মোঃ মাহবুবুর রহমান
Published:2024-12-01 15:04:51 BdST
মতিঝিল কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিসের সাব-ইন্সপেক্টর আবুল খায়ের ভূঁইয়াকোটি কোটি টাকার সম্পদের উৎস কি?
আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাব-ইন্সপেক্টর, সেগুনবাগিচা ও লালবাগ বিভাগ ইমামগঞ্জ সার্কেলে চাকরী করতো। বর্তমানে কাস্টমস ও ভ্যাট; মতিঝিল বিভাগ, জোৎস্না কমপ্লেক্স কর্মরত।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নিজ এলাকা ইটনাতে বাড়ি হওয়ার সুবাদে তার সুপারিশেই বিনা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার হরিণ চাকরিটি পেয়ে যান আবুল খায়ের ভূঁইয়া।
সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী বিনা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারী চাকরি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে তার চাকুরী যদি নিয়ম বা বিধিবহির্ভূত হয় তাহলে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানের আওতায় আসবে।
কাষ্টমস ও ভ্যাট এর কার্যালয়ে সিপাহী পদে চাকুরী পাওয়ার পর আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবন ও মান পাল্টে যেতে থাকে। কর্মকালীন সময়ে রাজস্ব আদায়ের গুরুত্বপূর্ন বিভাগ গুলোতে তিনি কর্মরত ছিলেন। কাস্টমস ও ভ্যাট এর রাজস্ব আদায়ের অক্সিজেনখ্যাত ইমামগঞ্জ, সেগুনবাগিচা ও মতিঝিল এর মত গুরুত্বপূর্ন জায়গায় কাজ করার সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে আবুল খায়ের ভূঁইয়ার। এই বিভাগে কর্মকালীন সময়েই বদলে যেতে থাকে তার ভাগ্যের চাকা।
তিনি শুধু তার নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাননি বরং বদলে গেছে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরও ভাগ্যের চাকা। ইটনা উপজেলার থানেশ্বর গ্রামের বাড়িতে করেছেন অঢেল সম্পদ।
আবুল খায়ের ভূঁইয়ার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে আল-মোকাদ্দীম, ছোট ছেলে মফী ও মেয়ে আফরা। ২০০৯ সালে সিপাহী হিসেবে উক্ত পদে যোগদান করেন। কর্মজীবন (২০০৯-২০২৪) সর্বমোট ১৫ বছর। পিতা অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক ইয়াকুব মাস্টার, থানেশ্বর ইটনা, কিশোরগঞ্জ বাসিন্দা।
তিনি বদলে দিয়েছেন তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার এর ভাগ্যের চাকা। আবুল খায়ের ভূঁইয়ার স্ত্রী এখন কোটিপতি। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার ভূইগড় মৌজার সি,এস,ও এস,এ-৭৯৩ আর,এস-৪০৯ দাগে ১১ তলা বিশিষ্ট তিলোওমা টাওয়ার নামে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ৯ কাঠা জমি প্রায় ৫ কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করলেও শেয়ার বাবদ দিতে হয়েছে প্রতিজন সদস্যকে জমি ক্রয় বাবদ ৫০-৫৫ লাখ টাকা। স্ত্রী ফারজানা আক্তার এত টাকা কোথায় পেলেন?
তথ্যসূত্র ও আমাদের নিজস্ব অনুসন্ধান মতে, ফারজানা আক্তার একজন গৃহিণী। ফারজানা আক্তারের পৈত্রিক সূত্রে আর্থিক অবস্থা এতটা সচ্ছল নয় যে মেয়েকে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের জমির শেয়ার কিনে দিবে। এছাড়াও উক্ত বহুতল ভবন নির্মানে ন্যূনতম ব্যয় হবে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকারও অধিক। সেই হিসেবে ফারজানা আক্তারকে শেয়ার বাবদ আরও ১ থেকে সোয়া কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে তিলোতমা টাওয়ার নির্মাণে।
একজন সিপাহী থেকে (১৭ তম গ্রেডের কর্মচারী) যার সর্বসাকুল্যে বেতন হয়তো ২৫,০০০/- টাকা। ২০০৯ সালে সিপাহী পদে যোগদান করে ২০২০ সাল পর্যন্ত সিপাহী পদে কর্মরত ছিলেন। ২০০৯-২০২০ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে সিপাহী পদে সর্বোচ্চ ৩০-৩৬ লাখ টাকা বেতন ভোগ করলেও নিজে অংশীদারীভিত্তিতে তুষারধারায় গড়ে তুলেছেন ১০তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন।
উক্ত ভবনে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করে থাকেন। যার প্রতিটি ফ্লাটের মুল্যে নূন্যতম ৫০ লাখ টাকা। ২০২০ সালে সিপাহী থেকে পদোন্নতি পেয়ে সাব-ইন্সপেক্টর হয়ে (১৬ গ্রেড) সর্বমোট ৩৫ হাজার টাকা বেতন পান বলে তথ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। তুষারধারাতে তার কোটি টাকা মূল্যের হার্ডওয়ার দোকান রয়েছে।
একজন সিপাহী বা সাব-ইন্সপেক্টর গ্রামের বাড়ীতে মার্কেটের জন্য জমিক্রয়, চাষাবাদের জন্য জমি ক্রয় ও ঢাকাতে স্ত্রীর নামে তিলোতমা টাওয়ার নির্মানে অংশীদার যেখানে বিনিয়োগ হবে সর্বমোট জমি ক্রয় সহ ১ কোটি ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। নিজে তুষারধারাতে করেছেন আমার বাড়ী নামক বহুতল ভবনে ফ্লাট। এত সম্পদ ও অর্থবিত্তের উৎস কি? তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে কাস্টমস ও ভ্যাট অফিসের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের কি পরিমান অবৈধ সম্পদ রয়েছে?
আমাদের নিজস্ব অনুসন্ধানে প্রায় এক ডজন সাব ইন্সপেক্টর ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের তথ্য উঠে এসেছে যারা প্রত্যেকেই কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক। দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে শুধু এদের দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের দুর্নীতি রোধ করতে হলে স্পেশাল আলাদা কমিশন গঠন করা জরুরী।
রাষ্ট্রের অক্সিজেন হলো রাজস্ব। দেশের প্রতিটি জনগনের ট্যাক্স ও ভ্যাট এর টাকায় দেশ পরিচালিত হয় কিন্তু সর্ষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে তাহলে ভূত তাড়ানো হবে কিভাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা সময়ের দাবী।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.