May 8, 2025, 7:15 am


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-05-07 17:25:47 BdST

আনপ্যারালাল লিডার বেগম খালেদা জিয়া


১৯৯০ এর গণ অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে যে, পরবর্তী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসছে। কিন্তু সব আন্দাজ-অনুমান ভুল প্রমাণিত করে ক্ষমতায় আসেন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দেশ-বিদেশে বিষয়টি নিয়ে বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। বিদেশি সাংবাদিকরা এসে বিএনপির বিজয়ের কারণ জানতে চান।

সুইডেন থেকে আসা এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেছিলেন, "আমাদের দেশে ঘরের বউ আসলে তার হাতেই ঘরের চাবি দেয়া হয়"। বোনের হাতে চাবি দেয়া হয় না। কারণ বোনের চেয়ে বউকে বেশি দায়িত্বশীল মনে করা হয়।

এখানে বউ বলতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়াকে বুঝানো হয়েছিল। আর বোন বলতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনাকে বুঝানো হয়েছিল। সাধারণ মানুষ আবারও প্রমাণ করলো বেগম খালেদা জিয়া এদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক। তিনিই সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণে, উত্তরাধিকারের দায়ে রাজনীতিতে আশা গৃহবধ খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। পরবর্তীতে তিনি আরো দুই দফা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার সাফল্য যেমন আছে, তেমনি আছে ব্যর্থতাও। কিন্তু মানুষ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া নিজেকে অত্যন্ত উঁচুদরের প্রমাণ করতে পেরেছেন। আচার-আচরণ, সভ্যতা-ভব্যতা ও উন্নত রুচি-সংস্কৃতি দিয়ে তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে হয়ে আছেন বসরার গোলাপের মত অনিন্দ্রসুন্দর এক মানুষ। যার সৌরভ ও সৌন্দর্য পরস্পরের প্রতিযোগী।

জোর-জবরদস্তি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নানা বিশ্লেষণের পালক লাগানো হলেও নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ এখনো তৃতীয় দুনিয়ায় পিছিয়ে থাকা একটি দেশ। যেখানে জীবন-মান, অর্থনীতি থেকে শুরু করে হাজারো সমস্যার ঘনঘটা, রাজনীতি ধামাধরা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়নি, সভ্যতার-সংস্কৃতির মান নিচু, জীবন অতিমাত্রায় এবড়োথেবড়ো এমন দেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া যে সুষমা চর্চা করেছেন তা উদাহরণ হয়ে থাকবে।

দল হিসেবে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। সেই দলের নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক মিথ্যাচার ও নানামুখী ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে বিএনপি এবং খালেদা জিয়াকে অপমান-অপদস্ত করলেও অবচেতন এবং একটা বড়ো উপকারও করে ফেলেছেন। তা হচ্ছে, শেখ হাসিনার অপরিচ্ছন্নতায় বেগম খালেদা জিয়ার মানবিক নান্দনিকতা উদ্ভাসিত হয়েছে। প্রতিপক্ষ হিসেবে নীতিগত সমালোচনা করা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব হলেও খালেদা জিয়া তা করেননি। শেখ হাসিনা প্রায়শই বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সমালোচনা করতেন। অনেক সময় তিনি এমন সব বিষয়ের অবতারণা করতেন যা ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা খালেদা জিয়ার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যেতেন অথবা নির্দোষ জবাব দিতেন।

বেগম খালেদা জিয়া এক-এগারোর ঝড়-ঝাপটা মোকাবেলা করেছেন। পতিত সরকারের অবসানের পর কারাবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তারেক রহমানকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠিয়ে নিরবে নিভৃতে কেঁদেছেন। কিন্তু কখনো বুঝতে দেননি নিজের কষ্টের কথা। এতো কিছুর মধ্যেও দলের নেতাকর্মীদের সাহস যুগিয়েছেন। এক-এগারোর নাটের গুরুরা আস্তে আস্তে পাততাড়ি গুটিয়ে ঘাপটি মেরেছেন। কেউবা বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন, কেউ মারা গেছেন।

