July 15, 2025, 9:43 am


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-07-15 03:22:10 BdST

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে সোহাগ হত্যা


রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যার পেছনে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব রয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা এই পর্যন্ত তদন্তে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব নিয়েই খুন হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

খুনের এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মোট ৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ১২ আসামি এখনো ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলমান।

পুলিশি সূত্র মতে, দুর্বৃত্তদের সঙ্গে আগে থেকেই সোহাগের ভাঙারি ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। তাছাড়া তারা দীর্ঘদিন এক সঙ্গে রাজনীতি করলেও কয়েকজন পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। তবে বিএনপিতে সাংগঠনিক পরিবেশ ফিরে আসলে ফের যুবদলের রাজনীতি শুরু করেন ব্যবসায়ী সোহাগসহ অন্যরা।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, বা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে সোহাগ নৃশংস ভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

মামলায় গ্রেফতার হওয়া সাত আসামিরা হলেন; রাজিব, সজিব, মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন, আলমগীর, মনির ওরফে ছোট মনির, মো. টিটন গাজী। এদিকে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এজাহারভুক্ত ৭ জন আসামি ধরা হলেও এখনো ১২ জন অপরাধী থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তিভোগীর পরিবারের সদস্যরা।

আসামি মহিনসহ হত্যাকারীরা আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে থেকেই একচেটিয়া ভাঙারি ব্যবসা করে আসছে। সেসময় তারা সবাই হাজী সেলিমের লোক ছিলেন। সরকার পতনের পর মহিনসহ অন্যরা যুবদলে যোগদান করে তাদের একচেটিয়া ব্যবসা ও সিন্ডিকেট ধরে রাখেন। তাছাড়া নিহত সোহাগ ভাঙারি ব্যবসার পাশাপাশি আগে থেকেই যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর সোহাগ এই ভাঙারি ব্যবসার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন। যার ফলে মহিনদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সোহাগের নামেও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। মূলত এসব দ্বন্দ্বের সূত্র ধরেই সোহাগকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে ১৯ জনের মতো অংশগ্রহণ করে বলে জানা গেছে প্রশাসন সূত্রে।

এদিকে ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিন অস্ত্র মামলায় আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিতে জানান, ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ চাঁদাবাজির কারণে নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে খুন হয়েছে। গেল বুধবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকায় সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আদালত ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দুই দিনের রিমান্ড শেষে রবিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই মনির হোসেন জীবন। পরে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের কাছে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

জবানবন্দিতে রবিন জানান, সোহাগ হত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে মহিনসহ অন্যদের সঙ্গে নিহত সোহাগের ভাঙারি ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। যার সূত্র ধরেই সোহাগকে খুন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

নৃশংসভাবে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘মব’ সাজাতে চেয়েছিলো খুনিরা

মিটফোর্ড চত্বরে ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার তদন্তে বেড়িয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মহিন মাসে ফিক্সট চাঁদা চাওয়াতেই বেঁকে বসেন সোহাগ। আর এই বিষয় নিয়েই দীর্ঘদিনের দুই বন্ধু শত্রুতে পরিণত হয়। মূলত মহিন ও টিটন গাজী পরিকল্পনা করেন সোহাগকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলার। তাদের ধারণা ছিলো- ভাঙারি দোকানে অনেক লাভ। সোহাগকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলে ‘সোহানা মেটাল’ নামে দোকানটি তাদের হয়ে যাবে এবং পুরো এলাকার ভাঙারি ব্যবসা তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রজনী বোস লেনের কিছুটা ভেতরে সোহাগের দোকান। গত ৭ জুলাই চাঁদা নেয়ার বিষয়ে সোহাগ ও মহিনের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটে। বিষয়টি জানতে পেরে সোহাগের সাথে যোগাযোগও করেছিলো পুলিশ। তখন সোহাগ জানান, মহিনের সাথে ঝামেলা মিটে গেছে। কিন্তু মহিন চুপচাপ বসে থাকেনি। ওইদিনই হত্যার পরিকল্পনা করে টিটনের সাথে।

রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে মহিন তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন, সোহাগ খুবই একরোখা স্বভাবের ছিলো। এজন্য তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়। শুরুতে তাকে দোকানেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এজন্য অস্ত্রও সংগ্রহ করা হয় ছোট মনিরের মাধ্যমে। কিন্তু তারা সাম্প্রতিক কিছু মবের ঘটনাগুলো দেখে উৎসাহিত হয়। তাদের ধারণা ছিলো- সোহাগকে যদি মিটফোর্ডের ৩ নম্বর গেটের সামনে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে অনেকে মিলে উল্লাস করা যায় তাহলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিবে। আর ওই অত্র এলাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী, অন্যান্য ব্যবসায়ী, অ্যাম্বুলেন্স চালক, রেস্টুরেন্ট, ফার্মেসী ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে অটোমেটিকলি কড়া বার্তা চলে যাবে মহিন গ্রুপের কথা না শুনলে পরিণতি হবে এর চেয়ে ভয়াবহ।

