November 8, 2025, 8:50 pm


সামিউর রহমান লিপু

Published:
2025-11-08 18:52:19 BdST

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনত্যাগ সংগ্রাম আর আস্থার পুরস্কার পেয়েছি: বিএনপি প্রার্থী শরীফুজ্জামান


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শরীফুজ্জামানকে মনোনীত করেছে।

দীর্ঘ ৩৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগ, সংগ্রাম এবং নেতা-কর্মীদের পাশে থাকার পুরস্কার হিসেবে তিনি এই মনোনয়ন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সালেও দল তার প্রতি আস্থা রেখেছিল।

দলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন কেন্দ্রের সময়োপযোগী এই সিদ্ধান্ত আগামী দিনে এই আসনে ধানের শীষকে বিজয়ী করবে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মুক্তিপাড়ার বাসিন্দা মো. শামসুজ্জোহা ও সাহিদা বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় শরীফুজ্জামান ১৯৭৩ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো. শামসুজ্জোহা একজন ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আলমডাঙ্গা উপজেলার পাঁচকমলাপুর গ্রামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। সেখানে বর্তমানে বিনা খরচে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

পারিবারিকভাবে শিক্ষানুরাগী পরিবারের সন্তান হওয়ায় ছোট থেকেই আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে পরিচয় ঘটে শরীফের। শরীফ চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছাত্রজীবনে মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে তিনি রাজনীতিতে নাম লেখান। তিনি বরাবরই বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। রাজনীতির বাইরে তার পরিবারের সমাজসেবায় অনেক অবদান রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে শরীফ নিজ অর্থায়নে সেখানে পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, শরীফুজ্জামান দুঃখ দেখলেই তা দূর করতে দৌড়ান। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা শহরের সাতগাড়ীতে চান মিয়ার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই পরিবারের সদস্যদের ‘আর্তনাদ’ শুনে ছুটে যান শরীফুজ্জামান। তিনি অর্থ ছাড়াও খাদ্য ও আসবাব দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি ঘর মেরামতের দায়িত্বও নেন।

ভুক্তভোগী চান মিয়া বলেন, ‘আবার নতুন করে ঘর হয়েছে। সব সহায়তা করেছেন শরীফুজ্জামান শরীফ।’ শরীফুজ্জামান নিজেও প্রতি বছর চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়েক শ মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীর মধ্যে বৃত্তি বিতরণ করে আসছেন। অসংখ্য মানুষের চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা দিতে ছুটেছেন ও ছুটছেন তিনি।

তার কাছ থেকে উপকার পাওয়া শিক্ষার্থী শামীমা খাতুন বলেন, ‘এসএসসিতে ভালো ফলাফলের পরও আর্থিক সংকটে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। বিএনপি নেতা শরীফুজ্জামানের উদ্যোগে শিক্ষা বৃত্তি পেয়ে আমি পড়শোনা চালিয়ে যাই। তাই শুধু নয়, পড়শোনা চালিয়ে যেতে আরও খরচের জোগান তিনিই দিয়েছেন।’

উপকার পাওয়া আরও একজন আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ক্যান্সারে আক্রান্ত তার স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ চালাতে শরীফুজ্জামান অকুণ্ঠ সহযোগিতা করেছেন। এলাকাবাসীও জানান, শরীফুজ্জামান নিজের খেয়ে এভাবেই মানুষের উপকার করে বেড়ান।

শরীফুজ্জামান জানান, তিনি শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯০ সালে ছাত্রদলে যোগদানের মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। নিজ নেতৃত্বের গুণে ১৯৯৩ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হন। যদিও নানা কারণে এই সম্মেলনে কমিটি ঘোষণা করেননি নেতারা।

১৯৯৫ সালে যুবদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন এই রাজনীতিক। নানান ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ২০১৭ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ২৮ নম্বর সদস্য হন শরীফ। এরপর থেকেই দলের মধ্যে বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে এসেছেন। আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন উপেক্ষা কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার কারণে ২০১৮ সালে তাকে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন।

২০২২ সালে ভেঙে পড়া বিএনপির যে কমিটি গঠন করা হয় তাতে শরীফুজ্জামান জেলা কমিটির সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। আগামী সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপি বিজয়ী হবে বলে প্রত্যাশা করেন শরীফ।

তিনি বলেন, জেলা, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপিতে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নির্বাচনী এলাকায় ২০৭টি কমিটি করা হয়েছে। ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট এসব কমিটির সব সদস্য আমার সঙ্গে রয়েছে। যে কারণে আমি আগামী নির্বাচনে বিজয়ের স্বপ্ন দেখি।

চুয়াডাঙ্গা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মী বলেছেন, চুয়াডাঙ্গায় শামসুজ্জামান দুদুর মতো বড় মাপের নেতা আছেন। কিন্তু দলের দুঃসময়ে কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সংগ্রাম করেছেন শরীফুজ্জামান। যে কারণে দল প্রার্থী নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটাররাও তাদের মূল্যবান রায়ে তা প্রমাণ করবেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা দোকান মালিক সমিতির সদস্য সচিব সুমন পারভেজ খান বলেন, ভঙ্গুর বিএনপিকে টেনে তুলেছেন শরীফুজ্জামান। জেলাবাসীর সেবা করার যে দায়িত্ব সেটি তারই প্রাপ্য।

নেতা-কর্মীরা আরও বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এই চুয়াডাঙ্গারই সন্তান। কিন্তু তিনি সুখে-দুখে কখনই চুয়াডাঙ্গাবাসীর পাশে ছিলেন না। তিনিও এই আসনের প্রার্থী ছিলেন। তাকে মনোনীত করা হলে এই আসন ধরে রাখা কষ্টকর হতো। এজন্য দলের সঠিক সিদ্ধান্তে শরীফুজ্জামান প্রার্থী হওয়ায় তারা উৎফুল্ল বলে জানান।

চুয়াডাঙ্গা জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব বলেন, শামসুজ্জামান দুদু ঢাকায় থাকেন। তিনি বসন্তের কোকিল। নির্বাচন এলেই তাকে এলাকায় দেখা যায়। দলের দুঃসময়ে তাকে চুয়াডাঙ্গাবাসী কখনই পাশে পাননি।

একাধিক সাধারণ ভোটার তাদের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ পেলে এ জেলার মানুষ কখনই নেতা নির্বাচনে ভুল করবে না। উন্নয়নের স্বার্থে তারা যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.