তারিক সাইদ হারুন
Published:2025-12-23 13:41:33 BdST
আরডিআরএসের লালমরিহাট অঞ্চলের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে নারীকর্মীরা
"পৃথিবীতে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর"। কিন্ত প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে দমিয়ে রাখার মধ্যেই তার পুরুষত্ব খোঁজার চেষ্টা করে। সিগেপ এর এক প্রতিবেদনে পড়েছিলাম নারীরা আর্থিক লেনদেনে পুরুষের চেয়ে নিখুত এবং ভালো হয়।
প্রায় সোয়া দুই লক্ষ কর্মীর ক্ষুদ্রঋণ সেক্টেরে নারী কর্মীর অংশগ্রহন মাত্র ৩১%। এই নারী কর্মীর ৯৮% ই আবার মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করে। উপরের দিকের পদগুলিতে নারীর সংখ্যা খুবই নগন্য। আমরা মনে করি, পুরুষ ছাড়া ঋণ কার্যক্রম যথাযথভাবে চালানো যাবে না।
আসলে পুরুষতান্ত্রিকতা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। উন্নয়ন কর্মী হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বাধীনতা বিষয়ক নানাবিধ বুলি আওড়ালেও প্রায়োগিক ক্ষেত্রে সত্যতা খুব একটা মেলে না।
বলতে দ্বিধা নেই, আরডিআরএস বাংলাদেশও বহমান এই ধারার বাইরে নয়। এতদ্বসত্বেও, চলতি বছরের (২০২৫) শুরুতে আরডিআরএস উচ্চাভিলাষী এক সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। শুধুমাত্র মহিলা আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকের উপর নির্ভর করে পুরো লালমনিরহাট অঞ্চলকে মহিলা অঞ্চল করার উদ্যোগ গ্রহন করে।
এই প্রেক্ষাপটে আমাদের মূল্যবোধ, দর্শন কিংবা ভাবধারাকে সরাসরি প্রয়োগ করে বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। আরডিআরএস এর লালমনিরহাট অঞ্চল এখন শতভাগ মহিলা সহকর্মী দ্বারা পরিচালনা শুরু করেছে। বর্তমানে ২১টি শাখায় ১ জন আরএম, ৪ জন এএম, ২১ জন বিএম এবং ৯২ জন এমএফওসহ মোট ১৪১ জন সহকর্মীর সবাই নারী। জেলার সব শাখায় কুক থেকে শুরু করে আরএম পর্যন্ত সবাই নারী।
নারীকর্মীদের কর্মক্ষমতা কেমন?
এখানে চরম বিস্ময় অপেক্ষা করছে ক্ষুদ্রঋণ খাত সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য। সদস্যদের ৮০ কোটি টাকা ঋণ ন্থিতির মধ্যে ৪২ কোটি টাকাই সেভিংস। সঞ্চয় এবং ঋণের অনুপাত ৫৩ শতাংশ। আদায়ের হার প্রায় ৯৯ শতাংশ। বকেয়া নেই বললেই চলে। পিএআর মাত্র ৫ শতাংশ।
আরও বিষ্ময়কর তথ্য হলো, এই অঞ্চলের স্থিতিপত্রে সম্পদ এবং দায়ের চিত্র। গোটা অঞ্চল স্বয়ংসস্পুর্ণ। দায় খুবই সামান্য। আগামী জানুয়ারী ২০২৬ থেকে এই অঞ্চলের বাইরের (ব্যাংক, পিকেএসএফ) টাকা লাগবে না। সঞ্চয় এবং ক্রমপুঞ্জিভুত উদ্বৃত্তের টাকা দিয়েই চলতে পারবে।
আসুন, আমরা সবাই মিলে এই ঐতিহাসিক অর্জনকে উদযাপন করি। সবার সদয় অবগতির জন্য বলছি, গত সাড়ে চার দশকে ক্ষুত্রঋণের ইতিহাসে এই ধরনের উদ্যোগ এটাই প্রথম। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এটা ধরে রাখা যাবে না।
আমি আরডিআরএস এর সম্মানিত বোর্ড চেয়ারম্যান ও সকল সদস্য, নির্বাহী পরিচালক মহোদয়সহ সংস্থার সকল সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই। তাদের সমর্থন ও অনুপ্রেরনা ছাড়া এই চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগের বাস্তবায়ন কোনভাবেই সম্ভব হতো না।
সবশেষে, আরডিআরএস এর লালমনিরহাট অঞ্চলের পুরো টীমকে আন্তরিক অভিনন্দন। সকল ডিএম, আরএম, এএম, বিএমসহ সকল সহকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে ডিএম রফিক, এইচআর এর জিয়া এবং প্রধান কার্যালয়ের ফাহানার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি।
লেখক একজন এনজিওকর্মী
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.
