January 15, 2025, 4:59 am


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2024-12-08 19:05:46 BdST

গণ মামলায় বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে-ডিএমপি কমিশনার


৫ আগস্টের পর গণহারে মামলা দেয়া হয়েছে। এসব গণ মামলায় গণ আসামি থাকবে না। যেসব বাদী মামলা বাণিজ্য করছেন তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা হবে। মামলা অপকর্মে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। জুলাই আগস্টের ঘটনায় যেসব সাংবাদিকদের মামলা আসামি করা হয়েছে তদন্তে তারাও বাদ পড়বেন। আজ রবিবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার শেখ মোঃ সাজ্জাত আলী একথা বলেন । তিনি বলেন, জুলাই আগস্টে পুলিশের ভূমিকা সঠিক ছিল না । এত লোকের মৃত্যু হওয়ার কথা না । ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। মামলা এবং গ্রেফতার বাণিজ্যে কিছু পুলিশ সদস্য জড়িত বলে স্বীকার করেন তিনি। ৫ আগস্টের পর পুলিশ নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যায পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ কমিশনার মো. সাজ্জাত আলী আরো বলেন, ৫ আগস্টের পর ঢাকার বিভিন্ন থানায় সংখ্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় বাদী তার নিজের স্বার্থে অনেক আসামি করেছেন। এখন মামলা থেকে বাদ দিতে আসামীদের কাছ থেকে টাকা দাবি করছে। যা রীতিমতো চাদাঁ দাবি করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে বাদীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা নেয়ার জন্য প্রত্যেক থানার ওসি এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে কড়া নিদের্শ দেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এসব গণ-মামলার গণ-আসামি থাকবে না।


তদন্ত শেষে নির্দিষ্ট ঘটনায় যেসব আসামির নাম আসবে ঠিক তাদের নাম মামলায় থাকবে। ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে মামলার বাদী আসামীদের নিকট থেকে মোটা দাগের টাকা নিচ্ছে। আসামীরাও মামলা থেকে অব্যবহতি পাবে আশায় বাদীকে টাকা দিচ্ছে। কিন্তু বাদীর তো কোন ক্ষমতা নেই মামলা থেকে আসামীকে বাদ দেয়ার। তবে বাদীর সাথে আয়ুর কোন যোগসাজশ থাকলে তাকেও ছাড় দেয়া হবেনা। যেসব মামলায় বাদী বাণিজ্য করছেন তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা হবে। মামলা অপকর্মে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।' জুলাই আগস্টের ঘটনায় যেসব সাংবাদিকদের মামলা আসামি করা হয়েছে তদন্তে তারাও বাদ পড়বেন।


তিনি বলেন, জুলাই আগস্ট পুলিশের ভূমিকা সঠিক ছিল না । এত লোকের মৃত্যু হওয়ার কথা না । ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। মামলা এবং গ্রেপ্তার বাণিজ্য কিছু পুলিশ সদস্য জড়িত বলে স্বীকার করেন তিনি। ৫ আগস্টের পর পুলিশ নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যায় অন্য পুলিশ সদস্যরা।
ঢাকা শহরে সাত শতাংশ সড়ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের সেরা বিশেষজ্ঞ আনলেও যানজট নিরসন করা সম্ভব নয় এত কম সড়কে। যানজট নিরসনে প্লানিং এ প্রচুর ভুল আছে। তারপরও ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। দক্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, ঢাকার অলিতে গলিতে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশায় ছেয়ে গেছে। দেখা গেছে এই সব অটোরিকশার মালিক পুলিশ, ডাক্তার ও ব্যবসায়ী। এদেরকে থামানোর উদ্যোগ নিয়েও কাজ হচ্ছেনা। এমন একটা সময় আসতেছে এই অটো রিকশার জন্য পায়ে হেটেও চলাচল করা মুশকিল হয়ে পড়বে।

একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের প্রতি আস্থা ফিরে পেতে সময় লাগবে। পুলিশ নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ সহ মিডিয়ার সার্বিক সহযোগিতা থাকলে পুলিশ খুব তাড়াতাড়ি জনগণের কাছে আস্থার প্রতিক হয়ে উঠবে। পুলিশ বাহিনী না থাকলে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে একটাই সত্য। ছিনতাই বেড়ে গেছে প্রশ্নে তিনি বলেন, আগের চেয়ে কিছু টা কমে আসছে। এবিষয়ে ডিএমপির বিভিন্ন থানা সহ ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে আলাদা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশ কমিশনার শেখ মো: সাজ্জাত আলী, এনডিসি বলেছেন, পুলিশ ও সাংবাদিক সমাজের কল্যাণেই কাজ করে থাকে। পুলিশ ও সাংবাদিক একসাথে কাজ করলে দেশ ও সমাজ সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে, অপরাধ দূর হবে ও সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, দুই কোটি সম্মানিত নগরবাসীর নিরাপত্তায় আমরা দিন-রাত কাজ করছি। নগরবাসীকে যেন তাদের কাঙ্খিত আইনানুগ সেবা দিতে পারি সেজন্য আপনাদেরকে আমাদের পাশে থাকতে হবে। সমাজে নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আপ.নাদের ভূমিকা অনেক। কারণ আপনারা হলেন সমাজের দর্পণ। আপনারা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারেন।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ শহরের রাস্তা অনেক কম কিন্তু যানবাহন অনেক বেশি। এই সীমাবদ্ধতার মাঝেও যেন আমরা ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারি ও মানুষ যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে সেই লক্ষ্যে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে।

কমিশনার বলেন, জুলাই-আগস্টকে কেন্দ্র করে যে সকল মামলা হয়েছে, সেই মামলাগুলোতে যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা জড়িত নয় তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জুলাই-আগস্টের ঘটনার মামলাগুলোতে শুধু মাত্র হয়রানি করার জন্য নিরপরাধ ব্যক্তিদেরকে যারা আসামি করেছে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ক্র্যাবের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, জনগণের পুলিশ তৈরি করতে আপনাদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও তিনি বলেন, ডিএমপির সাথে ক্র্যাবের যেসকল কর্মসূচি রয়েছে সেগুলো অব্যাহত থাকবে।

সভায় ক্র্যাবের সভাপতি কামরুজ্জামান খান বলেন, ঢাকা মহানগরীতে চুরি, ছিনতাই, মাদকের মত অপরাধের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অতীতের ন্যায় ক্র্যাব ঢাকা মেট্রোপলিটনের পুলিশের পাশে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সভায় উপস্থিত ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক ও পুলিশ উভয়েই অপরাধ নিয়ে কাজ করে থাকে। আমরা একে অপরের পরিপূরক। ঢাকা মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ডিএমপির পাশে থাকবে ক্র্যাবের সাংবাদিকরা।

অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার ফারুক আহমেদ (অ্যাডমিন) বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নৈরাজ্যকারীদের দমন করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা দেশের জন্য অনেক করেছে। এখন তাদেরকে বুঝিয়ে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করাতে হবে। এটার জন্য মিডিয়া সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা নিতে পারে।
সভায় ডিএমপির অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ; অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোঃ ইসরাইল হাওলাদার; অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স এন্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মোঃ শওকত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এন মোঃ নজরুল ইসলাম, পিপিএম-সেবা বক্তব্য রাখেন। এসময় ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা এবং ক্র্যাবের সভাপতি কামরুজ্জামান খান, সহ-সভাপতি শাহীন আবদুল বারী ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ক্র্যাব সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ইসি সদস্যবৃন্দ ক্র্যাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং খোলামেলা আলোচনা করে কমিশনের সঙ্গে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.