September 18, 2025, 5:49 pm


নেহাল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক

Published:
2025-06-05 13:09:51 BdST

বিশ্ব পরিবেশ দিবস এবং রবীন্দ্রনাথ


 

দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর,
হে নব সভ্যতা। হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
দাও সেই তপোবন, পুণ্যছায়া রাশি,
গ্লানিহীন দিনগুলি, সেই সন্ধ্যাস্নান
সেই গোচারণ, সেই শান্ত সামগান,
নীবার-ধান্যের মুষ্ঠি বল্কল-বসন,
মগ্ন হয়ে আত্মমাঝে নিত্য আলোচন,
মহাতত্ত্বগুলি। পাষাণপিঞ্জরে তব,
নাহি চাহি নিরাপদে রাজভোগ নব।
চাই স্বাধীনতা, চাই পক্ষের বিস্তার
বক্ষে ফিরে পেতে চাই শক্তি আপনার;
পরানে স্পর্শিতে চাইছিড়িঁয়া বন্ধন,
অনন্ত এ জগতের হৃদয়স্পন্দন।

পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে ১৪৩টিরও বেশি দেশ অংশগ্রহণ করে। এই বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম হচ্ছে, প্লাস্টিক-দূষণ মোকাবিলার পথ সন্ধান করা। এবার তাই ক্যাম্পেনের নামকরণ হয়েছে, ‘BeatPlasticPollution’।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে গড়ে ৪০ কোটি টনেরও বেশি প্লাস্টিক তৈরি হয়। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য, বাকি প্লাস্টিকের বিরাট অংশ জলাশয়, নদী, সমুদ্রে এসে জমে থাকে। এর মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক খাবার, জল ও বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। ছড়িয়ে পড়ে নানা ভাবে। এবারের থিম সেই প্লাস্টিক বর্জন। অর্থ্যাৎ, কিভাবে এই প্লাস্টিকের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়, কিভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি করে এনিয়ে কাজ করার জন্য উদ্দীপিত করা যায়, সেটিই এবারের থিম।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানুষ ও পরিবেশ নিয়ে অনুষ্ঠিত স্টকহোম কনফারেন্সে। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়কে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যোগ নিয়েছিল। এই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭৩ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ জুন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিবেশ দিবস পালিত হয়ে আসছে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর সব দেশ এবং তাদের নাগরিকদেরকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ উন্নয়নের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেওয়া এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সত্যিকার অর্থেই আধুনিক মানুষ। তার ছিলো তৃতীয় নয়ন। তিনি দেখতে পারতেন অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। তিনি যখন বলেন উন্নয়নের নামে যা আমাদের গেলানো হয়, তার ভেতরকার 'শুভঙ্করের ফাঁকি'টির ভালোবাসার ডাকনাম 'সভ্যতা'
রবীন্দ্রনাথের এমন উক্তি নিশ্চয়ই আমাদের নতুন করে ভাবতে সাহায্য করবে।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও নানা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। সুস্থভাবে মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে বিশ্বপরিমণ্ডলে কল্যাণমূলক প্রচেষ্টা জোরদারের পাশাপাশি বাংলাদেশেও পরিবেশ বিষয়ক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করা। পাশাপাশি বৈশ্বিকভাবে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে জাতিসংঘের পরিবেশ অ্যাসেম্বলির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রণয়নের কাজ চলছে।

বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ৫ জুন সরকারি ছুটি থাকায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আগামী ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি পালন করবে।

প্রধান উপদেষ্টা ওইদিন বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা ও পরিবেশ মেলার উদ্বোধন করবেন। এছাড়া তিনি অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিবেশ পদক, বৃক্ষরোপণ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জাতীয় পদক বিতরণ করবেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.