শাহীন আবদুল বারী
Published:2025-05-03 19:53:07 BdST
নিউইয়র্কের গোলামি করার জন্য দিল্লির দাসত্ব থেকে মুক্ত হইনিঃ মামুনুল হক
মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলা যাবে না জানিয়ে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেছেন, ‘দিল্লির দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছি নিউইয়র্কের গোলামি করার জন্য নয়।’ এই অপতৎপরতা বন্ধ না হলে দেশপ্রেমিক জনতাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নারী অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত মহাসমাবেশে মামুনুল হক এসব কথা বলেন।
সমাবেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বার্তা দিতে চাই উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা বলেছিল, আমরা পিন্ডির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি, দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়। ২৪-এর জুলাইয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর আমি বলতে চাই, আমরা দিল্লির দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছি নিউইয়র্কের গোলামি করার জন্য নয়।’
মামুনুল হক বলেন, ‘যদি বাংলাদেশকে ওয়াশিংটনের দাসে পরিণত করার কোনো চক্রান্ত করা হয়, মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হরণ করার জন্য অপতৎপরতা চালানো হয়, তাহলে সারা দেশের মানুষের প্রতি আমার আহ্বান, যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও, দেশের জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও।’
হেফাজত নেতা-কর্মীদের নামে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলি, ড. ইউনূসের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অনেকবার সাক্ষাৎ করে বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করেছি, আমাদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী আমলে দায়ের করা মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতের সমাবেশে বিপুল সংখ্যক আলেম ওলামা জমায়েত হন। সভায় মামুনুল হক আরও বলেন, ‘প্রফেসর ড. ইউনূস, আপনি কি সেই কথা ভুলে গেছেন, এই দুই মাস আগেও আমাদের সামনে আদালতের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে যদি হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা প্রত্যাহার না হয়, তাহলে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের যা করতে হয়, তা-ই করবে।’
নারী অধিকার সংস্কারের নামে ইসলামকে কটাক্ষ করা হয়েছে দাবি করে মামুনুল বলেন, ‘ধর্মীয় উত্তরাধিকার বিধান, পারিবারিক বিধানকে নারী-পুরুষের বৈষম্যের প্রধান কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করে নারীবিষয়ক কমিশন এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে।’
হেফাজতের এই নেতা আরও বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে আমরা রাষ্ট্রের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দেখতে চাই। হেফাজতে ইসলাম বলতে চায়, এই তথাকথিত পশ্চিমা ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী বিতর্কিত নারীবাদীদের আদর্শ ও দর্শন নয়, বরং হেফাজতে ইসলাম প্রদত্ত, আল্লাহ ঘোষিত নারীর ন্যায্য অধিকারে বিশ্বাসী।’
মামুনুল হক বলেন, ‘সংস্কার কার্যক্রম চলাকালে বহুত্ববাদের মতো বিতর্কিত, একত্ববাদবিরোধী কোনো ধারণা বাংলার মানুষ গ্রহণ করবে না। আমরা সংবিধান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহালের দাবি করেছি। এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য আগামী দিনে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে হেফাজতে ইসলাম সেই সিদ্ধান্তই নেবে।’
সমাবেশ থেকে নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দেন সংগঠনটির মহাসচিব সাজিদুর রহমান।
তিনি বলেন, নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন করা হবে। ২৩ মে বাদ জুমা নারী অধিকার সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এর আগে ১২ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাহফুজুল হক। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাহমুদুর হাসান কাশেমী, নায়েবে আমির আহমেদ কাশেমী, জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখ।
সমাবেশের সভাপতি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় এই মহাসমাবেশ।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.