নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:2025-12-18 17:08:48 BdST
একীভূত পাঁচ ব্যাংকের নামের সাইনবোর্ড আজ-কালের মধ্যেই পরিবর্তন: গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দুর্বল পাঁচ ব্যাংকের একীভূত হওয়া নিয়ে নানা আইনি জটিলতা দূর করা হচ্ছে। নাম, সাইনবোর্ড আজ-কালের মধ্যেই পরিবর্তন করা হবে। ব্যাংকের শাখার নাম পরিবর্তন হবে। পাঁচ ব্যাংকের শাখা একই এলাকায় থাকলে সেখানে একটি শাখা হবে। অন্যখানে সরিয়ে নেওয়া হবে বাকি শাখাগুলো।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের আমানতকারীরা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ইমিডিয়েট ফেরত পাবেন। টাকা না লাগলে যেন সবাই টাকা তুলে না নেয়। সবাই একযোগে টাকা তুলতে গেলে পৃথবীর কোনো ব্যাংক গ্রাহকের সব টাকা ফেরত দিতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিকস রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্ম: চ্যালেঞ্জেস এন্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচনে অর্থনীতি ধরে রাখা যাবে, ধ্বংস হবে না। কেননা, বিওপি ভালো। আড়াই বিলিয়ন ডলার কিনেছি। অকশনে কেনা হচ্ছে। বাজার স্থিতিশীল রেখে ডলার কেনা হচ্ছে। ৩৪-৩৫ বিলিয়ন ডলার কেনা হতে পারে। সুতরাং আইএমএফের ঋণ ডোন্ট কেয়ার করছি।
গভর্নর আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে গর্ভনেন্সের অভাব রয়েছে। এটি কিছুটা কেটেছে। অনেকে মনে করেন ব্যাংক মানে নিজের পকেটের ব্যাংক। এটা বন্ধ করা হবে। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। পত্রিকার খবর নিচ্ছি। অপরাধ করলে পার পাবে না কেউ। আর ব্যাংক ভালো না করলে হস্তক্ষেপ করব। তবে নির্ধারিত সময়ে ভালো না করতে পারলে হস্তক্ষেপ করা হবে। ১৪ ব্যাংক পুনর্গঠন করা হয়েছে। ৫ ব্যাংক একীভূত করা হয়েছে। পরে আরও করা হবে, তবে ভালো করলে ব্যাংক একীভূত নয়। যেমন ইসলামী ব্যাংকে ভালো করায় একীভূত করা হয়নি।
তিনি বলেন, ব্যাংকের একীভূত নিয়ে নানা আইনি জটিলতা দূর করা হচ্ছে। আগামী ১ বছরে ব্যাংক ভালো করবে। ৫ ব্যাংক যেখানে— গ্রাহক, আমানতকারীরা সহযোগিতা করছে। ব্যাংক খারাপ করলে কর্মকর্তারা দায়ী থাকবে। কর্মকর্তাদের আর্থিক শাস্তি হবে। বোর্ড বড় ঋণে অনিয়ম করলে শাস্তির আওতায় আনা হবে কেননা, মালিকরা একা ঋণ অনিয়ম করতে পারে না। যেমন এক হাতে তালি বাজে না।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকে ঝুঁকিভিত্তিক অডিট করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ফরেনসিক অডিট করবে। আমরা কঠোরভাবে ওয়াচ করব। সাপোর্ট দেব। সামগ্রিক আর্থিক খাতে আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে। হয়তো বা ১০ বছর লাগবে। তবে করতে বদ্ধপরিকর। ব্যাংক রেজ্যুলেশন একটা করা হয়েছে। ৫ ব্যাংকের জন্য ১২ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। শিগগির টাকা পাবেন ৫ ব্যাংকের গ্রাহকরা।
তিনি বলেন, অর্থ ঋণ আদালত আরও কার্যকর করতে হবে। জুডিশিয়ারি রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বহু কেস ঝুলে রয়েছে। এখন তো পৃথক বিচার বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংক ইনসলভেন্সি আইন করবে। সরকারের সহযোগিতা জরুরি।
