December 15, 2024, 5:22 am


মোশাররাফ এইচ. খান

Published:
2024-11-05 19:14:43 BdST

মেঘনা ব্যাংকে উজমা চৌধুরী গংদের রহস্যজনক আধিপত্য


শেখ হাসিনার পতনের পর পরেই আ. লীগের ক্যাশিয়ার ও মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ. এন আশিকুর রহমান, তার পরিবার ও তার অনুগত মেঘনা ব্যাংকের পরিচালকরা অধিকাংশই পালিয়েছেন। মেঘনা ব্যাংকে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের মেয়ে উজমা থান চৌধুরীর রহস্যজনক আধিপত্য নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই ব্যাংক ঘিরে এই শিল্প গ্রুপের বিশেষ প্রশ্নবোধক কর্মকান্ড সংঘটনের বিষয় রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।


ফ্যাসিষ্ট হাসিনার ক্ষমতামলে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতিষ্ঠিত এ ব্যাংকটির দখলদার চেয়ারম্যান আশিকুর রহমানসহ পরিচালকদের অধিকাংশ পলাতক থাকায় ব্যাংকটি এখন অবিভাক শূন্য হয়ে স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, এ অবস্থায় মেঘনা ব্যাংকের এমডি কাজী আহসান খলীল ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক ও আর্থিক যোগানদাতা প্রাণ-আরএফএলের মালিক প্রয়াত আমজাদ খানের মেয়ে উজমা খান চৌধুরী আশিকুর রহমানদের স্বার্থ রক্ষা করে বর্তমানে ব্যাংকটি পরিচালনা করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সময়ের জারি করা নীতিমালা লংঘণ করে এমডি কাজী আহসান খলীল অধিকাংশ সংখ্যক পরিচালকের অনুপস্থিতিতে ব্যাংকটির বোর্ড সভা পরিচালিত করছেন এবং এ ক্ষেত্র বাংলাদেশ ব্যাংকড নিয়ে নিশ্চুপতা নিয়েও বিভিন্ন মহলে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
অপর একটি সূত্র জানায়, এইচ. এন আশিকুর রহমান, জাত ব্যাংক লুটেরা ও ভয়ংকর পাচারকারী সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান পরিবারের সদস্যরাসহ আ. লীগের সুবিধাভোগী পরিচালকরা জুলাই বিপ্লবের পর একযোগে পালিয়ে যায়। পলাতক অবস্থায়ও এমডি কাজী আহসান খলীল ও কাদিয়ানী ধর্মের আর্থিক যোগানদাতা দাতা প্রাণ আরএফএলের উজমা খান সহযোগীতায় এখনো ব্যাংকটি আশিক-জামান পরিবারের কব্জায় রয়েছে।


এসব বিষয়ে রহস্যজনক কারণে ব্যাংকটির জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহরিয়ার খুব চাতুরতার সাথে সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলেন। এদিকে, সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে ব্যাংকটির এমডি কাজী আহসান খলীলকে তার মোবাইলে কল করা হলে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে মিটিং এ আছেন বলে কথা সংক্ষেপ করে কল রেখে দেন। পরে কয়েক বার কল দিলে তিনিও কল রিসিভ করেননি। জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহরিয়ার ও এমডি কাজী আহসান খলীল, আশিকুর রহমান ও ভয়ংকর পাচারকারী সাইফুজ্জামান চক্রের অন্যতম সহযোগী ছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এখনও তাদের সাথে পলাতক এ সব পরিচালকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। এই দুই কর্মকর্তা ও ও প্রভাবশালী পরিচালক উজমা খানকে এইচ. এন. আশিকুর রহমান ও সাইফুজ্জামান চক্রের বিদেশে বিপুল অংকের টাকা পাচারের বিষয়ে তদন্তের আওতায় নেয়া হলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তার কোন মতামত না পেয়ে মেঘনা ব্যাংকের বর্তমান প্রভাবশালী পরিচালক উজমা খান চৌধুরীকে তার হোয়াটস অ্যাপে বার বার কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেন নি। শেষে অপর একজনকে দিয়ে তিনি কল রিসিভ করান। রিসিভকারী ব্যাক্তির কাছে কনফার্ম করা হয় মোবাইল নাম্বারটি তার। পরিচয় জানতে চাইলে, তিনি তার দপ্তরের কর্মকর্তা বলে জানান । তবে নাম বলতে রাজি হন নি। মেঘনা ব্যাংকের পরিস্হিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়ার কথা বললে উজমা খান আর কল রিসিভ করেনি। পরে কল করার সময় দেখা যায় সে তার হোয়াটস অ্যাপের থাকা ছবিটিও ডিলিট করে দিয়েছেন ।