বেগম খালেদা জিয়ার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার সরলতা। তিনি মেকি কিছু পছন্দ করেন না। তিনি ধর্মনিষ্ঠ মানুষ। কিন্তু জনসন্তুষ্টির জন্য সেটাকে প্রচারণায় আনেননা। আবার নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দ গোপনও করেননা। রাজনীতির প্রতিযোগিতায় তাকে ছোট করার জন্য শেখ হাসিনা প্রায় সময় বেগম খালেদা জিয়ার পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজগোছ নিয়ে কটূক্তি করে নিজের সাদামাটা ভাবের কথা প্রচার করতেন। তিনি মনে করতেন তাতে বেশি জনপ্রিয়তা হওয়া যাবে। কিন্তু জানা যায়, শেখ হাসিনার বিউটিশিয়ানরা নাকি তাকে পরামর্শ দিতেন যে, তিনি যেন খালেদা জিয়ার সাজগোসের সমালোচনা না করে নিজেও সাজগোছ করে লাবণ্য বাড়ান। ওই পরামর্শদাতার মধ্যে আওয়ামী লীগের এমন একজন ছিলেন তিনি নাট্যঅভিনেতা থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন। তাদের যুক্তি ছিলো বেগম খালেদা জিয়ার রুচিসম্মত সাজগোছ তার ব্যক্তিত্বকে উজ্জ্বল করে। তাই সমালোচনা না করে নিজের উজ্জলতা বাড়ানো উচিত। পরামর্শ কানে নিয়ে সত্যি সত্যি শেখ হাসিনা নিজেই সাজগোছ বাড়িয়ে দেন। একই সাথে বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা বন্ধ করেন।

এক সাহসী অধ্যায়ের নাম বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি শুধু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী নন, তিনি নিজ গুণে, নিজ ত্যাগে ও নিজ সংগ্রামে নিজেকে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক সাহসী অধ্যায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ১৯৮২ সালে বিএনপির নেতৃত্বে আসার পর থেকে তিনি হয়ে ওঠেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রধান মুখ। এরশাদবিরোধী গণআন্দোলনে তাঁর আপসহীন নেতৃত্বই ছিল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার অন্যতম নিয়ামক।
তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এক ঐতিহাসিক অধ্যায়।

নীতির প্রশ্নে তিনি আপসহীন। বিগত বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাবরণ করেছেন। কিন্তু কখনোই নত হননি, কখনোই আপস করেননি। তাঁর নাম আজও প্রতিধ্বনিত হয় গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী হিসেবে।

তাঁর প্রত্যাবর্তন কেবল একজন নেত্রীর ফিরে আসা নয়, এটি গণতন্ত্রের সংগ্রামে নতুন প্রেরণা, নতুন আশার সঞ্চার।

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক খালেদা জিয়াকে সম্মান দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাষ্ট্রীয় ভাবেও দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। মনে হচ্ছিল সাবেক নয়, ফিরছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। সরকার না চাইলে এমনটা হতো না। যেমনটা হয়নি গেলো দেড় দশকে।

বলা যায়, আপোষহীন নেত্রীর দেশে ফেরায় গণতন্ত্রের আকাশ থেকে সরে গেছে মাইনাসের কালো মেঘ! কেটে গেছে অমঙ্গলের শঙ্কা। এখন সময় ভেদাভেদ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার পালা। দেশ ও দশের কল্যাণে কাজ করা। ৯০ পরবর্তীতে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্য রাজনীতিক দু'জন। একজন জনরোষে ভারত পালিয়েছেন। অন্যজন গণমানুষের ভালোবাসায় কারামুক্ত হয়েছেন। তিনি খালেদা জিয়া। যিনি নিজ দল ছাড়াও আওয়ামী লীগসহ সকল দল এবং সাধারণ মানুষের কাছে সমাদৃত। দেশের রাজনীতির ফিনিক্স পাখি। যতবারই তাঁকে দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে, মানুষের ভালোবাসায় ততবারই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অভিজ্ঞতা, সফলতা ও বয়সে এখন দেশের অভিভাবক তুল্য খালেদা জিয়া। দেশ গঠনে এখন তাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তরুণ নেতারাও তাঁর কাছ থেকে শিখবেন বলে বিশ্বাস। পাশাপাশি বিএনপি নেতাকর্মীরাও শিক্ষা নিবেন। নইলে সম্মান তো দূরে থাক সহমর্মিতাও জুটবে না।

ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী না। সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় চিত্র। আল্লাহ্ যাকে সম্মানিত করেন বান্দা কখনো তার কিছুই করতে পারেন না। বেগম খালেদা জিয়া তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি একজন চিন্তাশীল এবং ধৈর্যশিলা মহীয়সী নারী। খারাপ কথা অথবা কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা দিয়ে কাউকে অপদস্ত করার মন-মানসিকতা তিনি লালন করেন না। তাই তিনি বিপদে-আপদে সাহায্য চেয়েছেন আল্লাহর কাছে।

