈরির ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয় এবং এর জন্য ৬৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু জাহাজ পাওয়া যায়নি। আশিকুজ্জামান প্রায় ১৫ বছর ধরে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় সংস্থার জমি দখল, বিভিন্ন কেনাকাটা, নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিসহ সব ক্ষেত্রেই তার প্রভাব রয়েছে। আর এসব খাত থেকে অবৈধভাবে আয় করে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

দুদক সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আশিকুজ্জামান ও তার স্ত্রী ফারজানার নামে কোনো জমি, প্লট, ফ্ল্যাট, বাড়ি, দোকান আছে কি না জানাতে গত ৩ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, ভূমি অফিস ও রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে। সে অনুসন্ধানের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি মাস থেকে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির আরেকটি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

উল্লেখ্য যে দুর্নীতি দমন কমিশনের বিআইডব্লিউটিসি এর সংক্রান্ত অনুসন্ধান সব সময় আলোর মুখ দেখে না। দ্য ফিন্যান্স টুডে বিআইডব্লিউটিসি এর দুর্নীতি পরায়ন প্রায় ২০ জনের অধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে ব্যাপক অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে। তার মধ্যে আশিকুজ্জামনের ও রয়েছে। আশিকুজ্জামান ও তার স্ত্রী ফারজানার নামে অবৈধ ভাবে অর্জিত অনেক তথ্যই দ্য ফিন্যান্স টুডে হাতে সংরক্ষিত আছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ প্রতিটি সংস্থার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অত্যান্ত প্রবল। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম আর ও জোরদার করতে হবে।

 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা