May 21, 2025, 8:06 pm


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2025-05-21 11:11:18 BdST

দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে বিপর্যস্ত গ্রাহক সেবাডিএনসিসির ২৩ নং ওয়ার্ডে টাকার বিনিময়েও মেলে না সেবা


নাগরিকত্ব প্রমাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে নিয়োগ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নিবন্ধনসহ দেশে ১৯টি ক্ষেত্রে জন্মসনদের প্রয়োজন হয়। আবার কেউ মারা গেলে মৃত্যু নিবন্ধনের জন্যও লাগে জন্মসনদ। এটি না থাকলে উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা যায় না। সব মিলিয়ে জন্মসনদ একজন নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল নথি। অন্যদিকে একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর রীতি অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন, পারিবারিক পেনশন প্রাপ্তিসহ অন্যান্য কাজের জন্য মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। অথচ এই দুটি সনদ পেতে ভোগান্তির যেন শেষ নেই নাগরিকদের। রয়েছে নানান অভিযোগও।

ডিএনসিসি 23 নং ওয়ার্ড কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ, উত্তরাধিকার সনদ এবং বয়স্ক ও বিধবা ভাতার প্রত্যয়নপত্রের জন্য প্রতিদিনই চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে টাকা দিয়েও মিলছে না জন্ম ও মৃত্যু সনদ। ডিএনসিসির প্যাডে সাধারণ একটি জন্ম বা মৃত্যু সনদ বের করতে গেলেও একজন সাধারণ নাগরিককে গুনতে হচ্ছে নূন্যতম দুই হাজার টাকা। পরে সেই জন্ম বা মৃত্যু সনদ অনলাইন করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করছেন ন্যূনতম ১৫০০ টাকা। ডিএনসিসির ২৩ নং ওয়ার্ডে চলছে টাকার বিনিময় সেবা কার্যক্রম।

সম্প্রতি দৈনিক সময়ের অপরাধচক্র পত্রিকার ব্যবস্থাপক ও ক্রাইম রিপোর্টার মো: লোকমান হোসেন শ্যামল তার মৃত চাচার জন্য মৃত্যু সনদ ও ওয়ারিশান সনদ করতে যান ডিএনসিসি 23 নং ওয়ার্ড কার্যালয়ের খিলগাঁওয়ের তালতলা মার্কেটে অবস্থিত কার্যালয়ে। সেখানে যাওয়ার পর ওয়ার্ড সচিব একরামুল কবিরের কাছ থেকে ডিএমসিসির প্যাডে মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করেন। এই মৃত্যু সনদটি মহাখালীস্থ ডিএনসিসি কার্যালয় থেকে ১ দিনেই সচিব কর্তৃক স্বাক্ষর করিয়ে এনে দেয়ার কথা বলে প্রথম দফায় ২০০০ টাকা নেন সেখানে কর্মরত মো: হাসিব চৌধুরী মুসা। এক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করেন রাফি ও ফয়সাল নামে অপর দুই কর্মচারী। এদের মধ্যে ফয়সাল ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জন্ম-মৃত্যু সনদ ও অন্যান্য নথিপত্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য আনা নেওয়া করে। তারা তিনজনই সাংবাদিক শ্যামলকে আশ্বস্ত করেন এবং তার নিকট থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন।

টাকা নেয়ার পর একদিনের মধ্যে সচিবের স্বাক্ষরযুক্ত মৃত্যু সনদ এনে দেয়ার কথা বলে এক সপ্তাহ পার করে সেটি দেয় ভুক্তভোগীকে।

এবার শুরু হয় আরেক ভোগান্তি। মৃত্যু সনদটি ব্যাংকে প্রদান করতে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সনদটির অনলাইন কপি চায়। পরে অনলাইন কপি নিতে আবারো ২৩ নং ওয়ার্ড কার্যালয়ে যান সাংবাদিক শ্যামল। এ সময় অনলাইন করার জন্য পুনরায় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ১৫০০ টাকা নেন ২৩ নং ওয়ার্ড কার্যালয়ে কর্মরত মো: হাসিব চৌধুরী মুসা।

এসময় মুসা ভুক্তভোগী সাংবাদিক শ্যামলকে বলেন 'রাতেই আপনার হোয়াটসঅ্যাপে মৃত সনদের অনলাইন কপি পাঠিয়ে দিব।' চারদিন পেরিয়ে গেলেও সেই মৃত্যু সনদের অনলাইন কপি এখনো পাননি ভুক্তভোগী।

শুধু সাংবাদিক শ্যামল একাই নন আরো অনেকেই ডিএনসিসির ২৩ নং ওয়ার্ড কার্যালয় সেবা পেতে এসে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তাদের অনেকেই গণমাধ্যমের কাছে এই বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের অনুরোধ করেছেন। 

এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর না থাকায় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাউন্সিলরের নাগরিক সেবার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এখন একজন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৯টি সাধারণ ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ তো রয়েছেই।

ওয়ার্ড কার্যালয়ে এসে কেউ সনদ চাইলে সেটি আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে স্বাক্ষর হয়ে ওয়ার্ড কার্যালয়ে ওই সনদ ফিরে যেতে কয়েক দিন লেগে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে জন্ম-মৃত্যু ও নাগরিকত্ব সনদ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ সেবা প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়ার্ডের লোকজনকে চেনেন না। এজন্য একটি জন্মসনদ নিতে ১০ দিনেরও বেশি লেগে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে ঠিকমতো সেবা না পাওয়ায় ওয়ার্ড সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে প্রায়শই সেবাপ্রার্থীদের বাগ্বিতণ্ডার ঘটনাও ঘটছে।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, কাউন্সিলর না থাকায় যেসব সমস্যা হচ্ছিল, সেগুলো সরকারকে জানানো হয়েছে। তারপরই আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের সেবা প্রদানের দায়িত্ব দেয়া হয়। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাজের চাপ নিতে হবে। এলাকার লোকদের চিনতে হবে। তবে, এই সুযোগে নাগরিক সেবা দিতে যদি কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে কোন ধরনের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে কিংবা সেবা প্রদানে গড়িমসি করে সেক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শুধু ২৩ নং ওয়ার্ড নয় ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির প্রতিটি ওয়ার্ড কার্যালয়েই চলছে এরকম দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতা। মূলত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকার কারণে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এরকম ঢালাও অপকর্ম করে যাচ্ছেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.