রেজাউল করিম চৌধুরী
Published:2024-11-22 23:11:29 BdST
কপ-২৯ সমঝোতা থেকে নতুন জলবায়ু অর্থায়নের উপর সুস্পষ্ট কর্ম-কাঠামোর দাবীধনী দেশগুলোকে অবশ্যই প্রতি বছর ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে
বাকুতে চলমান বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে [কপ-২৯] বৈশ্বিক দক্ষিনের দেশগুলোর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা কপ-২৯ সমঝোতা থেকে নতুন জলবায়ু অর্থায়ন এর উপর সুস্পষ্ট কর্ম-কাঠামো এবং ধনী দেশগুলোকে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু অর্থায়নের দাবী করেন।
এর পাশাপাশি তারা আলোচনাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত ও সমাহিত করার জন্য জি-২০ নেতাদের অভিযুক্ত করেছেন। কারন এবারের কপ-২৯ সম্মেলনে তাদের বার্তা ছিলো খুবই সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত বিবরনীর যথেষ্ট ঘাটতি ছিলো। আলোচনায় গভীরতার যে প্রত্যাশা ছিলো তার সলিল সমাধি ঘটেছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
আজারবাইজানের বাকুতে চলমান কপ-২৯ ভেন্যুতে “ এলডিসি এবং এমভিসিভুক্ত দেশগুলির প্রত্যাশা এবং কপ-২৯ ” শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক দক্ষিণ এশিয়া [কানসা] থেকে জনাব শৈলেন্দ্র যশবন্ত খারাত, পাকিস্তান থেকে এসডিপিআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আবিদ সুলেরি, নেপাল থেকে জনাব অর্জুন কারকি,বাংলাদেশ থেকে জনাব শরীফ জামিল সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন ও তাদের মতামত ব্যাক্ত করেন।
উক্ত সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ থেকে ইক্যুইটিবিডি-এর জনাব আমিনুল হক।
আমিনুল হক তার প্রারম্ভিক বক্তব্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হওয়ায় উন্নত দেশগুলোর নেতাদের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, তারা এলডিসি, এমভিসি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অর্থপূর্ণ আর্থিক সহায়তা না দিয়ে প্রতারণা করেছে, বিদ্যমান আর্থিক প্রতিশ্রুতির বেশিরভাগই ঋণ-ভিত্তিক এবং বেসরকারী খাতকে তাদের মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে বলে আমরা আশংকা করছি।
তিনি বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে ২০২৫ সালের আগে নতুন এনডিসি তৈরির প্রতিশ্রুতি দাবি করেন এবং সংশোধিত ঘোষণার মাধ্যমে জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ন্যূনতম আর্থিক প্রয়োজন হিসাবে ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের দাবি করেন।
জনাব শৈলেন্দ্র যশবন্ত খারাত তার বক্তব্যে এই ব্যর্থতার জন্য জি-২০ নেতাদের অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন ছাড়াই তাদের অলঙ্কারপূর্ণ বক্তব্য কপ-২৯ আলোচনার জন্য মোটেই সহায়ক ছিলোনা, যেখানে আমরা অব্যাহতভাবে জলবায়ু অর্থায়নের অচলাবস্থাই দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, বাকুতে বৈশ্বিক উত্তরের জন্য আর কোনো অজুহাত নেই। যেহেতু আমরা কপ-২৯-এর আলোচনার একদমই দ্বারপ্রান্তে প্রান্তে চলে এসেছি, তাই সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে, উন্নত দেশগুলিকে অবশ্যই উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এই দশকের অবশিষ্ট সময়ের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু সংক্রান্ত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষমতা অর্জনে প্রয়োজনীয় জলবায়ু অর্থ প্রদান করতে হবে।
ড. আবিদ সুলেরি বলেন, আমরা প্রশমনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট কাজের কর্মসূচিতে খুব কমই অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি এবং আমরা বিশ্বাস করি যে বিনিয়োগের সুযোগের নামে শর্ত আরোপ করার যেকোনো প্রচেষ্টা বর্তমান এনডিসিকে দুর্বল করে দেবে। আমরা আইপিসিসি বিশেষজ্ঞদেরকে [আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ] এনডিসি-এর পর্যালোচনায় যুক্ত হওয়ার জন্য এবং পরবর্তী গ্লোবাল স্টকটেকের সাথে কপ-৩০ এজেন্ডাকে কীভাবে সর্বোত্তমভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায় তা বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি কপ-২৯ সমঝোতা থেকে নতুন জলবায়ু অর্থায়ন এর উপর সুস্পষ্ট কর্ম-কাঠামোর দাবী করেন।
শরীফ জামিল বলেন, আমরা দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছি যা উপকূলীয় মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য করছে। অথচ কপ-২৯ এই মানুষগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিশ্রুতি ছাড়াই শেষ হচ্ছে।
তিনি সমালোচনা করে বলেন, অভিযোজনের জন্য জলবায়ু অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় সমুদ্রের একটি ফোটা মাত্র। আমরা পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের দাবি করছি তবে সেটা হতে হবে ঋণ বহির্ভূত এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রক্রিয়ায়।
জনাব অর্জুন কারকি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন (জিজিএ) নিয়ে আলোচনার গতি স্থবির হয়ে পড়েছে তহবিল বরাদ্দে উন্নত দেশগুলির অনীহার পাশাপাশি অগ্রগতি পরিমাপের সূচকগুলিতে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে। অভিযোজন আমাদের মতো উচ্চ জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির জন্য লাইফলাইন, কিভাবে অভিযোজন তহবিল ও চাহিদার মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে আমরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।
তিনি উন্নত দেশগুলোকে ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন তহবিলে বরাদ্দ দ্বিগুণ নয় তিনগুণ বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.