নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:2025-11-25 21:37:36 BdST
স্থানীয় এনজিও ছাড়া কক্সবাজারে কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে সরব সিএসও এনজিও ফোরাম
আজ কক্সবাজারের প্রেস ক্লাবে কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) এর আয়োজনে “UNHCR কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিওদের সক্ষমতাকে অবজ্ঞা করেছে” শীর্ষক ব্যানারে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সিসিএনএফ-এর কো-চেয়ার রেজাউল করিম চৌধুরী, হেল্প কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম, অধিকার কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট আবু মুসা, অর্ণব কক্সবাজারের প্রধান নুরুল আজিম, সিইএইচআরডিএফ এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ ইলিয়াস মিয়া, এসবিএসকেএস আর নির্বাহী পরিচালক নুরুল আমিন ও মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহসহ সিসিএনএফ এর অন্যন্য সদস্যবৃন্দ এবং কক্সবাজারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের মোঃ শাহিনুর ইসলাম বলেন, জানা গেছে UNHCR ২০২৬-২০২৯ অংশীদারিত্বের জন্য কক্সবাজারের সকল স্থানীয় এনজিওর সাথে অংশীদারিত্ব বন্ধ করে আন্তর্জাতিক ও কক্সবাজারের বাইরের এনজিওকে দিয়েছে। অথচ, ২০২৫ সালের অক্টোবরে স্থানীয়করণ গাইডলাইন (UNCHR Guidelines on Localization, October 2025) প্রকাশ করে। যাতে তারা স্থানীয় অংশীদারিত্বের উপর অধিক গুরুত্ব দেয়।
তিনি আরো বলেন, UNCHR ২০২৫ সালের অংশীদারিত্বে কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিও থাকলেও, ২০২৬-২০২৯ সালের অংশীদারিত্বের জন্য তারা কোন স্থানীয় এনজিওকে তহবিল প্রদান করবে না। তারা শুধুমাত্র জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে তহবিল প্রদান করবে। তাদের এই সিদ্ধান্ত কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিওদের সক্ষমতাকে অস্বীকার ও অবজ্ঞা করেছে। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওদের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। UNHCR এই সিদ্ধান্ত তাদের স্থানীয়করণ প্রতিশ্রুতির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাই, তিনি তাদের ২০২৬-২০২৯ অংশীদারিত্বের সিদ্ধান্তকে বাতিলের দাবি জানান।
এ্যাডভোকেট আবু মুসা বলেন, বিশ্বব্যাংক কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের জন্য ঋণ এবং রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান (মোট ৭০০ মিলিয়ন ডলার) অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। অথচ তারা এই বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় স্থানীয় এনজিও/সিএসও-গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেনি।
তিনি এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার প্রতিবাদ করেন। কারণ স্থানীয় মানুষের জন্য ঋণ এবং রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা। পাশাপাশি, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে জাতিসংঘের একটি সংস্থা রোহিঙ্গা জন্য ক্যাম্পে আবাসন নির্মাণ করবে। তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নত আবাসনের সিদ্ধান্তকে তিনি সাধুবাদ জানান।
কিন্তু তিনি বলেন, এই আবাসনগুলো অবশ্যই প্রিফ্যাব্রিকেটেড বা পূর্ব নির্মিত ঘর হতে হবে। কোনো স্থায়ী কাঠামো তৈরির অনুমতি দেওয়া যাবে না। স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় এনজিও/সিএসও-দের সাথে পরামর্শ করে এর বিস্তারিত নকশা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকে কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মানবিক সাড়াদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
তিনি তাদের এই কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর তহবিল সংগ্রহ এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা ও ভূমিকাকে সাধুবাদ জানান।
কিন্তু তিনি বলেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো যেমন, একশন এইড, এক্টেড তাদের উৎপত্তি অন্য দেশে হলেও তারা কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিওগুলোর সাথে তহবিল পাবার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আইএনজিওগুলোর উচিত তাদের নিজ দেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরিণ থেকে নয়।
মোঃ ইলিয়াস মিয়া বলেন, কক্সবাজার প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা জনসংখ্যা কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, উখিয়া এবং টেকনাফে প্রতিদিন প্রায় ২৫ মিলিয়ন লিটারেরও বেশি পানি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় মানুষের ভবিষ্যৎ পানির নিশ্চয়তার কথা বিবেচনা করে এখনই ক্যাম্পে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করতে হবে এবং বিকল্প ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
তিনি নাফ নদীর পানিকে ট্রিটমেন্ট করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ করার উপর জোর দেন এবং ভূ-উপরিভাগের পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে বলেন। পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে ক্যাম্পের পাশে ৩০০ একর নষ্ট জমি চাষাবাদের উপযোগী করতে বলেন।
আবুল কাশেম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘকে ঘোষণা করতে হবে যে, তারা কক্সবাজারে কিভাবে বিশ্বব্যাংকের তহবিলে স্থানীয় এনজিও/সিএসওগুলোর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, কক্সবাজারের বাইরে থেকে 'আমদানিকৃত' কোনো এনজিও এই তহবিলের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না।
উল্লেখ্য যে, কক্সবাজারে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার উপস্থিতি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এবং দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট হিসেবে বিবেচিত। ২০১৭ সালে এই সংকট শুরুর সময় স্থানীয় জনগোষ্ঠী, স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
তবে, সাম্প্রাতিক সময়ে অংশীদারিত্ব বিষয়ক বেশ কিছু সিদ্ধান্তে এটি দেখা যাচ্ছে যে, জাতিসংঘের কিছু সংস্থাগুলো স্থানীয় এনজিও/সিএসও-গুলোকে অবমূল্যায়ন করছে। স্থানীয় এনজিও/সিএসওকে সমান অংশীদার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.
