নিজস্ব প্রতিবেদন
Published:2025-09-01 15:01:01 BdST
অনলাইন ডেস্কস্মাগলার "রেজাউল করিম" প্রশাসনের নাগালের বাইরে
"চোরাকারবারি রেজাউল"
নাম- রেজাউল করিম। পিতা-মফিজ উদ্দিন। মাতা-মোসাঃ হালিমা বেগম। (ভোটার আইডি নম্বর-৫৫৪০১৭৩৩৩২)। স্থায়ী ঠিকানা-চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ধুমিহায়াতপুর গ্রাম। ডাকঘর-বামচন্দ্রপুর হাট। ১৯৮৮ সালের ২১ জুন চাপাইনবাবগঞ্জের ধুমিয়াতপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন রেজাউল করিম। ১৫/১৬ বয়স থেকেই এলাকায় মানুষের কাছে তার পরিচয় ঘটে "চোরাকারবারি রেজাউল"। ভারতীয় বিএসএফ ও বিজিপির কতিপয় অসাধু সদস্যদের সহযোগিতায় রেজাউল ধীরে ধীরে চোরাইপথে বাংলাদেশে গরু-মহিষ আনা শুরু করেন ১২/১৪ বছর ধরে। এখন দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৯০ ভাগ গরু-মহিষ আসে রেজাউলের মাধ্যমে। রেজাউলের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। স্মাগলার খ্যাত রেজাউল ভারত থেকে গবাদিপশু আনে বাকীতে। আর ভারতীয় ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করেন হুন্ডির মাধ্যমে ডলারে। স্বর্ণ ও ক্যাশ ডলারের বিনিময়ে ভারত থেকে প্রতিনিয়ত আসে চোরাচালানের গরু-মহিষ। শুধু রেজাউল সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই প্রতি মাসে এক হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে ভারতে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চোরাকারবারি রেজাউলের কয়েকটি গ্রুপ বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে সক্রিয়।চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেজাউল করিম সর্বকালের সর্বসেরা একজন স্মাগলার। পতিত সরকার আমলে স্থানীয় এমপি এবং কিছু রাজনৈতিক নেতার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে রেজাউলের। সেসুবাধে খাস আওয়ামী কর্মী সেজে ১২ বছর দাপটের সাথে চোরাই পথে গরু-মহিষের ব্যবসা করেন রমরমা। হয়ে যান ফকির থেকে কোটিপতি। আওয়ামী লীগের ডোনারও বুনে যান তিনি। রেজাউলের বিরুদ্ধে আরো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তিনি বৈষম্যবীর বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার সাভার সহ চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে নগদ টাকা অনুদান দিয়েছে প্রশাসন এবং নেতাদের। ২০২৪ সালের ৫আগস্টের পর পূরোই বদলে যার রেজাউল। ভোল পাল্টিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের ডোনার সেজে যায় স্মাগলার রেজাউল। এরপর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে সীমান্ত দিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এবং প্রশাসনের অনেককেই টাকার বিনিময়ে ভারতে যেতে সহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রেজাউলের বিষয়ে সরকারের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যে খোঁজ খবর ও তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
ওয়াকিবহাল সূত্রমতে, বাংলাদেশের উত্তর জনপদ এবং দক্ষিণবঙ্গের সীমান্তবর্তী হাট-বাজার দিয়ে আসতো গরু-মহিষের চোরাচালান। সীমান্তে কাটাতারের বেড়া হওয়ায় সব পথ প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ছে। চোরাচালান চক্র
এখন নিরাপদ রুট হিসেবে বেচে নিয়েছে সিলেটের জৈন্তা বাজার, হরিপুর দরবস্ত বাজার, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, দুর্গাপুর এবং কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকা। রেজাউল এসব এলাকায় নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। মিডিয়ায় রেজাউলের তেমন পরিচয় না ঘটলেও প্রশাসনের কাছে রেজাউল করিম তালিকাভূক্ত চোরাকারবারি। তবে টাকার বিনিময়ে রেজাউল সব জায়গায় ম্যানেজ করে রীতিমতো এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্রমতে, রেজাউল চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত থেকে গরু-মহিষ আনে বাকীতে। পরে তা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে নগদায়ন করে হুন্ডির মাধ্যমে ক্যাশ ডলার করে। এই পাচারের সাথে যুক্ত কয়েকজন ভারতীয় স্মাগলার। দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন হাট-বাজারে গরু-মহিষ এনে স্মাগলার রেজাউলের মাধ্যমে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করে। কক্সবাজারের রামু থেকে ট্রলারযোগে চকরিয়ায় দেদারছে আসছে গরু-মহিষ। এভাবে প্রতিটি সীমান্তবর্তী এলাকায় হাট-বাজার থেকে শত শত ট্রাক ভর্তি গরু মহিষ আসছে। স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার বান করছে।
