November 17, 2025, 3:51 am


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2025-11-06 15:47:59 BdST

বাগেরহাট ডিসি অফিসের সাবেক উমেদার মান্নানের বিরুদ্ধে ২৪৫ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা


বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক উমেদার আব্দুল মান্নান তালুকদারসহ আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে ২৩৫ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং এর অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলো ২. মো. আনিসুর রহমান (৬২), ৩. সালেহা বেগম এবং ৪. জেসমিন নাহার। অভিযুক্ত জেসমিন নাহার সাবেক উমেদার আব্দুল মান্নান তালুকদারের স্ত্রী।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য উচ্চ মুনাফা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে ১৯ হাজার ৯৬৭ জন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট হতে প্রতারণার মাধ্যমে ২৪৫ কোটি ২৩ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা আমানত গ্রহণ করে অন্যত্র স্থানান্তর সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং অনুসন্ধানের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাওয়া।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রাক্তন উমেদার (এমএলএসএস- চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী) আব্দুল মান্নান তালুকদার ১৯৮৪ সাল হতে ২০১০ সাল পর্যন্ত এমএলএসএস পদে চাকুরী করেন। ২০১০ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরে যান। চাকরিরত অবস্থাতেই জমি কেনাবেচার সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ডিসি অফিসে চাকুরীর সুবাদে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। জায়গা জমির বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান ছিল।

অবসর গ্রহণের পর তিনি “মানুষ মানুষের জন্য” এই স্লোগানে “নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট” নামে একটি আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানী এন্ড ফার্মস এর ঢাকা কার্যালয় হতে নিবন্ধিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ধরণ ছিল রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও জমি ক্রয় বিক্রয় এবং এর মালিকানা স্বত্ব ছিল মাত্র কয়েক জন ব্যক্তি কেন্দ্রিক। তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ৯৫% শেয়ারের মালিক আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার পরিবার এবং মাত্র ৫% শেয়ারের মালিক মামলায় ০২ নম্বর অভিযুক্ত মো. আনিসুর রহমান।

নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থের নিশ্চয়তাসহ সুদমুক্ত হালাল ব্যবসার মাধ্যমে লাভবান হওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়। এই প্রচারণার আলোকে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লি. এ বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের ৫০০০/- টাকা হতে সর্বোচ্চ যেকোন পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ৪/৫ বছরে বিনিয়োগকৃত অর্থ দ্বিগুণ করার নিশ্চয়তা দেয়া হয়।

কোম্পানীর মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেল অব এ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী এর শর্তানুযায়ী শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে পুঁজিবাজার হতে মূলধন সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটি পুজিবাজার হতে মূলধন সংগ্রহ না করে উচ্চ মুনাফা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সূচনা লগ্ন হতে গত ৩০/০৬/২০১৮ইং  পর্যন্ত সময়ে ১৯ হাজার ৯৬৭ জন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট হতে ২৪৫ কোটি ২৩ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা আমানত গ্রহণ করে।

পরবর্তীতে অভিযুক্ত আব্দুল মান্নান তালুকদার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট হতে সংগৃহীত অর্থের মধ্য থেকে মোট ৬৬ কোটি ২ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা তারই মালিকানাধীন সাবিল গ্রুপ এর ০৬ টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। অর্থ স্থানান্তর সংক্রান্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো

১. এ্যাজাক্স জুট মিলস লিমিটেড, মীরের ডাঙ্গা, ফুলবাড়ি গেট, খুলনা

২. সাবিল ড্রেজিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, বাগেরহাট

৩. সাবিল জেনারেল হাসপাতাল, পিরোজপুর

৪. সাবিল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, বাগেরহাট, ৫. সাবিল ল প্লাজা

৬. সাবিল মৎস্য প্রকল্প বাগেরহাট।

বাকি অর্থ নামে-বেনামে অন্য প্রতিষ্ঠানসমূহে স্থানান্তর করেন অভিযুক্ত আব্দুল মান্নান তালুকদার।

প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের নিকট হতে ২৪৫ কোটি ২৩ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা নিজ মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠানে লিজের নামে স্থানান্তর করেছে। এই প্রতারনার ঘটনা প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় সিআইডি বাদী হয়ে আব্দুল মান্নানসহ আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সদর থানায় মামলা রুজু করেছে, মামলা নং- ০৮ তারিখ- ০৫/১১/২০২৫ খ্রি. ধারা- মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী/১৫) এর ৪(২)(৪)।

বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট পরিচালনা করছে। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.