গভর্নর আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর স্বাধীনতা দিতে হবে। গভর্নরকে মন্ত্রীর সমমর্যাদা দিতে হবে। এজন্য বাস্তবসম্মত আন্তর্জাতিক মানের আইন থাকতে হবে। গভর্নরকে কথায় কথায় বরখাস্ত করা যাবে না। মন্ত্রীর ‘কলে’ যেন ফায়ার না হয়। তবে ঘুষ বা নৈতিক স্খলন হলে, তা আদালতে প্রমাণ হলে বরখাস্ত করা যাবে।
তিনি বলেন, ৯টি এনবিএফআই একীভূত হবে না। অবসায়ন হবে। ডিপোজিটররা আসল টাকা ফেরত হবে। ব্যক্তিখাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে বেশি। আন্তর্জাতিক নিয়মে শেয়ারগোল্ডারদের শেয়ার শূন্য হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকখাতে মূলধন ঘাটতি রয়েছে। সেটা কমাতে হবে। তবে সবই পারা যাবে না। আর খেলাপি বিশ্বের যেকোন দেশের তুলনায় উচ্চ। ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৩৬ শতাংশ। সত্য প্রকাশ করা হবে। গোপন করা হবে না।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের আর্থিক খাত চাই। বড় ঋণ ব্যাংক থেকে নয়, বন্ড থেকে নিতে হবে। বন্ড মার্কেট ডেভলোপ করতে হবে। পৃথিবীতে বন্ড মার্কেটের সাইজ ১৩০ ট্রিলিয়ন, ব্যাংকের সাইজ ৬০ বিলয়ন। এটা করতে কালচারের পরিবর্তন দরকার। ডিপোজিটরদের উচিত ব্যাংকের পাশাপাশি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। এক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করা যাবে না। এটা আস্তে-ধীরে বন্ধ করা হবে।
গভর্নর বলেন, ব্যাংকের শাখা থেকে সব অপরাধ ঘটে। এজন্য যেখানে অনিয়ম হবে, লুট হবে, সেখানে কালেকটিভলি শাস্তি হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে হুইসেল বাজাতে হবে। হুইসেল বাজাতে সকলের সহযোগিতা থাকতে হবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক হচ্ছে আমাদের হার্ট। আমরা দেখেছি ৮০’র দশকে অনেক নতুন ব্যাংক আসে। আর ৯০’র দশকে আমরা ভালো অবস্থানে আসি। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে কীভাবে ব্যাংকগুলো মাফিয়াদের হাতে যায়। তারপর কীভাবে ব্যংকগুলোকে শেষ করে ফেলে। তবে বর্তমান সরকার চেষ্টা করতছে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়।
তিনি বলেন, সরকারের থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশী ভাবছে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাংকগুলোকে নতুনভাবে দাঁড় করা যায়। তবে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করলে হবে না, আমাদের সবাইকে এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। এখন যে পরিবর্তন আসছে, নির্বাচিত সরকার আসলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমি মনে করি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকিং খাত কেন এমন হলো, আমরা যদি দেখি ১৯৭১ সালের আগে পাকিস্তানিরা সব নিয়ে গেছে। ৭১’র পর ব্যাংকগুলোর সহায়তায় দেশের অর্থনীতি ঘুড়ে দাঁড়ায়। কিন্ত ৫০ বছর পর এই অবস্থার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মন্দ ঋণের জন্য আমাদের অবস্থা ভালো না। আমাদের মন্দঋণ দাঁড়িয়েছে বাজেটের ৮০ শতাংশের উপরে। মন্দঋণ হতেই পারে। কিন্তু আমরা রাজনীতিকে ব্যবহার করে এসব করেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীন করতে হবে। পাশাপাশি জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। তাহলে একীভূত ব্যাংক সফল হবে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.