মেঘনা ব্যাংকের বর্তমান দায়ীত্বশীল দুই কর্মকর্তা এবং একজন পরিচালকের এ ধরনের আচরনের বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করলে তারা বলেছেন, এতে পাচারকারী ও পলাতক পরিচালকদের সঙ্গে ও বর্তমান দায়ীত্বশীল এ দুই কর্মকর্তার ও বর্তমান প্রভাবশালী এই পরিচালকের সঙ্গে বিশেষ যোগসূত্র থাকার প্রমাণ বহন করে। তাদের দুর্বলতা না থাকলে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে এ ধরনের লুকোচুরি হবে কেন? কোথায়ও হয়তো বড় ধরনের ঘাপলা রয়েছে এ জন্য সম্মিলিত ভাবে তারা গন মাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন।

জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে আব্দুল আলীম সেলিম এর নেতৃত্বে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয়ে ২০১৩ সালে চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। চুড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার আগ পযর্ন্ত এইচ এন আশিকুর রহমানের কোন ভূমিকা ছিলো না। অনুমোদন লাভের পর আ. লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক সংসদ সদস্য এইচ. এন. আশিকুর রহমান উদ্যোক্তা পরিচালকদেরকে অনুরোধ করে ব্যাংকটিতে এক টার্মের জন্য চেয়ারম্যান হয়ে আ. লীগের দলীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে দীর্ঘ বারো বছর মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ দখল করে রাখেন। চেয়ারম্যান থাকা কালীন নিজের মন মতো ব্যাংকটিতে এমন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করেন নি। যাদের শ্রম ও অর্থে এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে উদ্যোক্তাদের এক এক করে বের করে দিয়ে নিজের স্ত্রী-সন্তানদের ও চট্রগ্রামের প্রভাবশালী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে পরিচিত সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের আত্মীয় স্বজনদের পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এইচ. এন. আশিকুর রহমান বিশাল অংকের সুবিধা নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালানোর পর পরই সাইফুজ্জামানের সাথে মেঘনা ব্যাংকে পরিচালক পদে থাকা আত্মীয়রাও পালিয়ে যায়। সম্প্রতি লন্ডনে পলাতক সাইফুজ্জামান ও তার পরিবারের সম্পত্তির বিশাল ফিরিস্তি আন্তর্জাতিক গন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। একটি পরিবার নির্বিঘ্নে দেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আলোচিত একটি ঘটণায় পরিণত হয়েছে। সর্বস্তরে একটি প্রশ্ন হাউ ইট পসিবল!

আশিকুর রহমান দীর্ঘ দিন আ. লীগের এবং শেখ হাসিনারও রাজনৈতিক কোষাধ্যক্ষ পদে ছিলেন। পলাতক শেখ হাসিনার হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদা তার মাধ্যমে আদায় হতো বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। সব নিয়ম নীতি লংঘন করে আশিকুর রহমান মেঘনা ব্যাংকের সিএসআরের টাকা আ. লীগের দলীয় ফান্ডে চাঁদা দিয়েছেন বলেও জানা যায়।

একটি সূত্র জানায়, পলাতক এইচ. এন আশিকুর রহমান তার অবৈধ পথে উপার্জিত টাকা নিরাপদে বিদেশে পাচার করার উদ্দেশ্যে সাইফুজ্জামান পরিবার সদস্যদের মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক পদে যুক্ত করেন বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র। এই পরিবারের মাধ্যমে তিনি নিজের, শেখ হাসিনা ও অন্যান্য প্রভাবশালীদের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারে প্রধান সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন বলেও সুত্রগুলো জানায়। এছাড়া প্রাণ আরএফএলের মাধ্যমেও বিপুল অংকের টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। প্রাণ আরএফএল-এ ও সাইফুজ্জামান পরিবারের সদস্যদের প্রতিষ্ঠান সমূহের গত পনের বছরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম অনুসন্ধান করা হলে “কেচো খুড়তে ভয়ংকর অজগর” বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। জানা যায়, মেঘনা ব্যাংক পিএলসিতে আশিকুর রহমানের ইচ্ছা, আকাঙ্খা বা কথাই ছিলো আইন। গত ৫ আগষ্টে পট পরিবর্তন পর্যন্ত এর বাইরে কেউ কোন চিন্তাও করতে পারেন নি।

শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া বাকী সকলে সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আত্মীয় স্বজন। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আত্মীয় স্বজনদের কয়েকজনের মাধ্যমে এইচ এন আশিকুর রহমান আ. লীগের ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিরাপদে টাকা বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আশিকুর রহমান তার ক্ষমতার দাপট ব্যবহার করে সোনালী ব্যাংক লোকাল অফিস থেকে গোল্ড ব্রিকস এর নামে ঋণ গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন এই ঋণটি খেলাপি অবস্থায় রয়েছে। তার একমাত্র মেয়ে ইশমাম রাইদা রহমান এ প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী। ঋণ খেলাপী থাকা এ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইশমাম রাইদা রহমানকে মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক কিভাবে করা হয়েছে এ নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছেন আশিকুর রহমান ব্যাংকটির পরিচালক নিয়োগ দিতে বিশাল অংকের টাকা গ্রহণ করেছেন। এই টাকা তার স্ত্রীর রেহানা আশিকুর রহমানের ব্যাংক একাউন্টে গচ্ছিত রেখেছেন বলে জানা যায়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.