May 13, 2025, 12:43 am


নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী

Published:
2025-05-12 16:22:30 BdST

রাজবাড়ী পাবলিক লাইব্রৈরী


রাজবাড়ী পাবলিক লাইব্রৈরী যেটি অতীতে উডহেড পাবলিক লাইব্রেরি নামে পরিচিত ছিলো ১৯১৪ সালে তৎকালিন ফরিদপুরের ম্যাজিস্ট্রেট শেফার্ড ঊডহেড প্রতিষ্ঠিত করেন।

লাইব্রৈরীর কোন জায়গায় জমিদাতা বা প্রতিষ্ঠিত কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও জানা যায় জমিদার দ্বারকানাথ সাহার আনুকূল্যে একতলা এবং ১৯৮৪ সালে দোতলা বিল্ডিং করা হয়। মুকুন্দিয়ার জমিদার দ্বারকানাথ ঠাকুরের বাড়ির অনেক আসবাবপত্র মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে দেয়া হয়।

তথ্যসূত্রে কোথাও প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকলেও জানা যায় বৃন্দাবন দাসের দানকৃত ১৩ শতাংশ জমির উপর এই লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত। লাইব্রৈরীটি সেই সময়ের সমবায়ের দানকৃত জমিতে প্রথম কোন স্থাপনা।

উপমহাদেশের প্রথম লাইব্রেরী কোরকদি পঞ্চানন্দ লাইব্রৈরীর অমুল্য কিছু গ্রন্থ এখানে দান করা হয়। তার মধ্যে প্যাপিরাস পাতার পুস্তক রয়েছে। ১৯৫৪ সালে শের-ই-বাংলা ফজলুল হক এই লাইব্রেরি পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এখানে হেনরি স্মিথের কিছু দুর্লভ বই রয়েছে।

গোয়ালন্দ কো অপারেটিভ ব্যাংক এই লাইব্রেরি জন্য ১৩ শতক জমি বরাদ্দ দিয়েছিল। কোড়কদীর রামধন তর্ক পঞ্চানন পাঠাগার হতে অনুদান হিসেবে এখানে দুস্প্রাপ্য মুল্যবান বই পাওয়া যায়, যেমন- Encyclopedia britainica, Histories history of the world।

রাজা সূর্যকুমারের শ্যালক রাজার ব্যক্তিগত লাইব্রেরির সমস্ত বই এখানে দান করলেও সলিসিটর আইনে গ্রহন করা সম্ভব হইনি। ষাটের দশকে শিক্ষানুরাগী মামুনুর রশীদ (সেকেন্ড অফিসার) মোটা অংকের সরকারি অনুদান পাইয়ে দিলে বহু বই কেনা হয় যার মধ্যে রয়েছে ম্যাগাজিন লাইফ, টাইম, রিডার ডাইজেস্ট , সাপ্তাহিক বেগম ইত্যাদি।

লাইব্রেরিতে বর্তমানে ৬ হাজারের অধিক পুস্তক আছে। পাবলিক লাইব্রেরীর দানকরা ভুমি থেকে ৪ শতাংশ জায়গা নিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন।যেটা বর্তমানে লাইব্রৈরীর পাশেই অবস্থিত।

নৃবিজ্ঞানীদের ভাষ্য অনুযায়ী, আদিম গুহাবাসী মানুষ যখন থেকে তাদের মনের ভাব, চিন্তা-কল্পনা গুহার দেয়ালে, পাথরে, মাটিতে, চিত্র ছবি বা সংকেত আকারে লিখে রাখতে প্রয়াসী হয় তখন থেকেই মূলত লাইব্রেরির যাত্রা। তার কারণ মানুষ তার লব্ধ ও সংগৃহীত জ্ঞান স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে রাখার তাগিদ থেকেই মূলত লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে। আর মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অভিজ্ঞতা-জ্ঞান ইত‌্যাদি লিপিবদ্ধ করার প্রথম প্রচেষ্টা মূলত গুহাবাসী আদিম মানুষই শুরু করে।কিন্ত সভ্য আর আধুনিক যুগে লাইব্রৈরীর এমন অবস্থা আমাদের জ্ঞান আর সভ্যতাকে নিশ্চয় প্রশ্নের সম্মুখীন করবে।

লাইব্রৈরীর বর্তমান অবস্থা

দুই বছর পরপর ভোটের মাধ্যমে পরিচালনা পর্যদ গঠন করার কথা থাকলেও দীর্ঘ সাত বছর কোন নির্বাচন হযনা। আগের নির্বাচিত সদস্যদেরও কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। কিছু টাকা দিয়ে আজীবন সদস্য হওয়া গেলেও তারা উদাসীন লাইব্রৈরীর উন্নয়নের ব্যাপারে।নিয়মিত সদস্যদের তিন মাস বেতন না দিলে সদস্য পথ খারিজ হওয়ার বিধান থাকলেও কেউ আর নিয়মিত চাঁদা প্রদান করেন না।

দীর্ঘদিন অযত্ন আর অবহেলার কারনে লাইব্রেরীর অনেক বই নষ্ট হয়ে গেছে। বই রাখার আলমারি উঁই পোকার দখলে। পত্রিকার বিল, বিদ্যুৎ বিল, জমির খাজনা সহ প্রায় দুই লক্ষ টাকার বোঝা নিয়ে ধুকে ধুকে চলছে লাইব্রৈরীটা। বসার জায়গা, সেনিটারি ব্যবস্থা কোনটাই আর নেই। যত্নের অভাবে লাইব্রেরী ভবন যে কোন সময়ে ভেঙ্গে পড়তে পারে। বিদ্যুৎ বিল, পত্রিকার বিল এবং লাইব্রেরীর ষ্টাফদের বেতন বাবদ জেলা প্রশাসনের অনুদান পাঁচ হাজার টাকাই একমাত্র ভরসা যা খুবই অপ্রতুল।

আশার কথা হচ্ছে সম্প্রতি পাঁচ সদস্যের একটি এডহক কমিটি গঠন করা হযেছে। জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় এই প্রাচীন ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির নিদর্শনকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় সেই পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.