এই চিন্তা থেকেই গত বুধবার সোহাগ দোকানে আসার পরেই ৭টি বাইকে করে ১৯ জন মিলে রজনী বোস লেনে প্রবেশ করে। এরপর সোহাগকে মারধর করতে করতে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ইট-বালু-সিমেন্টের তৈরি পাথর সদৃশ কনক্রিট দিয়ে বার বার আঘাত হত্যা করা হয়। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে মরদেহ টেনেছিঁচড়ে গেটের বাইরে এনে উল্লাস করা হয়।

এদিকে খুনিদের মধ্যে পুরনো ক্ষোভ ছিলো দুইজনের। এদের মধ্যে একজনের কপালে একটি কাটা দাগ রয়েছে। ওই দুই খুনি পুলিশকে জানিয়েছে, সোহাগ রগচটা ও একরোখা মানুষ ছিলো। মতের অমিল হলেই গায়ে হাত দিয়ে বসতো। কয়েক বছর আগে সোহাগ তাদের মারধর করে। কপালের কাটা দাগটি সোহাগের মারের কারণেই। পুরনো পুঞ্জিভূত এই ক্ষোভ থেকেই তারা সোহাগকে মারধর করে। তারা ভেবেছিলো- উপস্থিত খুনিদের মধ্যে যুবদল ও বর্তমানে প্রভাবশালী আরেকটি রাজনৈতিক দলের লোকজন থাকায়- হত্যাকান্ড অন্যভাবে ধামাচাপা পড়ে যাবে।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এমন তথ্যও পেয়েছে যে, মহিন, টিটন ও রবিন গেঞ্জাম লাগছে বলে তাদেরও গ্রুপের সদস্যদের ঘটনার আগে ডেকে এনেছিলো। অর্থাৎ হত্যায় অংশ নেয়া ১৯ জনের অনেকেই জানতেন না সোহাগকে হত্যা করা হবে। তবে, ভাঙারি দোকান থেকে সোহাগকে মিটফোর্ডে ধরে আনার পর মহিন সবাইকে বলতে থাকে- ‘ও (সোহাগ) বেঁচে থাকলে আমরা সবাই শেষ’। এরপরই সবাই সোহাগকে মেরে ফেলতে হামলা চালাতে থাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোতয়ালী থানার এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুর মতো পথ চলা নিহত সোহাগ এবং খুনিদের অন্যতম হোতা মহিন ও টিটনের সম্প্রতি সময়ের সম্পর্ক ছিলো যুদ্ধ চলার মতো। অতীতে বিভিন্ন সমাবেশ উপলক্ষে সোহাগ অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ লোকজনকে মিছিলে পাঠাতো। অনেক সভা সমাবেশে সোহাগ সক্রিয় ভূমিকা রেখে মহিনকে সহযোগিতা করতো। কিন্তু সম্প্রতি মহিন ফিক্সট টাকা দাবি করে বসে। অর্থাৎ প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট হারে টাকা দিতে হবে। আর এটি মানতে পারছিলো না সোহাগ। তার যুক্তি ছিলো- আমিতো বাইরের কেউ নই। একসাথে সভা-সমাবেশ করি। এরপরও আমার নির্দিষ্ট হারে কেন চাঁদা দিতে হবে। টাকা দিতে আপত্তি নেই- তবে নির্দিষ্ট কোনো টাকা আমি দিবো না। এই কথার পরই তাদের দ্বন্দ প্রকাশ্যে আসে। সবশেষ ৭ জুলাই অনুসারীদের নিয়ে সোহাগকে হুমকি দিতে যায় মহিন। এসময় তাদের মধ্যে ঝামেলা হলে সংবাদ পায় চকবাজার থানা পুলিশ। তখন সোহাগ পুলিশকে জানিয়েছিলো- তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা মিটমাট হয়ে গেছে।

আলোচিত এই ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, এই ঘটনায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকীদের ধরতে বিভিন্ন সংস্থার অভিযান চলছে। একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারলে সর্বোচ্চ জানা যাবে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ঘটনায় জড়িত সবাইকেই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

অস্ত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার এসআই মনির হোসেন জীবন বলেন, অস্ত্রসহ রবিনকে গ্রেপ্তারের পর সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রবিনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি।

যদিও অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সোহাগকে হত্যা করতে রবিন অস্ত্রটি ছোট মনিরের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলো। অস্ত্র দেয়া সময় ছোট মনির বলেছিলো- কাজ শেষ হলে সেটি ফেরত দিয়ে আসতে। সূত্র জানিয়েছে, রবিন হত্যা মামলারও আসামি হওয়ায় তাকে শোন এরেস্ট দেখানো হবে। মহিন-রবিন ও টিটনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলেও জানা গেছে।