২৪ এর অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনাকে নিয়ে টু - শব্দ তিনি করেননি। হয়তো এই মহানুভবতা তার পারিবারিক শিক্ষা। যে শেখ হাসিনার জন্য তিনি দেশ ও জনগণের সেবা করা থেকে বঞ্চিত, পরিবারের সুখ শান্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, কারাবন্দী, অসুস্থতা, চিকিৎসা না পেয়ে ক্রমাগত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে, তারপরও তিনি রাগ ক্রোধ সংবরণ করে নিজেকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের উচ্চতায় নিয়েছেন। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিত্ব দেখে দলের নেতাকর্মী সমর্থকরা দেশনেত্রীর মতো হবার চেষ্টা করবে এমনটাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। তাদের মতে,একজন শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মতো, একজন বেগম খালেদা জিয়ার মতো, তাদের যোগ্য উত্তরসূরী তারেক রহমানের মতো আদর্শবান হয়ে সকলেই দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত হবেন।

বাংলাদেশে এই মুহুর্তে নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা, নির্যাতন, সংগ্রাম, ত্যাগ, দেশপ্রেম, আপোষহীন ব্যক্তিত্বসহ সার্বিক বিবেচনায় আন প্যারালাল লিডার বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর এই গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব বর্তমান ক্রান্তিকাল পেরিয়ে দেশকে একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্রের পথে উত্তোরণে সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা করেন আপামর জনসাধারণ। দেশ "বাচাঁও মানুষ বাচাঁও" দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই শ্লোগান ধারণ করতে হবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশব্যাপী বিএনপির উশৃংখল কিছু নেতা দখল বাণিজ্যে মেতে উঠেন। যা এখনো চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বার বার বারণ করলেও তা কর্ণপাত করেননি চাঁদাবাজরা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী মহল।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে খালেদা জিয়া আত্মপ্রকাশ করেন। সেদিন তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। একই বছর ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া প্রথম বক্তব্য রাখেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হন এবং এপ্রিল মাসের প্রথমে বিএনপির এক বর্ধিত সভায় তিনি ভাষণ দেন। সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কয়েক মাস পরেই খালেদা জিয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। এসময় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮০ দশকে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশজুড়ে খালেদা জিয়ার ব্যাপক পরিচিত গড়ে ওঠে। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। দেশনেত্রী তার রাজনৈতিক জীবনে যতগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তার সবগুলোতেই জয়লাভ করেছেন।

কথিত আছে, শেখ হাসিনার চেয়ে খালেদা জিয়া নারীদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। তাই তিনি নারীদের ভোট বেশি পেয়ে থাকেন।

২০০১ সালে ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে খালেদা জিয়ার সরকার একের পর এক বিতর্কের মুখে পড়ে। সেই বিতর্ক থেকে তার দল ও সরকার আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ঘটে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার দল বিএনপির ব্যাপক ভরাডুবি হয়। এরপর থেকে দলটি রাজনৈতিকভাবে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দলের নেতাকর্মীদেরকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে পতিত সরকার। রাজধানী ঢাকা সহ দেশব্যাপী কোথাও মিটিং মিছিল করতে পারেনি বিএনপি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অনেকটা চাপে পড়ে যায়।

খালেদা জিয়ার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এসে হাজির হয় তার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলা। পতিত সরকারের রোষানলে পড়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হবার কারণে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারেননি। দেশে-বিদেশে সে নির্বাচন প্রবল বিতর্কের মুখে পড়ে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে বেগম খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগারের বাইরে ছিলেন। যদিও এজন্য তাকে নানা বিধিনিষেধ পালন করতে হয়। যার মধ্যে ছিল- রাজনীতিতে অংশ না নিতে পারা, কোনো ভাষণ বা বক্তব্য না দেয়া, বিদেশ যেতে না পারা ইত্যাদি।

গত বছরের ৫ই আগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর চলতি বছরের ৮ই জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। টানা ১৭ দিন চিকিৎসা শেষে ২৫ জানুয়ারি তাকে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ৬ই মে (মঙ্গলবার) দেশে ফিরেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

যে মাটি ও মানুষকে এত ভালোবাসেন, যে মাটির জন্য সারা জীবনের এত আপোষহীনতা সে দেশের মাটি ও মানুষ দেশরত্নকে বরণ করে নিবে এটাই চির সত্য। তিনি বলেছিলেন, "বিদেশে আমার কোন ঠিকানা নেই। বাংলাদেশই আমার শেষ ও একমাত্র ঠিকানা।" তিনি আরো বলেছিলেন," আমাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা আর ওদের হাতে গোলামী জিঞ্জির।"

বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের উক্তি গত ৬ই মে সারা পৃথিবী অবলোকন করল, বাংলাদেশ মানেই খালেদা জিয়া আর খালেদা জিয়া মানেই বাংলাদেশ।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.