December 4, 2025, 5:01 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2025-12-03 21:00:15 BdST

দুদকের সাবেক কমিশনার জহুরুল সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা


দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. জহুরুল হক ও বিটিআরসির সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ ৬ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের টার্মিনেশন রেট ও রেভিনিউ শেয়ার বেআইনিভাবে কমিয়ে রাষ্ট্রের ৯ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করার অভিযোগে দুদক এই মামলাটি করেছে।

দুদকের ইতিহাসে এই প্রথম খোদ সংস্থারই কমিশনার পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হলো। যিনি ঘটনার সময় বিটিআরসির কমিশনার ও পরবর্তীতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির পরিচালক জালাল উদ্দীন আহমেদ বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন– বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, সাবেক চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, সাবেক কমিশনার মো. জহুরুল হক, সাবেক কমিশনার মো. রেজাউল কাদের ও মো. আমিনুল হাসান।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ সরকারের অনুমোদন ছাড়াই পরীক্ষামূলক সময়ের কল রেট কমিয়ে ০.০৩ ডলার থেকে ০.০১৫ ডলার করে এবং সরকারের রেভিনিউ শেয়ার ৫১.৭৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনে। একই সঙ্গে আইজিডব্লিউ অপারেটরের শেয়ার ১৩.২৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করা হয়, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। যার মাধ্যমে রেভিনিউ শেয়ার কমানোর ক্ষতি ৩৮৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, কম রেটে কল আনায় ক্ষতি ২ হাজার ৯৪১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা না আনায় ক্ষতি ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি ১ লাখ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে রাষ্ট্রের মোট ক্ষতি ৯ হাজার ১০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪১৮, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে জহুরুল হকের বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান চলমান রয়েছে বলেও জানা গেছে।

জানা গেছে, দুদকের সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ঘুস-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে ব্যবহার করে তিনি অর্থ পাচার করেছেন মর্মে অভিযোগ করা হয়েছে।

২০২১ সালে দুদকের কমিশনার পদে নিয়োগ পাওয়ার পর দুদকের সাবেক এই কমিশনার ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউকের পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পে তার নিজ নামে একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। এর আগেও তিনি রাজউক থেকে নিজের ও স্ত্রী মাছুদা বেগমের নামে পৃথক দুটি ৫ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন।

২০২২ সালের ২৩ আগস্ট মো. জহুরুল হক তার নিজের নামে বরাদ্দ দেওয়া ৫ কাঠার প্লটের পরিবর্তে ১০ কাঠা আয়তনের প্লট দিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের ১০ নম্বর সেক্টরের ৪০২ নম্বর রোডের ৫ কাঠা প্লটটিকে বাড়িয়ে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেয়। আগের প্লটের সঙ্গে ২০২৪ সালের ৩০ জুন তার নামে প্লট রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস) রুলস ১৯৬৯ বিধিমালা অনুযায়ী, স্বামী ও স্ত্রীর নামে আলাদা আলাদা প্লট বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম নেই।

স্বামী ও স্ত্রীর নামে আলাদা প্লট বরাদ্দ থাকলে তা সমর্পণ করার নিয়ম রয়েছে। এই ক্ষেত্রে তিনি নিজের স্ত্রীর নামে থাকা প্লট সমর্পণ না করে প্রভাব খাটিয়ে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এর আগে ২৫ ডিসেম্বর জহুরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল ও তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কামরুজ্জামানের সই করা চিঠির মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.