December 17, 2025, 11:53 pm


সামিউর রহমান

Published:
2025-12-17 22:10:25 BdST

আজিজুর মুন্সি হত্যা মামলায় জড়িতমাগুরায় আওয়ামী লীগ নেতার এপিএস মিরাজ গ্রেফতার


মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুনুর রশীদ মুহিতের ম্যানেজার মিরাজ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে মাগুরা জেলা পুলিশ।

আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে মাগুরা শহরের জজ কোর্ট এলাকা থেকে তাকে আটক করে সদর থানা পুলিশ।

মাগুরার হাজরাপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামে চাঞ্চল্যকর আজিজুর মুন্সি হত্যা মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে।

সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শেখরের ঘনিষ্ঠ সহচর

মাগুরার সাবেক এমপি ও জুলাই আগস্ট ছাত্র হত্যা মামলার আসামী সাইফুজ্জামান শিখরের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন এই মিরাজ হোসেন।

১৫ বছর আগে গ্যাসের দোকানের কর্মচারী থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শেখরের আশীর্বাদে হয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা ও শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূনুর রশীদ মুহিতের ম্যানেজার। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। মাগুরা শহরে আবাসন নির্মানের ব্যবসা সহ কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে অঢেল সম্পদ গড়েছেন মিরাজ। সূত্র মতে, এসব সম্পদের অধিকাংশরই কোন বৈধতা নেই।

আওয়ামী লীগ নেতা মুহিতের সম্পদ রক্ষাকারী

জুলাই আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখর ও শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পলাতক হুমায়ূনুর রশীদ মুহিতের সম্পদ রক্ষা, অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা ও নিয়মিত তাদের অর্থ সর্বরাহ করার কাজ করছেন এই মিরাজ হোসেন।

আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী

তফসিল ঘোষনার পর থেকে নির্বাচন বানচাল ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে পতিত আওয়ামী লীগ। দেশের বিভিন্ন স্থানে গুপ্তহামলা, সহিংসতা সৃষ্টি ও ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী করতে মরিয়া দলটি। 

রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা নানা কৌশলে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের নির্দেশে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের অন্যতম হোতা হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন মিরাজ হোসেন।

মুন্সি আজিজুর হত্যাকান্ড

গত ৬ ডিসেম্বর মাগুরার হাজরাপুর ইউনিয়ন এর রাজারামপুর গ্রামের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আজিজুর মাগুরা থেকে ফেরার পথে গোরিচরণপুর এলাকায় গুপ্ত হামলার স্বীকার হয়ে মাগুরা সদর হাসপাতালে মারা যান।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, রাজারামপুর এলাকায় সলেমান বিশ্বাস ও চঞ্চল বিশ্বাসের নেতৃত্বে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। এরই জেরে গত ৬ই ডিসেম্বর বিকেলে স্থানীয় আলমখালী বাজারে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

ঐদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে আজিরুল আলমখালী বাজারে তার ডেকোরেটরের দোকান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে গৌরিচরণ মসজিদ এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকে ওত পেতে থাকা প্রতিপক্ষ সলেমানের লোকজন তার মোটরসাইকেল গতিরোধ করে মাটিতে ফেলে আহত করে চলে যায়।

খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে গুরুতর অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে রাত ১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মাগুরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চৌকস টীম প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। নিহত আজিজুরের ফোনের কল রেকর্ড পর্যালোচনা করে পুলিশ নিশ্চিত হয় হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া বিল্লাল হোসেন মিরাজের অনুসারী ও নিকটজন।

বিএনপি নেতাকে ম্যানেজ করে আরও বেপরোয়া

দ্য ফিন্যান্স টুডের বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে,  মিরাজ হোসেনের বাবা মতিয়ার রহমান মাগুরা জেলা বিএনপির আহব্বায়ক আলী আহম্মেদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও মিরাজ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। 

স্থানীয়রা জানান, আটককৃত মিরাজ নিয়মিত হাজরাপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখানো, চাঁদা আদায় ও প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালিয়ে আহত করাসহ নানাবিধ অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলো।

দুদকের তদন্ত দাবী

এক সময় কাজের সন্ধানে মাগুরা এসে গ্যাসের দোকানে কর্মচারীর কাজ নেয়া মিরাজ হোসেন কিভাবে মাত্র ১০ বছরে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হলো সেই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে মাগুরার সচেতন মহলে।

মাগুরাবাসী এই বিষয়ে দুদকের সঠিক তদন্ত দাবী করেছেন। একইসঙ্গে, তারা অভিযুক্ত মিরাজের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের আইনী সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের নিকট উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.