May 21, 2024, 4:19 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-04-30 16:37:07 BdST

যুগোপযোগী নীতিমালা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও আইডিআরএ ঢেলে না সাজালে বীমাখাতে শৃংখলা ফিরে আসবে না


দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম অগ্রসরমান সেষ্টর হচ্ছে বীমা খাত। যে দেশের বীমা খাত যত বেশী সমৃদ্ধ সে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও জনগন তত বেশী সুরক্ষা পেয়ে থাকে। উন্নত বিশ্বের অর্থনীতির মূল ভিত্তিতে বীমা খাতের অবদান অনেক বেশী। যুগোপযোগী বীমা খাতের নীতিমালা ও তার বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে একটি দেশ সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠার অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশ দক্ষিন এশিয়ার অগ্রসরমান অর্থনীতির একটি দেশ। দেশের অর্থনীতির সকল খাতের যে ধারাবাহিকতা তার সাথে বীমা খাত সমান তালে এগিয়ে যেতে পারছে না। দেশের শিল্পায়ন, আমদানী-রপ্তানী ও ব্যবসা-বানিজ্য বীমা খাতের সাথে সম্পৃৃক্ত। সামগ্রিক শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বানিজ্যে সাধারন-বীমা খাতের ভূমিকা অন্যতম।

কিন্তু দোশর বীমাখাত আজও জনগনের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এর কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, এই খাতে পেশাদারিত্ব ও সুশাসনের  বড় অভাব। বীমা খাতের উদোক্তা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদের মধ্যে রয়েছে- বিস্তর তফাৎ।

উদোক্তাদের মানসিকতা হলো এই খাত থেকে অর্জিত অর্থ দ্বারা নিজেরা আঙ্গুঁল ফুুলে কলাগাছ হওয়া। কারন এই খাত পরিচালনায় বা ব্যবস্থাপনায় রয়েছে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের ঘাটতি। এই খাতের ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মকর্তাদের চাকুরীর ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক মর্যদা আজও গড়ে উঠেনি। উদ্যোক্তা পরিচালকদের পর্ষদ চায় স্বল্প বেতনে কিভাবে ব্যবস্থপনা পর্ষদ চালানো যায়। অথচ ব্যাংকিং খাতর চেয়ে বীমা খাতের গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। বরং ব্যবসায়িক নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে বীমা খাতের গুরুত্ব আরও বেশী। দেশের মাঠ পর্যায়ের বীমা খাতের কর্মকর্তা ও কর্মীরা অদক্ষ ব্যবস্থাপনার অধীনে পরিচালিত হয়। তাদের শাখা অফিসগুলোতে কোন সেটিসফেকশন থাকার মত কার্যালয় নেই।

তাহলে কিভাবে দেশের গ্রামীন অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা ও ব্যবসা বানিজ্যে এই বীমা খাত ভূমিকা রাখবে?

বীমা খাতের সবচেয়ে চরম সংকট শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের। ব্যাংকিং খাতের একজন প্রধান-নির্বাহী-যেভাবে তার কর্মক্ষমতা দ্বারা পুরো ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে সে ক্ষেত্রে বীমা খাতের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তা পারে না। এর অন্যতম কারন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এই খাত। কমিশন নির্ভর কর্মক্ষেত্র হওয়ার কারনে এই খাতের কর্মকর্তারা চাকুরীর নিশ্চয়তা পায় না।

আমাদের তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে অধিকাংশ বীমা কোম্পানীর বিশেষ করে জীবন বীমা কোম্পানীগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইও হিসেবে যারা আছেন; তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতারই অভাব। এরা মাঠপর্যায়ে কমিশন ভিত্তিক কাজ করতে করতে উপরের পর্যায়ে উঠে। অপরদিকে পরিচালনা পর্ষদ চায় স্বল্প সুযোগ-সুবিধায় শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে। এর ফলে মূলত ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি।

অতি সম্প্রতি বীমা খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক সংবাদ গনমাধ্যমে প্রকাশের পর বীমা খাত নিয়ে সাধারন জনগনের মাঝে নেতিবাচক ধারনার জন্ম নিয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীগন এখন আর নিজেরাও কর্মক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে না। জনগনও দেশের বীমা কোম্পানীগুলোকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

