September 17, 2025, 5:20 pm


ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই

Published:
2025-09-17 15:29:11 BdST

জামায়াতের রাজনৈতিক চরিত্রবহুমুখী ষড়যন্ত্র, গোপন আঁতাত ও ক্ষমতার নেশা


ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই এক বৈচিত্র্যময় চরিত্রের দল হিসেবে আলোচিত। বহুমুখী ষড়যন্ত্র, গোপন আঁতাত এবং রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের কৌশল—এসব দিক থেকে জামায়াতকে আজও ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয়।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে চারদলীয় জোট গঠন করে ক্ষমতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায় জামায়াত। তখন দুইজন মন্ত্রী পেয়ে তারা ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করে এবং ধীরে ধীরে আরও প্রভাব বিস্তারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সময় থেকেই তাদের মধ্যে ক্ষমতার নেশা প্রকটভাবে দেখা দেয়।

১/১১ এবং গোপন আঁতাতঃ
২০০৭ সালের ১/১১ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। এ সময় জামায়াত সরাসরি ক্ষতির শিকার না হলেও বিএনপি বড় ধরনের রাজনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক গবেষক মনে করেন, বিদেশি প্রভাব ও বিশেষ করে আঞ্চলিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আঁতাতের কারণে জামায়াত পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছিল।

যুদ্ধাপরাধের বিচার ও বিভাজনঃ

যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিচার ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ছিল দলের ইতিহাসে এক বড় ধাক্কা। এই সময় জামায়াত প্রকাশ্যে দাবি করে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে ভবিষ্যতে তাদের আর যুদ্ধাপরাধীর তকমা দেওয়া যাবে না। এ বাস্তবতা থেকেই ভেঙে নতুন দল “আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি” আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু প্রবীণ নেতাদের জন্য তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ জামায়াত গ্রহণ করেনি, যা দলের ভেতরে আক্ষেপ ও ক্ষোভ তৈরি করেছে।

অতীতের বেঈমানি ও দ্বিচারিতাঃ

ইতিহাসে দেখা যায়, ১৯৮৬ সালে সামরিক শাসক এরশাদের সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জামায়াত বিতর্কে জড়ায়। তখন শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন—“যারা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে, তারা জাতীয় বেইমান।” অথচ আওয়ামী লীগ ও জামায়াত উভয়ই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সমালোচনার মুখে পড়ে। আবার ১৯৯১ সালে বিএনপির সঙ্গে মৌখিক জোটে গিয়ে ১৮টি আসন লাভ করে জামায়াত, এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে। এভাবে তারা একবার বিএনপি, আবার একবার আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়েছে।

পিআর পদ্ধতির (Proportional Representation) প্রশ্ন
বর্তমানে জামায়াত আবার সামনে এনেছে ধার করা পিআর পদ্ধতির দাবি। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে তারা কখনো এককভাবে ৩০০ আসনে অংশ নেয়নি। ফলে তাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই, ক’টি আসনে তারা জিততে সক্ষম হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে জামায়াত এক অলীক ক্ষমতার স্বপ্ন দেখছে।

তবে ইতিহাস বলে, নেপালে পিআর পদ্ধতির প্রভাবে গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। বাংলাদেশ এখনও গণতন্ত্রকে পূর্ণভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারেনি, ফলে পিআর পদ্ধতির মতো জটিল ব্যবস্থা এ দেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

উপসংহারঃ

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুর পর জামায়াত রাজনীতির সুযোগ পায়। কিন্তু এ পর্যন্ত তারা কখনোই পূর্ণাঙ্গভাবে নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় নামেনি। বরং সব সময়ই জোট, আঁতাত ও বহুমুখী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে জামায়াতের এই রাজনৈতিক কৌশল ভবিষ্যতে তাদের জন্যই বুমেরাং হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই
চেয়ারম্যান, নিউ হোপ গ্লোবাল
মানবাধিকার সংগঠক, আন্তর্জাতিক গবেষক, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.