সরেজমিনে হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটে গিয়ে দেখা যায়, এখনো সেখানে উৎসুক জনতার ভীড়। যারাই ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছে, তারাই জানতে চাচ্ছে ‘কোথায় মারা হয়েছিলো?’ স্থানীয়দের কেউ কেউ ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন এবং চাঁদাবজি বন্ধ ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত অ্যাম্বুলেন্স চালক সোহাগ বলেন, মহিন গ্রুপ মিটফোর্ডে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কাছ থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা নিতো। সম্প্রতি সময়ে আমার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার সাড়ে ৩ হাজার টাকা পাওনা রাখে মহিন গ্রুপের ছোট মনির। ওই টাকা চাওয়ায় আমাকে গত ২৩ জুন মারধর করা হয়। একইদিন মিশু নামে আরেক ব্যক্তিকে মারধর করে মহিন গ্রুপের সদস্যরা। তাদের যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। ২৩ জুনের পর আমাকে আর মিটফোর্ডে ঢুকতে দেয়নি। আমরা মহিন গ্রুপের সবার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।

আতঙ্কে ভাঙারি ব্যবসায়িরা

রজনী বোস লেনের পুরোটা জুড়েই ভাঙারি দোকান। যে স্টাইলে সোহাগকে ধরে এনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এতে অনেকটাই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে অন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তাদের দাবি- এলাকাটিতে মহিনের মতো আরও ৫-৬ টি গ্রুপ রয়েছে। মহিন গ্রেপ্তার হলেও অনুসারীরা ওৎ পেতে আছে। গ্রুপগুলো তাদের হুমকির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভাঙারি দোকানের মালিক বলেন, ৩ মাস আগে সোহাগ এই দোকানটি ভাড়া নিয়েছিলো। আগে পাশেই অন্য গলিতে দোকান ছিলো। বুধবার দোকানে আসার ৫ মিনিটের মধ্যে মহিন গ্রুপ মোটরসাইকেলে এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। ভবিষ্যতে মহিন গ্রুপের অন্যরা এই ধরনের ঘটনা ঘটাবে না- এর নিশ্চয়তা কে দিবে?

মিটফোর্ড কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে মেডিকেল কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এই ঘোষণা দেন তারা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, রোগী চিকিৎসা নিতে এসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে, আর আমরা ক্লাস করতে এসে আতঙ্কে থাকব- এটা হতে পারে না। দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে শাটডাউন চলবে। এসময় শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে; বহিরাগতদের হাসপাতাল ও কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ বন্ধ করা। হাসপাতালসংলগ্ন ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ করা। আনসার সদস্যদের উপস্থিতি বাড়ানো এবং তাদেরকে আরও সক্রিয় করা। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

হত্যার তদন্তে বিচারিক কমিশন চেয়ে রিট

মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা তদন্তে উ”চক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ এই রিট করেন। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে। বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী।

রিমান্ডে আলমগীর ও লম্বা মনির

সোহাগ হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার মো. আলমগীর ও মনির ওরফে লম্বা মনিরের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাতদিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন।

শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ তাদের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে, এই মামলায় ১০ জুলাই মাহমুদুল হাসান মহিনের পাঁচদিন ও ১২ জুলাই টিটন গাজীর পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একই ঘটনায় গত শনিবার অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান রবিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

এজহারনামীয় দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেফতার

ব্যবসায়ী লালচাঁদ সোহাগকে হত্যার ঘটনায় আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এনিয়ে সোহাগ হত্যায় মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

গতকাল সকালে পৃথক অভিযান চালিয়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার দুইজনের মধ্যে একজন এজাহারনামীয় ৭ নম্বর আসামি সজীব ব্যাপারী। অপরজন ১০ নম্বর আসামি রাজীব ব্যাপারী। সজীব ও রাজীব আপন দুই ভাই।

আনসার সদস্যদের দায় নেই বললেন ডিজি

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আনসার সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।

এদিন বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্দেশিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ওই সময় সেখানে কোনো আনসার সদস্য কর্তব্যরত ছিলেন না।

উল্লেখ্য, গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিডফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে কুপিয়ে ও এলোপাতাড়ি পাথর ও ইট নিক্ষেপ করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় লাশের ওপর লাফিয়ে উল্লাস করতেও দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে। এরপরই এনিয়ে সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়।

এই ঘটনায় কোতয়ালী থানায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আর পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করে।

এই ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে এবং র‌্যাব দুইজনকে গ্রেফতার করে। ডিবি কর্তৃক গ্রেফতার দুই ভাই সজিব ও রাজিব ছাড়া গ্রেফতার অন্যরা হলেন- মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন, মো. টিটন গাজী, আলমগীর ও লম্বা মনির।

সোহাগ হত্যার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সোহাগ হত্যার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।

এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই হত্যা মামলায় রাজনৈতিক বা অন্য কোনো পরিচয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কেউ তদবির করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.