April 26, 2024, 8:31 am


সামি

Published:
2020-03-29 01:44:37 BdST

যে কারণে মন্দা কাটাবে বাংলাদেশ


করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বে এখন অর্থনৈতিক মন্দার পদধ্বনি। অর্থনৈতিক মন্দায় পুরোবিশ্ব নিপতিত হয়েছে। এই মন্দা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে গত ২৫ মার্চ বলেছেন যে, অর্থনৈতিক সংকটের ঢেউ বাংলাদেশেও আসবে।

আমাদের অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্যোগ এবং মন্দার আশঙ্কা করছেন করোনা পরবর্তী সময়ে।

কিন্তু আশাবাদী বিশ্লেষক এবং অর্থনৈতিক পণ্ডিতরা বলছেন অন্য কথা।

বিশ্বমন্দা হলেও বাংলাদেশ দ্রুত এই মন্দা কাটিয়ে উঠবে। এই মন্দার প্রভাব বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী হবে না।

যেমন ২০০৮ সালে বিশ্বমন্দার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছিল। কিন্তু সেসময় আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। ক্ষমতায় এসে কিছু অর্থনৈতিক নীতি এবং কৌশল গ্রহণ করেছিল, ফলে বিশ্বমন্দার ঢেউ বাংলাদেশে লাগেনি। বরং বাংলাদেশ টানা অর্থনৈতিক অগ্রগতি উন্নয়নের পথে হেঁটেছে। বাংলাদেশ টানা প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও বিশ্বে বিস্ময়কর উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

এবারও তাই প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ এই অর্থনৈতিক মন্দা কাটাবে ঠিক কোন উপায়ে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বমন্দার প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়লে বাংলাদেশ দ্রুতই তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। এর প্রধান কারণ মোট ৫টি। সেগুলো হলো-

১. মানুষের কর্মস্পৃহা এবং সংগ্রাম

বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট সংগ্রামী। বেঁচে থাকার জন্য তারা প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে। তাদের প্রতিটি অর্জন ত্যাগ আর সংগ্রামের বিনিময়ে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মন্দা থাকুক না থাকুক, এদেশের মানুষ প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার লড়াই করে। কাজেই মন্দা হোক বা না হোক, মানুষ তার সক্রিয় পরিশ্রম, কর্মস্পৃহা এবং সংগ্রাম দিয়ে বাঁচার পথ খুঁজবে। নিজে যখন বাঁচার পথ খুঁজবে, তখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও সচল হবে।

২. ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তিই হলো সবচেয়ে উপেক্ষিত ক্ষুদ্র এবং মাঝার উদ্যোক্তারা। যারা সরকার বা অন্য কারো কাছ থেকে কোনো প্রণোদনা পান না, ব্যাংক যাদের তাচ্ছিল্য করে, যারা কোনো ঋণ সুবিধাও পান না। কিন্তু তারা তিল তিল করে ঠিকই দেশের অর্থনৈতক কাঠামোকে গড়ে ফেলেন।

ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তারা তাদের নিজেদের বাঁচার প্রয়োজনে, নিজেদের টিকে থাকার সংগ্রামের কারণেই দেশকে আবার পুনর্গঠিত করবেন, তাদের কর্মীদের নিয়ে পরিশ্রম করবেন এবং এভাবেই তারা জয়ী হবেন। এই জয়টা তাদের বেঁচে থাকার জন্য।

মানুষ যখন নিজের বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করে, তখন তার নিজের হারার কোনো পথ থাকে না। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাও প্রমাণ করেন যে তারা টিকে থাকার জন্য কতো কঠোর পরিশ্রম করেন, কতো ত্যাগ স্বীকার করেন।

৩. অভ্যন্তরীণ বাজার

গত একদশকে বাংলাদেশ বিপুল অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে। এর ফলে বাংলাদেশে একটি অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি হয়েছে। এই অভ্যন্তরীণ বাজারের প্রবাহমানতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কারণ বাংলাদেশের উদ্যোক্তা এবং শিলপ্গুলোর একটি নিজস্ব দেশীয় বাজার রয়েছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অভ্যন্তরীন বাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. বিশ্ববাজারে প্রতিযোগীতায় ভালো অবস্থান

করোনার আক্রমণ চলে গেলে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা যেমন হবে, তেমনি বিভিন্ন জিনিসের চাহিদা দেখা দেবে। এই চাহিদা দ্রুত মেটাতে বিশ্বে আবার নতুন করে প্রতিযোগিতা শুরু হবে।

ধরা যাক, ইউরোপ আমেরিকা এখন গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে যত অর্ডার বা আদেশ, তার সবই বাতিল করছে। কিন্তু করোনা সংকট থেকে তারা যখন বের হবে, তখন দ্রুতই তাদের গার্মেন্টস চাহিদা দেখা দেবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো নতুনরূপে বাজারে আত্মপ্রকাশ করার জন্য তীব্র প্রতিযোগীতায় নামবে।

এই তীব্র প্রতিযোগীতার মধ্যে তাদের চাহিদা মেটাবার মতো দেশ বিশ্বে কয়টিই বা আছে। দেখা গেছে যে এই প্রতিযোগীতায় বাংলাদেশ বরাবরই বিজয়ী হয়।

তাই এখন সাময়িক সংকট হলেও করোনা মোকাবেলার পরপরই বিশ্ববাজারে যে নতুন প্রতিযোগীতা হবে, তাতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সবসময় ভালো এবং আশা করা যায় যে এবারও বাংলাদেশ ভালো করবে।

৫. সরকারের নীতি ও কৌশল

সরকার ইতিমধ্যেই গার্মেন্টস শিল্পের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। গরীবদের জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিসহ ঘরে ফেরা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে আরও নতুন নতুন উদ্যোগ, পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করছে।

এই কাজগুলো যখন বাস্তবায়িত হবে, সরকারের নীতিকৌশলের কারণে তখন মানুষও তার মেধা এবং উদ্যম নিয়ে নতুন বেঁচে থাকার সংগ্রামে এগিয়ে আসবে। তাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তির দিশা পাবে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা প্রচলিত রয়েছে, যেকোনো সংকট নতুন সম্ভাবনার পথ তৈরি করে দেয়।

কে জানে, করোনাভাইরাসের কারণে যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, সেটি বাংলাদেশের জন্য হয়ত আশীর্বাদ হয়ে আসবে। বাংলাদেশ হয়ত বিশ্ববাজারে নিজের আধিপত্য এবার আরও বেশি করে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারবে। 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা