Shamiur Rahman
Published:2025-12-31 23:26:46 BdST
বেগম খালেদা জিয়া: এক আপোষহীন নক্ষত্রের চিরবিদায়
আপোষহীন নক্ষত্রের চিরবিদায়
সালাহউদ্দিন মিঠু
-------------------------
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বার্ধক্য ও বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন, মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর এবং এই বিদায়ে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, যেখানে তাকে একজন 'অকুতোভয় জীবনযোদ্ধা', 'দেশপ্রেমিক' ও 'আপসহীন নেত্রী' হিসেবে স্মরণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। দেশনেত্রী, আপসহীন নেত্রী ও মানবতার মা হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ চিরবিদায় নিয়েছেন। শারীরিকভাবে তিনি না থাকলেও গণতন্ত্র, সংগ্রাম ও সাহসের প্রতীক হয়ে কোটি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন চিরকাল গণতন্ত্রের আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় পূর্নমর্যাদায় দাফন সম্পন্ন করা হয় বুধবার বিকেলে,মরহুম জিয়ার কবরের পাশেই। মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম জানাজা হয়েছে এই সংগ্রামী আপোষহীন দেশনেত্রীর। দেশের রাস্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দসহ দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কুটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ঐতিহাসিক জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জীবনাবসান ঘটে। আপসহীন এই নেত্রীর মৃত্যুতে সারাদেশে যেমন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণকে একটি যুগের অবসান হয়েছে বলে মনে করেন দেশবাসী।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার ভোরে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করা এই মহীয়সী নারী ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিন মেয়াদে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬০ সালে সেনাপ্রধান ও পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ফার্স্ট লেডি থেকে শুরু করে বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে তার পদচারণা ছিল দীর্ঘ পথচলায়।
অন্তর্বর্তী সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ার পর দলমতনির্বিশেষে দেশের মানুষ তার সুস্থতা কামনা করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আদর্শিক মতপার্থক্য ভুলে বেগম জিয়ার সুস্থতা কামনায় আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছেন। বাংলাদেশের কোনো নেতা-নেত্রীর ভাগ্যে এমন সহমর্মিতা জোটেনি। বেগম জিয়ার অসুস্থতা এবং মৃত্যু জাতিকে একই প্লাটফর্মে এনে দাঁড় করিয়েছে। এটা বেগম জিয়ার প্রতি দেশবাসীর অকুণ্ঠ ভালোবাসারই নিদর্শন। জাতীয় ঐক্য এবং গণতন্ত্রের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া যেভাবে সর্বস্তরের মানুষে অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি যে মমত্ববোধ দেখিয়েছেন এটি তারই প্রতিদান।
বিএনপি নিয়ে গবেষণাধর্মী বইয়ের লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া বিএনপিকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসে।
তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন। নির্বাচনে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবক'টি আসনেই নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সেই নির্বাচনের আগে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে থাকা তিন জোটের রূপরেখায় সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের পর গঠিত পঞ্চম সংসদে সংসদ নেতা হিসাবে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পাল্টিয়ে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনের জন্য বিল উত্থাপন করেছিলেন এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা পাস হয়। তখন দীর্ঘ ১৬ বছর পর ফিরে আসে সংসদীয় সরকার।
সামান্য আপস করলেই তিনি রাজকীয়ভাবে বিদেশ যেতে পারতেন। স্বাচ্ছন্দের সাথে জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু বিদেশ পাঠানোর জবাবে তিনি বার বার বলেছেন, ‘এই দেশ, এই দেশের মানুষকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।’পৃথিবীর কোন দেশে তাঁকে পাঠাতে পারেনি কেউ। কিন্তু অমোঘ মৃত্যু তাঁকে ডেকে নিয়ে গেলো চিরতরে। তিনি আর ফিরবেন না ধূলি ধরায়। তবে তিনি মানুষের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর দেশপ্রেম ও সত্য প্রতিষ্ঠায় আপসহীনতা চির-অম্লান হয়ে থাকবে পৃথিবীর ইতিহাসে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.