জানা যায়, একটি ট্রাকে ১৪ থেকে ১৬টি মহিষ এবং ১৬ থেকে ১৮টি গরু উঠানো হয়। এতে দাম পড়ে ট্রাকভর্তি ৩০/৩৫ লাখ টাকা। হাট-বাজারে নিরাপত্তার অভাবে ব্যবসায়ীরা কেউ টাকা বহন করে না। বাংলাদেশী এজেন্ট রেজাউল করিমের ক্লিয়ারেন্স পেলেই বাকিতে গরু-মহিষ দিয়ে দেয় ভারতীয়রা। পরে রেজাউলের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা করে দেয় ব্যবসায়ীরা। রেজাউল চাঁপাইনবাবগঞ্জে বসে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সারাদেশের স্মাগলারদের নিয়ন্ত্রণ করেন। রেজাউল করিম কোটি কোটি টাকা মালিক হয়েছেন সীমান্ত পথে গরু-মহিষ এর ব্যবসা করে।
কুখ্যাত চোরাকারবারি রেজাউল করিমের কয়েকটি ব্যাংকে বেশ কিছু শাখায় একাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো হচ্ছে, ইসলামী ব্যাংক সাভারের হেমায়েতপুর শাখায় মেসার্স আর কে এন্টারপ্রাইজ হিসাব নং-২০৫০৪০৪০১০০১০২৭০৫, ইসলামী ব্যাংক আমিন বাজার শাখায় মেসার্স আর কে এন্টারপ্রাইজ হিসাব নং-২০৫০১৫১০১০০৩৩০৫০৫, পূবালী ব্যাংক শিবগঞ্জ শাখায় মামা ভাগনে এগ্রো ফার্ম হিসাব নং-১৩৩৭৯০১০৩৩৯৭৩, পূবালী ব্যাংক নিউ মার্কেট (রাজশাহী) শাখায় হিসাব নং- ২০৩০৯০১০২৯৪৪১, উত্তরা ব্যাংক কানসাট শাখায় মামা ভাগনে এন্টারপ্রাইজ হিসাব নং-৩৮২২১২২০০১২৫৬৩, সোনালী ব্যাংক হেমায়েতপুর শাখায় মেসার্স আর কে এন্টারপ্রাইজ হিসাব নং- ১৬২৪৬০২০০০৪৬২, অগ্রণী ব্যাংক সাহেব বাজার (রাজশাহী) শাখায় মামা ভাগনে এন্টারপ্রাইজ হিসাব নং-০২০০০১৯৯৮২৩২৩ এবং জনতা ব্যাংক ঘোড়ামারা মহিলা শাখা (রাজশাহী) মামা ভাগনে ট্রেডার্সের হিসাব নং-০১০০২৫৩৫২৯৩৯৮।
ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন সময়ে যেসব টাকা জমা পড়েছে তা গরু-মহিষ ব্যবসায়ীদের। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা জমা হলেও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর নজরে আসেনি। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে রেজাউলকে কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে সহযোগিতা করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করলে বেরিয়ে পড়বে রেজাউল সিন্ডিকেটের চাঞ্চল্যকর তথ্য। সুচতুর স্মাগলার বিভিন্ন নামে একাউন্ট খুলে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ক্যাশ ডলারের মাধ্যমে ভারতে পাচার করছেন। এতে করে দেশের মার্কেট থেকে ক্যাশ ডলার উধাও হচ্ছে। যা দেশের আর্থ- সামাজিক ব্যবস্থাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।
ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় গাবতলি গরুর হাটে প্রতিদিন রেজাউলের গরু-মহিষ আসে। সেখান থেকে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় গরু-মহিষ সরবরাহ করে রেজাউলের নিজস্ব লোকজন। সাভার-ঢাকায় রেজাউলের বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনীও আছে বলে জানা গেছে। রেজাউল বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের কিছু ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
রেজাউল করিম সাভারের হেমায়েতপুর "একতা হাউজিং " আর্জেন্টপাড়ায় নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন।
রেজাউল সম্পর্কে বিস্তর তথ্য পাওয়া গেছে। তার সম্পদ-নগদ টাকা এবং বিভিন্ন ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ও চাপাইনবাবগঞ্জ এর হাঁড়ির খবর সহ মানি লন্ডারিং কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের লেনদেন এর সব কিছু এপ্রতিবেকের হাতে এসেছে। যা দেখলে বা শুনলে পিলে চমকে যাবে পাঠকের । রেজাউল করিমের ভারতীয় এবং দেশীয় যেসব এজেন্ট আছে তাদের নামের তালিকা আগামী পার্বে প্রকাশ করা হবে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.