জীবন বীমা কোম্পানীগুলোর কলংঙ্ক সবচেয়ে বেশী। মাঠ পর্যায়ে একদিকে শৃংখলার অভাব অপর দিকে মেয়াদান্তে বীমা কোম্পানীগুলো গ্রাহকের বীমা দাবী ও তাদের সঞ্চয় ফেরৎ দিতে পারছে না।

বীমা কোম্পানীগুলো মুলতঃ গ্রাহকের নিকট থেকে অর্থ বা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখে। দেশের ব্যাংকিং খাত ও লিজিং কোম্পানীগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবার কারনে বীমা কোম্পানীগুলোর গচ্ছিত টাকা ফেরৎ দিতে পারছে না। দেশের বীমা খাত যতদিন পর্যন্ত নিজেরা উৎপাদনমুখী খাতে টাকা বিনিয়োগ করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত এই খাতে সুশৃংঙ্খল ফিরে আসবে না।

বীমা খাতের নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা আইডিআরএতে রয়েছে যুগোপযোগী নীতিমালার অভাব। আইডিআরএ শীর্ষ  ব্যবস্থাপনা আমলা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু যেহেতু বীমা খাত একটি আর্থিক খাত অতএব আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও উন্নত দেশের বীমা খাতের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা দ্বারা আইডিআরএ পরিচালিত না হলে কিভাবে এই খাত বিশ্বায়নের সাথে সম্পৃক্ত হবে।

সর্বপ্রথম নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থাকে যুগোপযোগী করতে হবে। বীমা কোম্পানীগুলোর পরিচালনার ক্ষেত্রে আইডিআরএর মনিটরিং ও নীতিমালা বাস্তবায়নে আরও কঠোর হতে হবে।

অভিযোগ রয়েছে "শর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভূত"। আইডিআরএ নিয়ন্ত্রন করে প্রভাবশালী কয়েকটি বীমা কোম্পানী । এর অধ্যে কয়েকটি বীমা কোম্পানী দেশের বীমা খাতের দুর্নীতিবাজ বীমা কোম্পানী হিসেবে পরিচিত হয়ে গেছে। এদের শীর্ষ ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে রয়েছে হাজারো অভিযোগ। একেক জন বীমা কোম্পানীর এমডি শত শত কোটি টাকার মালিক। এদের কোম্পানীগুলোতে গ্রাহকদের বীমা দাবী পূরন করতে পারছে না।

এরাই এসোশিয়েশন এর নেতা। অপরদিকে কিছু বীমা কোম্পানী রয়েছে যাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কারোরই ব্যবস্থাপনা পর্ষদ পরিচালনার কোন যোগ্যতাই নেই। কিভাবে এরা দীর্ঘদিন চেয়ারে বসে আছে এই ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে দেখা গেছে আইডিআরএকে ম্যানেজ করেই এরা চাকুরীতে বহাল আছে।

আরও একটি সমস্যা বীমা খাতে বর্তমানে অত্যন্ত প্রকট হয়ে দেখা দিছে তা হলো অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে কোম্পানীগুলোতে আইডিআরএ প্রশাসক নিয়োগ প্রদান। এই পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বীমা কোম্পানিতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকগনদের কেউই বীমা খাতে দক্ষ নন। তাহলে কিভাবে তারা বীমা খাতকে পরিচালনা করবে। এই খাতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মীরা সম্পৃক্ত। প্রান্তিক জনগনের জান ও মালের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি এখানে জড়িত। আমলা দিয়ে তা সমাধান সম্ভব নয়। সম্ভাবনাময় এই খাতকে ঘুরে দাড়াতে গেলে দক্ষ জনশক্তি তৈরী করে তাদের নিয়োগ দিতে হবে, কর্মীদের চাকুরী ও আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।

অনিয়মের সাথে পরিচালনা পর্ষদ কিংবা ব্যবস্থাপনা পর্ষদের যেই যুক্ত থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতার আনতে হবে। কোন ক্রমেই কোম্পানীকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে পর্ষদ ভেঙ্গে যোগ্য পর্ষদ বসাতে হবে। মনে রাখতে হবে এখানে সাধারন জনগনের ব্যবসা -বাণিজ্য, অর্থ ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। সর্বক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিতকরণ, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও যুগোপযোগী নীতিমালা প্রনয়নই সময়ের দাবী।

আগামীতে বাংলাদেশে জীবন বীমা কোম্পানীগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম ও দুর্নীতির উপর ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে দ্যা ফিন্যান্স টুডেতে। দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে বীমা খাতে ফিরে আসবে শৃংখলা।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা